‘নিউরালহ্য়াশ' প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্লাউডে আপলোড করার সময় গ্রাহকদের বিভিন্ন ছবি স্ক্যান করা সম্ভব হবে৷ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন প্রযুক্তির ফলে বিভিন্ন কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলও সহজ হবে৷
বিজ্ঞাপন
অ্যাপল বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন থেকে আপলোড করা ছবি তল্লাশিতে নতুন এক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে তারা৷ এর ফলে গ্রাহকদের ফোন থেকে শিশু যৌন নির্যাতনের ছবি আইক্লাউডে আপলোড করার আগেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে৷
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, কোনো গ্রাহকের ফোন থেকে এমন ছবি আপলোড করা হচ্ছে জানতে পারলে অ্যাপল নিজেদের কর্মীর মাধ্যমে তা রিভিউ করে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবে৷ তবে প্রযুক্তি ভুলভাবে কাউকে শনাক্ত করতে পারে কি? অ্যাপল বলছে সে সম্ভাবনা এক ট্রিলিয়নের এক ভাগ৷
যে পাঁচ দেশে শিশুরা সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগঠিত শিশু যৌন হয়রানির পরিসংখ্যান ঘেঁটে একটি তালিকা তৈরি করেছে ব্রিটেনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস৷ দেখুন কোন দেশগুলোর নাম এসেছে সেই তালিকায়...
ছবি: picture-alliance/dpa
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি তিন মিনিটে একটি শিশুকে ধর্ষণ করা হয় বলে ট্রেড ইউনিয়ন ‘সলিডারিটি হেল্পিং হ্যান্ড’-এর করা এক জরিপ থেকে জানা গেছে৷ দেশটির মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল-এর ২০০৯ সালে করা আরেক জরিপে প্রতি চারজন পুরুষের একজন জীবনের কোনো এক সময়ে কাউকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন৷ ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬৭,০০০ শিশু ধর্ষণ এবং নিগ্রহের মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল৷
ছবি: Fotolia/Kitty
ভারত
দ্য এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ২০১৩ সালে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতে শিশুদের উপর যৌন নিপীড়ন মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ দেশটিতে ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে শিশু ধর্ষণের অন্তত ৪৮,০০০ মামলা হয়েছে৷ ২০০১ সালের তুলনায় ২০১১ সালে ধর্ষণের হার বেড়েছিল ৩৩৬ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/D. Berehulak
জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ২০১২ সালে দেশটির পুলিশের মুখপাত্র চ্যারিটি চারাম্বা’র বরাতে জানায়, সেখানে শিশু ধর্ষণের হার ক্রমশ বাড়ছে৷ ২০১১ সালে দেশটিতে ৩,১৭২ টি শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনা নথিভুক্ত হয়৷ এছাড়া ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জিম্বাবোয়ের রাজধানী হারারেতে শুধুমাত্র একটি ক্লিনিকে চার বছরে ৩০,০০০ নিপীড়নের শিকার ছেলে ও মেয়েকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
যুক্তরাজ্য
২০০০ সালে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে প্রতি ২০০ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের বেশি পেডোফিল৷ ২০১২-১৩-তে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস-এ ষোল বছরের কম বয়সি ১৮,৯১৫ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেবছর ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সি ১৬ শতাংশ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷ দেশটির প্রতি চার নারীর একজন এবং প্রতি ছয় পুরুষের একজন ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলেও জানা গেছে চিলড্রেন এসিসমেন্ট সেন্টারের আরেক গবেষণায়৷
ছবি: Fotolia/pegbes
5 ছবি1 | 5
‘নিউরালহ্যাশ প্রযুক্তি'
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দুটো পরস্পরবিরোধী সংকটের সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে অ্যাপল৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধে সহায়তার অনুরোধ পায় প্রতিষ্ঠানটি৷ অন্যদিকে, গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি অ্যাপল নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক বলে মনে করে৷
নতুন এই প্রযুক্তি উভয় সংকটের সমাধানে ভারসাম্য আনবে বলে মনে করে অ্যাপল৷
এই ‘নিউরালহ্যাশ' প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো ছবি সম্পাদনা বা পরিবর্তন করে আপলোড করার চেষ্টা করা হলে সেটিও শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত একটি তথ্যভাণ্ডার রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর৷ সেখানে বিভিন্ন ছবিকে হ্যাশ বা কোডে রূপান্তর করা হয়৷ এর ফলে কোনো ছবিকে সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হলেও সে ছবি হুবহু প্রকাশ বা ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না৷
নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আইফোন আইক্লাউডে আপলোড করা ছবিগুলোকেও হ্য়াশ বা কোডে রূপান্তরিত করা হবে এবং এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যভাণ্ডারের ছবিগুলো মিলিয়ে দেখা হবে৷ একই সঙ্গে কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর আগে তাদের কর্মীরা সেগুলো যাচাইবাছাই করবেন৷
অ্যাপলের সার্ভারে আপলোড হওয়ার সময়ই এসব ছবি পরীক্ষা করা হবে৷ অ্যাপল জানিয়েছে, আইফোনে সংরক্ষিত ছবি নয় বরং কেবল আইক্লাউডে আপলোড করার সময়ই ছবি স্ক্যান করা হবে৷
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
ছবি: picture alliance/abaca
7 ছবি1 | 7
যেসব গ্রাহক মনে করবেন তাদের অ্যাকাউন্ট অযথাযথ উপায়ে বন্ধ করা হয়েছে, তারা আপিল করতে পারবেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন এর প্রধান নির্বাহী জন ক্লার্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘নতুন এই নিরাপত্তা পদক্ষেপের মাধ্যমে যেসব শিশুদের অনলাইনে হয়রানি করা হচ্ছে ও ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ছবি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তাদের জীবন বাঁচবে৷''
কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রযুক্তির অপব্যবহারের সুযোগ
অনেক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকই অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন৷ কিন্তু অনেকে সেগুলোর অপব্যবহারের ঝুঁকিও দেখতে পাচ্ছেন৷
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিপ্টোগ্রাফি গবেষক ম্যাথিউ গ্রিন দুটো বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ বিরোধী মতের ব্যক্তি বা প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীর ফোনে প্রযুক্তিকে বোকা বানানোর মতো ভুয়া ছবি পাঠিয়ে হেনস্তা করা সম্ভব হবে৷ অন্যদিকে, এই প্রযুক্তি কী কী করার সুযোগ রেখেছে সেটিও একটি বড় প্রশ্ন বলে মনে করেন গ্রিন৷
তিনি বলেন, ‘‘তখন কী হবে চীনা সরকার যদি বলে, ‘আমরা চাই এই তালিকার ফাইলগুলো তোমরা পরীক্ষা করো'? অ্যাপল কি না করবে? আমি আশা করি তারা না বলবে৷ কিন্তু তাদের প্রযুক্তি না বলবে না৷''
গ্রিন মনে করেন, অ্যাপল একটি ‘সুস্পষ্ট বার্তা' দিয়েছে, আর তা হচ্ছে- ‘‘গ্রাহকদের ফোনে নিষিদ্ধ উপাদান থাকলে তা স্ক্যান করার জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি করলে কোনো সমস্যা হবে না৷''