সদস্য দেশগুলো থেকে কেউ যাতে ইসলামিক স্টেটস (আইএস বা আইসিস)-এ যোগ দিতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে মরিয়া জাতিসংঘ৷ অথচ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে আইএস-এ যোগ দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে আইএস-এর তৎপরতা সেসব দেশের সরকারের জন্য রীতিমতো বিপদসংকেত হয়ে উঠছে৷ ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী চেপ হেরনাওায়ানকে কয়েক দিন আগে আটক করেছিল পুলিশ৷ কিন্তু জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে৷ মুক্ত হয়ে হেরনাওায়ান নিজেই বলেছেন, আইএস-এর হয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে ইন্দোনেশিয়া থেকে অনেকেই যাচ্ছেন সিরিয়ায়৷ সম্প্রতি বেশ বড় একটি দলকে নিজে পাঠিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ৬৩ বছর বয়সি এই ব্যবসায়ী৷
হেরনাওায়ানের মতে, ইন্দোনেশিয়ার মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবেই আইএস-এ যোগ দিচ্ছে৷ তিনি জানান, এ পর্যন্ত অন্তত ২০০ জন ইন্দোনেশীয় নাগরিক আইএস-এর হয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে ইরাক ও সিরিয়ায় গিয়েছে৷ আইএস-এর সকল কর্মকাণ্ডের প্রতি প্রকাশ্যেই সমর্থন জানাচ্ছেন হেরনাওয়ান৷
এ বছরের শুরুর দিকে জাকার্তার প্রাণকেন্দ্রে আইএস সমর্থকদের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে দেখা যায় হেরনাওয়ানকে৷ মঞ্চে তাঁর পাশেই ছিল বাহরুমসিয়াহ নামের এক ব্যক্তি৷ পরবর্তীতে সিরিয়ায় আইএস-এর হয়ে যুদ্ধরত ইন্দোনেশীয়দের নিয়ে প্রচারিত এক ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে বাহরুমসিয়াহ৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
আইএস সমর্থকদের এমন প্রকাশ্য তৎপরতা রুখতে পারছে না ইন্দোনেশিয়া সরকার৷ এর কারণ জানাতে গিয়ে ইন্দোনেশিয়ার পুলিশের মুখপাত্র ব্রিডেডিয়ার জেনারেল বয় রালফি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে তো আমরা প্রচলিত আইনে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারি না৷''
ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এখন যাঁরা আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করতে ইরাক বা সিরিয়ায় যাচ্ছেন, দেশে ফিরে তারা বড় বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন৷ অতীতে এমনটিই হয়েছে৷ তাঁরা জানান, আফগানিস্তানে যারা যুদ্ধ করতে গিয়েছিল ২০০২ সালে বালি বোমা হামলায় তারা অংশ নিয়েছে৷ সেই হামলায় ২০২ জন নিহত হয়েছিল৷
মালয়েশিয়া থেকেও আইএস-এ যোগ দিচ্ছেন অনেকে৷ সম্প্রতি জঙ্গি সন্দেহে ৩০ জন মালয়েশীয় নাগরিকের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়৷ গত সেপ্টেম্বরে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে৷ মালয়েশিয়া থেকে তাঁরা তুরস্কে যাচ্ছিলেন৷ এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত ২২ জন মালয়েশীয় নাগরিক সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন৷
ইন্দোনেশিয়া থেকে আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন৷ ভিলদান মুখোল্লাদ তাদেরই একজন৷ এ বছরের শুরুতে বাগদাদের এক রেস্টুরেন্টে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অংশ নিয়ে প্রাণ দেন তিনি৷