জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-এর যোদ্ধারা ইরাকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার সুন্নি আরব নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
বিজ্ঞাপন
ইয়াজেদি নারীদের বিরুদ্ধে একইরকম নির্যাতন ভালোভাবে নথিভুক্ত রয়েছে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ সোমবার জানায়, সুন্নি আরব মুসলিম নারী এবং মেয়েদের ইচ্ছামত আটকে রাখাসহ পেটানো, যৌন নিপীড়ন এবং জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য করা হচ্ছে৷ ইরাকের মোসুল থেকে পালিয়ে আসা ছয় নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে এইচআরডাব্লিউ৷ এই প্রথম সুন্নি নারীদের উপর ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর নির্যাতনের বিস্তারিত তথ্য জানা গেলো৷
এইচআরডাব্লিউ-র মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপ-পরিচালক লামা ফাকিহ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমার আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই ভুক্তভোগী দলকে সহায়তায় যা কিছু সম্ভব করবে৷''
এইচআরডাব্লিউকে সাক্ষাৎকার দেয়া নারীদের একজন হানান জানান, তাঁর স্বামী এলাকা ত্যাগের বেশ কয়েকসপ্তাহ পরে তিনি তাঁর সন্তানদেরসহ মোসুল থেকে পালানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্তু পলায়নরত দলটি আইএস-এর কাছে ধরা পড়ে যায়৷ তখন জঙ্গিরা হানানকে জানায় যে, তাঁর স্বামী ধর্মত্যাগী হয়েছেন, ফলে হানানকে একজন আইএস জঙ্গি নেতাকে বিয়ে করতে হবে৷ কিন্তু তিনি তা করতে অস্বীকার করায়, তাঁকে পেটানো হয় এবং সন্তানদের সামনেই প্রতিদিন ধর্ষণ করা হয়৷
ইয়াজেদি নারীদের সঙ্গেও এমন আচরণের কথা ইতোপূর্বে এইচআরডাব্লিউ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইএস-এর নির্যাতনের শিকার নারী ও মেয়েদের পরিবারের সদস্যরা নির্যাতনের কথা গোপন রাখার চেষ্টা করেন কেননা তারা মনে করেন, সেগুলো জানাজানি হলে সমাজে নির্যাতিতদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে৷ এইচআরডাব্লিউ নির্যাতিতদের সহায়তা করতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের মুখ খুলতে উৎসাহ যোগাতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
উল্লেখ্য, ইসলামিক স্টেট এক ধরনের সুন্নি ইসলামের অনুসারী বলে নিজেদের দাবি করে, যা মহানবী মোহাম্মদের সময় চর্চা করা হতো৷ ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় ইরাক এবং সিরিয়ার বেশ কিছু অংশ দখল করে নিজেদের ‘খেলাফত' প্রতিষ্ঠিত করে জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷ আন্তর্জাতিক সামরিকজোটের সহায়তায় ইতোমধ্যে অবশ্য আইএস-এর কাছ থেকে অনেক এলাকা পুনরুদ্ধারের সক্ষম হয়েছে ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী৷
‘ইসলামিক স্টেট’ আসলে কী?
আল-কায়েদার অখ্যাত এক উপদল থেকে প্রভাবশালী ‘মিলিট্যান্ট মুভমেন্টে’ পরিণত হয়েছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ জিহাদি এই গোষ্ঠীটির দখলে থাকা অঞ্চল থেকে আক্রমণের কৌশল – আইএস-এর এমন নানা দিক তুলে দেয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
আইএস কোথা থেকে এসেছে?
ইসলামিক স্টেট (আইএস) সুন্নী ইসলামিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী আল-কায়েদার একটি উপদল, যেটি আইএসআইএল, আইসিস এবং দায়েশ নামেও পরিচিত৷ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷ এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন আবু বকর আল-বাগদাদি৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটির লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্যা অঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস কোথায় কাজ করে?
বিশ্বের ১৮টি দেশে আইএস সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ ইরাক এবং সিরিয়ার কিছু অংশ এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে৷ তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন অবধি নিজেদের দখলে থেকে এক চতুর্থাংশ এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে৷
কারা তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে৷ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে তৈরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি ‘কোয়ালিশন’ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ এই কোয়ালিশনে কয়েকটি আরব দেশও রয়েছে৷ অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া৷ তবে ভূমিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কুর্দিশ পেশমার্গার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Huseyin
আইএস-এর অর্থের উৎস কী?
জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল এবং গ্যাস৷ এটি এখনো সিরিয়ার তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ দখলে রেখেছে৷ আর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গি গোষ্ঠীর এই মূল্যবান সম্পদ৷ এছাড়া কর, মুক্তিপন এবং লুট করা পুরাকীর্তি বিক্রি করেও অর্থ আয় করে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
আইএস কোথায় কোথায় জঙ্গি হামলা চালিয়েছে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷ চলত বছর সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলাটি চালানো হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে, যেখানে দু’শোর বেশি মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷ আইএস-এর নেতারা জঙ্গি গোষ্ঠীটির আদর্শে বিশ্বাসীদের এককভাবে বিভিন্নস্থানে আঘাত হানতে উৎসাহ প্রদান করে৷
অন্যান্য আর কী কৌশল ব্যবহার করে আইএস?
নিজেদের ক্ষমতার পরিধি বাড়াতে অনেক কৌশল ব্যবহার করে আইএস৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটি ‘কালচারাল ক্লিনজিংয়ের’ নামে সিরিয়া এবং ইরাকের অনেক ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম লুট ও ধ্বংস করেছে৷ এছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর কয়েকহাজার মেয়েকে ক্রীতদাসী বানিয়েছে৷ গোষ্ঠীটি নিজেদের ‘প্রোপোগান্ডা’ এবং নিয়োগের কাজে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
শরণার্থী হয়েছেন কতজন?
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সেদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন৷ অনেক সিরীয় ইউরোপেও পাড়ি জমিয়েছেন৷ এছাড়া প্রায় ৩০ লাখ ইরাকে ইরাকের মধ্যেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর৷