গত বছর সৌদি আরবে গ্রেপ্তার হন লুজাইন আল-হাথলুলসহ বেশ কয়েকজন নারী অধিকার কর্মী৷ বুধবার তাঁর মামলা আদালতে উঠলেও তিনি কোনো আইনজীবী পাননি৷
বিজ্ঞাপন
লুজাইন আল-হাথলুল প্রথম খবরে উঠে আসেন ২০১৪ সালে৷ গাড়ি চালিয়ে সৌদি আরব থেকে আরব আামিরাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তিনি৷ সেই সময় সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানো বিষয়ে ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা৷
এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার হন তিনি৷ লুজাইন আল-হাথলুলসহ গ্রেপ্তার হওয়া আরো কয়েকজন নারী অধিকার কর্মী এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে আসছিলেন বেশ অনেক দিন ধরেই৷
উল্লেখ্য, এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গ্রেপ্তার হন তাঁরা৷
যে ১০টি অধিকার পেয়েছেন সৌদি আরবে নারীরা
ছবিঘরে দেখে নিন কবে আর কী কী অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারীরা, সে দেশের নারী জাগরণে যা মাইলফলক হয়ে থাকবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৫৫: মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল, ১৯৭০: মেয়েদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এখন বিপুল সংখ্যক ছাত্রীকে স্কুলে যেতে দেখা যায়৷ কিন্তু আজ থেকে ৬২ বছর আগে চিত্রটা এমন ছিল না৷ সৌদি আরবে মেয়েদের প্রথম স্কুল দার আল হানান৷ আর রিয়াদ কলেজ অফ এডুকেশন সৌদি নারীদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি চালু হয় ১৯৭০ সালে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
২০০১: নারীদের জন্য পরিচয়পত্র
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ সৌদি আরবে নারীদের পরিচয়পত্র নিতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হতো৷ ২০০১ সালে সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই পরিচয়পত্র নেয়ার সুযোগ পান৷
ছবি: Getty Images/J. Pix
২০০৫: জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ
২০০৫ সালে সৌদি আরবে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ হয়৷
ছবি: Getty Images/A.Hilabi
২০০৯: প্রথম নারী মন্ত্রী
২০০৯ সালে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রথম নারী মন্ত্রী নিয়োগ করেন৷ নূরা আল কায়েজ নারী বিষয়ক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সে বছর সরকারে যোগ দেন৷
ছবি: Foreign and Commonwealth Office
২০১২: অলিম্পিকে প্রথম নারী অ্যাথলিট
২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেন সৌদি নারীরা৷ তাঁদের মধ্যে সারাহ আত্তার নারীদের ৮০০ মিটার দৌড়ে লন্ডন অলিম্পিকের ট্র্যাকে নেমেছিলেন হিজাব পড়ে৷ আসর শুরুর আগে নারীদের অংশগ্রহণ করতে না দিলে সৌদি আরবকে অলিম্পিক থেকে বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছিল আইওসি৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.-G.Mabanglo
২০১৩: সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি
ঐ বছর সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি পান সৌদি নারীরা৷ তবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় এবং ইসলামি রীতিতে পুরো শরীর ঢেকে এবং কোনো পুরুষ আত্মীয়ের উপস্থিতিতে তা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
২০১৩: শুরায় প্রথম নারী
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের রক্ষণশীল কাউন্সিল ‘শুরা’য় প্রথমবারের মতো ৩০ জন নারীকে শপথ বাক্য পাঠ করান৷
ছবি: REUTERS/Saudi TV/Handout
২০১৫: ভোট দেয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার
২০১৫ সালে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান৷ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড নির্বাচনে নারীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করেছিল ১৮৯৩ সালে, জার্মানিতে তা চালু হয় ১৯১৯ সালে৷ ২০১৫ সালে সৌদি আরবের ঐ নির্বাচনে ২০ জন নারী নির্বাচিত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Batrawy
২০১৭: সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম নারী
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারপার্সন হিসেবে সারাহ আল সুহাইমির নাম ঘোষণা করে আরেক ইতিহাস রচনা করে৷
ছবি: pictur- alliance/abaca/Balkis Press
২০১৮: গাড়ি চালানোর অনুমতি
গত ২৬শে সেপ্টেম্বর সৌদি আরব নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করে৷ ২০১৮ সালের জুন মাসে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে৷ এর ফলে নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না এবং স্বতন্ত্র লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
10 ছবি1 | 10
যৌন হেনস্থা, অবিচারের শিকার
আল-হাথলুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, গ্রেপ্তারের পর তাঁকে মারধর করা হয়েছে৷ তাঁর সাথে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে বলেও মনে করেন তাঁরা৷
শুধু তাই নয়, হাথলুলের বিষয়টি আদালতে উঠেছে৷ বুধবার শুরু হয়েছে বিচারের কাজ৷
কিন্তু অভিযুক্তের অধিকারের যে নিয়ম, তা অমান্য করে আল-হাথলুল'কে কোনো আইনজীবী বরাদ্দ করেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ৷ পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে ঠিক কী কী অভিযোগ রয়েছে, সেটাও তাঁকে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে আল-হাথলুলের পরিবার৷
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মঙ্গলবার এক টুইটে এই অবিচারের বিরোধিতা করে আল-হাথলুলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে৷
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক নতুন আইন প্রণয়ন করেন৷ নারীদের গাড়ি চালাতে পারার আইনটিও ছিল তার অন্যতম৷
কিন্তু সাংবাদিক খাশগজির হত্যাকাণ্ড ও একের পর এক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেপ্তার হওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সালমান৷
এসএস/জেডএইচ (এএফপি, রয়টার্স)
ক্যানাডায় কেমন আছেন সৌদি তরুণী রাহাফ?
