নিকারাগুয়াগামী বিমান ফ্রান্স থেকে ফিরে এসেছে মুম্বইয়ে। বিমান সংস্থার আইনজীবীর দাবি যাত্রীদের হোটেল বুকিং এবং ফেরার টিকিট ছিল।
বিজ্ঞাপন
রোমানিয়ার লেজেন্ড এয়ারলাইনের বিমানে ৩০৩ জন যাত্রী দুবাই থেকে নিকারাগুয়া যাচ্ছিলেন। ফ্রান্সে বিমানটি তেল ভরার জন্য নেমেছিল। ফ্রান্সের বিমানবন্দরে সে সময় কোনো এক ব্যক্তি ফোন করে জানান, ওই বিমানে মানবপাচার হচ্ছে। এরপরেই ফ্রান্স বিমানটিকে আটকে দেয়। শেষপর্যন্ত বিমানটিকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারণ, বিমানে অধিকাংশ ভারতীয় যাত্রী ছিলেন।
এনিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন পর্যায়ে বিতর্ক চলছে। সোমবার এই বিতর্কে নতুন মোড় এনেছেন বিমান সংস্থার আইনজীবী লিলিয়ানা বাকাওকো। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ওই বিমানের অধিকাংশ যাত্রীর কাছে ফেরার টিকিট ছিল। তাদের কাছে বৈধ হোটেল বুকিংয়ের কাগজও ছিল। ফলে ফ্রান্স যে সন্দেহে বিমানটিকে কার্যত আটক করে রেখেছিল, তা ভিত্তিহীন। মানবপাচারের যে অভিযোগ উঠছে, তা-ও ভিত্তিহীন।
অঙ্গহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল ট্রাম্পের জারি করা একটি আইন৷ সেই আইন আপাতত অকার্যকর৷ তবে শিগগিরই আসছে কঠোর আরেক আইন৷ তাই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা কিভাবে মালগাড়িতে চড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাইছেন, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Gustavo Graf/REUTERS
মালগাড়িতে ‘বিদেশযাত্রা’
যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে স্বপ্নের এক দেশ৷ কোনোরকমে সীমান্ত পেরিয়ে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহর এল পাসোতে ঢুকতে পারলেই জীবনের মোড় ঘুরে যাবে বলে বিশ্বাস করেন তারা৷ তাই এভাবে মালগাড়ির ছাদে উঠে শুরু করছেন দীর্ঘ এবং ঝুঁকিপূর্ণ এক যাত্রা৷
ছবি: Gustavo Graf/REUTERS
মেক্সিকান কম
সাম্প্রতিক সময়ে মেক্সিকো থেকে মালগাড়িতে চড়ে যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছেন তাদের বেশিরভাগই ভেনিজুয়েলার নাগরিক৷
ছবি: Jose Luis Gonzalez /REUTERS
মানুষ কেন ‘পশু’!
আগেও অবশ্য এভাবে মালগাড়িতে চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাবার চেষ্টা করতেন অনেকে৷ পথে দৃর্বৃত্তের হামলা, হাঁড় কাপানো শীত বা তার ঠিক বিপরীত আবহাওয়া, অর্থাৎ প্রচণ্ড গরমে ট্রেনে কাটা পড়ার ঝুঁকি নিয়ে দেশান্তরের চেষ্টাকে ‘পশুসুলভ’ মনে করেন অনেকে৷ তাই সেন্ট্রাল অ্যামেরিকার এই দরিদ্র মানুষদের তারা ডাকেন ‘ লা বেতিস্তা’ (দ্য বিস্ট), অর্থাৎ ‘পশু’ নামে৷
ছবি: Jose Luis Gonzalez /REUTERS
আবর্জনার স্তূপের কাছেই বিশ্রাম
মালগাড়িতে উঠলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একইভাবে বসে থাকতে হয়৷ মেক্সিকো সিটির উত্তর দিকের হুয়েহুয়েতোকা অঞ্চলের এক জায়গায় আশপাশের সব এলাকার আবর্জনা ফেলা হয়৷ এর ফলে সেখানে আবর্জনার যে ছোটখাটো এক পাহাড় গড়ে উঠেছে সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য থামে মালগাড়ি৷ ওই সুযোগে একবার নেমে শরীরে রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷
ছবি: Gustavo Graf/REUTERS
কেন আবার এমন ঢল?
সম্প্রতি খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, করোনা মহামারি শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার সব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সীমান্ত থেকেই ফিরিয়ে দিতে যে আইন করেছিল, ‘টাইটেল ৪২’ নামের সেই আইন অবশেষে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ সুতরাং ‘টাইটেল ৪২’-এর কার্যকারিতা একেবারে শেষ৷ ট্রাম্পের আমলে চালু হওয়া সেই আইনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার খবর ছড়ানো মাত্রই মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে শত শত মানুষ৷
ছবি: Jose Luis Gonzalez /REUTERS
নতুন শঙ্কা
তবে ‘টাইটেল ৪২’ বিলুপ্ত হলেও আসছে নতুন আইন৷ আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়া ভাইদের কাছ থেকে সেই ‘দুঃসংবাদ’ই শুনছেন ফ্রাঙ্কলিন চুয়েরভাস৷ ফ্রাঙ্কলিন বুঝতে পারছেন হাতে বেশি সময় নেই, আরো কঠোর আইন আসার আগেই স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হবে তাকে৷
ছবি: Gustavo Graf/REUTERS
6 ছবি1 | 6
ফ্রান্সের যে আদালতে বিষয়টি উঠেছিল, সেখানে বলা হয়েছিল, ৩০৩ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র ১২ জনের কাছে ফেরার টিকিট আছে। শুধু তা-ই নয়, হোটেল বুকিংয়ের কাগজ তাদের কাছে ছিল না। লিলিয়ানার বক্তব্য, ফ্রান্সে তার যে সহকর্মীরা আদালতে গেছিলেন, তারা তাকে জানিয়েছেন যে, অধিকাংশ যাত্রীর কাছে ফেরার টিকিট ছিল। কিন্তু আদালত কেবলমাত্র তিনজন যাত্রীর কথা শুনেছে।
বস্তুত, ওই বিমানের ৩০৩ জন যাত্রীর মধ্যে ২৯৯ জন ভারতীয়। সে কারণেই ফরাসি আদালত বিমানটিকে ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই মতো মুম্বইয়ে এসে পৌঁছেছে বিমানটি।
সংবাদসংস্থা এএফপি-কে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ফরাসি বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই বিমানে মানবপাচার করা হচ্ছিল। দুবাই থেকে নিকারাগুয়া হয়ে ওই যাত্রীদের অ্যামেরিকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। ফ্রান্সের বিমানবন্দরে নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে এক ব্যক্তি ফোন করার পর বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়। ফরাসি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিচার করেই আদালত পর্যন্ত যায়।
মুম্বই বিমানবন্দরে নামার পর যাত্রীদের সঙ্গে সংবাদমাধ্যম কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু দৃশ্যত যাত্রীদের পালাতে দেখা যায়। ক্যামেরার সামনে কেউ মুখ খুলতে চাননি। এদিকে ফরাসি আদালতের কাছে আবেদন করে বেশ কিছু যাত্রী ফ্রান্সে থেকে গেছেন। তারা সেখানে অভিবাসনের আবেদন জানিয়েছেন।
সব মিলিয়ে ঠিক কী ঘটেছিল ওই বিমানে, সত্যি মানবপাচার হচ্ছিল কি না, সেই ধোঁয়াশা এখনো কাটেনি। বিমানসংস্থাটি সোমবার নতুন করে বিতর্ক তৈরি করে দিল।