সিরিয়ায় আটক আইএস যোদ্ধাদের ফিরিয়ে নেবার জন্য চাপের মুখে জার্মানির সরকার নাগরিকত্ব আইনে রদবদল ঘটিয়ে কিছু ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের যে সব দেশের নাগরিক সন্ত্রাসবাদী আইএস গোষ্ঠীর যোদ্ধা হিসেবে সক্রিয় ছিল, তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করার জন্য বিভিন্ন মহলে চাপ বাড়ছে৷ সিরিয়ায় কুর্দি গোষ্ঠী এসডিএফ-এর হাতে আটক এই সব আইএস যোদ্ধাদের যে যার দেশে ফিরিয়ে নেবার উদ্যোগের মাঝে বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ায় আইএস দমন অভিযান যত দ্রুত সম্ভব শেষ করে মার্কিন সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চান৷ অ্যামেরিকার জোটসঙ্গী কুর্দিরাও অনির্দিষ্টকাল ধরে আইএস বন্দিদের নিজেদের জিম্মায় রাখতে নারাজ৷ ট্রাম্প তাই ইউরোপের উদ্দেশ্যে প্রায় ৮০০ যোদ্ধার দায়িত্ব নেবার জন্য চাপ দিচ্ছেন৷ তিনি চান, ইউরোপের আদালতে তাদের বিচার হোক৷ অন্যথায় বন্দিদের মুক্তির হুমকি দিচ্ছেন তিনি৷ ইউরোপের অনেক দেশের মতো জার্মানিও এমন সব বিপজ্জনক নাগরিকদের দায়িত্ব নিয়ে সংশয়ের মুখোমুখি হচ্ছে৷
অনেক তর্কবিতর্কের পর জার্মানির জোট সরকার বিষয়টি নিয়ে অবশেষে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ আসলে গত বছর সরকার গঠনের সময়ই জোটসঙ্গীরা এমন এক নীতি স্থির করেছিল৷ তবে সেই পদক্ষেপ এতকাল কার্যকর করা হয়নি৷ জার্মানির স্যুডডয়চে সাইটুং সংবাদপত্র এবং এনডিআর ও ডাব্লিউডিআর সম্প্রচার কেন্দ্রের সূত্র অনুযায়ী, ঐ নীতির আওতায় নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আইএস যোদ্ধাদের জার্মান নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে৷ যে সব প্রাপ্তবয়স্ক ও সক্রিয় যোদ্ধার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, তারা এমন আইনের আওতায় পড়তে পারে৷ তবে এই আইন প্রণয়নের পর যাদের আটক করা হবে, একমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হবে৷ অর্থাৎ বর্তমানে যে সব জার্মান নাগরিক এই অভিযোগে আটক রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগ করা যাবে না৷
উল্লেখ্য, জার্মানির বর্তমান আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব বাতিলের বিধান রয়েছে৷ তার আওতায় কোনো নাগরিক যদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া স্বেচ্ছায় কোনো বিদেশি সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেয়, সে ক্ষেত্রে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা সম্ভব৷ এই আইনটিকেই সম্প্রসারিত করতে চায় জার্মান সরকার৷
নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বর্তমান আইএস যোদ্ধাদের নিয়ে সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না৷ ফলে শেষ পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য হলে জার্মানিকে প্রচলিত আইনের আওতায় তাদের বিচার করতে হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
সাবেক আইএস জঙ্গিদের যেভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ কয়েকদিন ধরে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার পথ খুঁজছে৷ এদিকে, সিরিয়ার শাম্মার গোষ্ঠী ইতিমধ্যে সাবেক আইএস সদস্যদের গ্রহণ করা শুরু করেছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
কারা এই শাম্মার?
সিরিয়ার আরব গোষ্ঠী শাম্মারের সশস্ত্র বাহিনী ‘আল সানাদিদ’ এতদিন ধরে মার্কিনপন্থি সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, এসডিএফ-এর সাথে যুক্ত ছিল৷ সম্প্রতি দল পালটে তারা কুর্দি নেতৃত্বাধীন নাগরিক গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে৷ উল্লেখ্য, বর্তমান উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিশাল এলাকা শাম্মার গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
একসাথে প্রার্থনা
শাম্মার নেতা শেখ হুমায়দি দাহাম আল-হাদির বাড়ির চত্বরে প্রতি শুক্রবার প্রার্থনাসভা হয়৷ সেখানে আশেপাশের গ্রামের মানুষজনের সাথে উপস্থিত থাকেন ইসলামিক স্টেটের সাবেক সৈনিকরাও৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ঘরে বাইরে...
ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া শাম্মার সদস্যরা শেখের আহ্বানে ফিরে এসেছে৷ শেখের নির্দেশেই প্রথমে তারা এসডিএফের কাছে আত্মসমর্পণ করে ও পরে বিচারের সম্মুখীন হয়৷ বিচারপর্ব শেষ হলে তবেই আবার শাম্মার গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ সদস্যপদ ফিরে পাবেন প্রাক্তন জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ঘরে ফেরা নিয়ে বিতর্ক
শেখ যদিও অস্বীকার করেছেন যে শাম্মারের ঘরে জঙ্গিদের কোনো স্থান নেই, কিন্তু শাম্মার গোষ্ঠীর জনসংযোগকর্তা আবদুলহামিদ আল-আসকারের মতে, এমন ঘটনা আকছার ঘটছে৷ আল-সানাদিদে একাধিক প্রাক্তন আইএস সদস্য রয়েছেন বলে জানান তিনি৷ শেখ হুমায়দির মতে তাদেরও অবস্থান জঙ্গিবাদের বিপরীতেই৷ সে কারণেই বর্তমানে তারা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি ও আইএস সৈনিকদের মধ্যে মধ্যস্থতা করছেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. Backhaus
কেন ঘরে ফিরছে সৈনিকরা?
শেখ হুমায়দির মতে, সিরিয়ার শাম্মার সদস্যরা নেতৃত্বের চাপে পড়ে আইএস-এ যোগদান করে৷ এখন নিজেদের গোষ্ঠীর কাছে ফিরে আসতে চাইছে তারা৷ এবং শাম্মার তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছে বলেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ফেরার পর...
সাবেক আইএস সৈনিকদের ঘরে ফেরার পরের জীবন মোটেও আরামের নয়৷ কড়া অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয় তাদের৷ শোনা গেছে, ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা এসে পর্যবেক্ষণ করে গেছেন প্রাক্তন জঙ্গিদের এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
যুদ্ধক্ষেত্রে ফুটবল
ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে সংযোগকারী একটি রেলপথ বেশ কয়েক বছর ধরে নিষ্ক্রিয়৷ শেখের মতে, রেলপথের বেশিরভাগ অংশই এখন কয়েকশ’ আইএস জঙ্গিদের দখলে৷ বাতিল হওয়া রেললাইনের পাশেই চলছে ফুটবল খেলা৷ ওপরের ছবিতে রয়েছে সেই দৃশ্য৷