২০০১ সাল থেকে ওই ইসলামী ধর্ম প্রচারক জার্মানিতে আছেন। তাঁর মাধ্যমে বহু জার্মান আইএস-এ যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
জার্মানির এক ইসলামী ধর্ম প্রচারককে সাড়ে দশ বছর জেলে রাখার নির্দেশ দিল উত্তর জার্মানির একটি আদালত। অভিযোগ, গত এক দশকে জার্মানি থেকে বহু ব্যক্তিকে ইরাক এবং সিরিয়ায় পাঠিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, আইএস-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে ওই ব্যক্তির। একই সঙ্গে তাঁর তিন সহযোগীকেও দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। তাঁদের অবশ্য কম সময় জেলে থাকতে হবে।
অভিযুক্ত ধর্ম প্রচারকের নাম আবু ওয়ালা। ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ২০০১ সালে ইরাক থেকে জার্মানিতে আসেন। শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে আসার পরে লোয়ার স্যাক্সনি অঞ্চলে থাকতে শুরু করেন তিনি। ওই অঞ্চলেই একটি মসজিদে ধর্ম প্রচারক হিসেবে যোগ দেন। সেখানেই কাজ করতেন তিনি। ২০১৫-১৬ সালে প্রথম ওই মসজিদটি নজরে পড়ে পুলিশের। অভিযোগ মেলে, ওই মসজিদ থেকে উগ্র মতবাদ প্রচার করা হচ্ছে। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ আবু ওয়ালার খোঁজ পায়। জানা যায়, আবু ওয়ালার সংস্পর্শে এসে বেশ কিছু জার্মান ব্যক্তি আইএস হয়ে গিয়েছে। সিরিয়া এবং ইরাকে চলে গেছেন তাঁরা। জার্মানির দুই যমজ ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবরও মেলে সে সময়। জানা যায়, তাঁরাও আবু ওয়ালার সংস্পর্শে এসেছিলেন। তারপর ইরাকে আইএস সংগঠনে নাম লেখায়। ইরাকের একটি বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ওই দুই ভাই।
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
ছবি নেই আবু ওয়ালার
আবু ওয়ালার নাম পেলেও তাঁর বিষয়ে তথ্য পেতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। অত্যন্ত সন্তর্পণে এতদিন কাজ চালিয়েছেন আবু ওয়ালা। কোথাও নিজের ছবি ব্যবহার করেননি। বেশ কিছু ভিডিও বার্তা দিলেও সব সময় ক্যামেরার দিকে পিঠ রেখে কথা বলেছেন তিনি। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে অনেক দিন সময় লাগে পুলিশের। ২০১৭ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এত দিন ধরে বিচার চলছিল। বুধবার জার্মান আদালত শাস্তি ঘোষণা করল।
বিচারে আবু ওয়ালা
বিচারে আবু ওয়ালা অবশ্য দোষ স্বীকার করেননি। সরকারি আইনজীবী তাঁর সাড়ে ১১ বছরের শাস্তি চেয়েছিলেন। কিন্তু আবু ওয়ালার আইনজীবী নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। শেষপর্যন্ত বিচারক সাড়ে দশ বছরের শাস্তি ঘোষণা করেন। আবু ওয়ালাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিজের মুখে আদালতে কিছু বলতে চাননি। যা বলার তাঁর আইনজীবীই বলেছেন।