পারিবারিক নির্যাতন এড়াতে ব্যাংককে পালিয়ে যান সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুন৷ পরিবারের কাছে ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নেন ক্যানাডাতে৷ কিভাবে সামলেছেন এ পরিস্থিতি, ক্যানাডায় কেমন আছেন তিনি?
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yorulmaz
শুরুতে থাইল্যান্ডে
কুয়েত থেকে পালিয়ে প্রথমে থাইল্যান্ড বিমানবন্দরের একটি হোটেলে আশ্রয় নেন রাহাফ৷ নিজের পরিস্থিতি বর্ণনা করে পরিবারে ফিরে যেতে অস্বীকার করলে আন্তর্জাতিক মহলের চোখে পড়েন তিনি৷ এক পর্যায়ে থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: Reuters/C. Osorio
টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলেন রাহাফ
হোটেলে অনেকটা বন্দি থাকলেও বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি তিনি৷ তাই নিজের অবস্থান জানাতে টুইটারে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন রাহাফ৷ এ সময় তিনি ‘অ্যাসাইলাম’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একটি ক্যাম্পেইনও শুরু করেন৷ কখনো ফটো, কখনো ভিডিও প্রকাশ করে প্রতিনিয়তই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান নিজের সর্বশেষ অবস্থান৷
ছবি: Twitter/Rahaf Mohammeed
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা
প্রথমে থাইল্যান্ড সরকার তাঁকে আশ্রয় দেবে না বলে জানায়৷ তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথাও ভাবছিল থাইল্যান্ড সরকার৷ পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝতে পেরে রাহাফ তাঁর বন্ধুর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার একটি বিমান টিকেট কেনেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Human Rights Watch/Rahaf Mohammed Alqunun
হেটেলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা
হোটেলে রাহাফের অবস্থান জানতে পেরে সেখানে তাঁর সাথে কথা বলতে যান থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
থাইল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি
বিমানবন্দরের হোটেলে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা থাকার পর, আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপে থাইল্যান্ড সরকার তাঁকে সে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Lalit
জাতিসংঘের কর্তাব্যক্তিরাও পাশে
পারিবারিক নির্যাতন এড়ানোর জন্য থাইল্যান্ডের হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিলেন রাহাফ৷ সার্বিক অবস্থা জানতে পেরে তাঁকে সাহায্য করার জন্য ছুটে যান জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তারা৷
ছবি: Reuters/C. Osorio
বিদায় থাইল্যান্ড
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্যোগের পর ক্যানাডা সরকার তাঁকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়৷ থাইল্যান্ড ত্যাগের আগে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কার্যালয়ের সামনে একটি ছবি তুলতে ভোলেননি রাহাফ৷
ছবি: Reuters/UNHCR/K. Ibrahim
‘আমি পেরেছি’
থাইল্যান্ড থেকে ক্যানাডাগামী বিমানে বসে নিজের পাসপোর্টের একটি ছবি টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন রাফাহ৷ ছবির ক্যাপশনে লিখে দেন ‘আমি পেরেছি’৷
ছবি: Reuters/Twitter
ক্যানাডায় উষ্ণ অভ্যর্থনা
আন্তরিকভাবেই রাহাফকে গ্রহণ করে ক্যানাডা সরকার৷ পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে ক্যানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: Reuters/C. Osorio
সৌদি সরকারের বক্তব্য
সৌদি আরবে নারী অধিকার বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ৷ নির্যাতন এড়াতেই পরিবার ছেড়ে পালিয়েছেন রাহাফ৷ ঘটনার কয়েকদিন পর সৌদি সরকারের জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান এক বিবৃতিতে রাহাফের কর্মকাণ্ডকে ‘পারিবারিক মূল্যবোধবিরোধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন৷