আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার করা আপাতত সম্ভব নয়৷’’ তাঁর এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছে তরুণ সমাজ৷
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করা বিশিষ্টজনরা বলছেন, আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যে জামায়াতের বিরুদ্ধে চলা বিচার বাধাগ্রস্ত হতে পারে৷ বিচারকদের উপর চাপ সৃষ্টি হবে৷ তিনি পর্যাপ্ত আইন না জেনেই এই ধরনের মন্তব্য করেছেন৷ কী উদ্দেশ্যে তিনি এটা বললেন তা খুঁজে দেখার দাবিও তাঁদের৷ তাঁরা বলছেন, কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করে এখনই সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার করতে হবে৷
প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি হিসেবে সাত মাস ধরে তদন্ত হয়েছে৷ সর্বশেষ গত দুই মাস ধরে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুতির কাজ চলছিল৷ তদন্তকারীরাও জানিয়েছেন, যে কোনো সময় অভিযোগপত্র দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে৷
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগঠন জামায়েত ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট৷ জামায়াত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দিয়েছে৷ এদিকে দাবি উঠেছে, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
‘‘জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল’’
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (০১.০৮.১৩) বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট৷ বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেন, ইনায়েতুর রহিম এবং কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তাদের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন৷ রায়ে বলা হয়, ‘‘জামায়াতের গঠনতন্ত্র শুধু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকই নয়, জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
২০০৯ সালের রিটের রায়
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কয়েকটি সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা হাইকোর্টে রিট করেন ২০০৯ সালে৷ রিটে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়, জানান ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর৷ সেই রিটের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করলেন আদালত৷
ছবি: Reuters
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
আদালতের রায়ের পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং এই মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জানান, রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷ সেজন্য ইতিমধ্যে রায়ের কার্যকারিতার স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ‘‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল৷ তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেদলের কিছু নেতার হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে জামায়াত৷’’
ছবি: AP
ট্রাইব্যুনালে বিচার
জামায়াত যুদ্ধাপরাধের দায় অস্বীকার করলেও ২০১০ সালে গঠিত ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে৷ এই ছবিঘর তৈরির দিন (০১.০৮.১৩) অবধি ছয়জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল৷ সর্বশেষ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
এদিকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায়ের পর দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আরো জোরালো হয়েছে৷ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানালেও সরকার এতটা সাহসী হবে বলে আশা করেন না৷ মুনতাসির মামুনের কথায়, ‘‘জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধী দল৷ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়ে তা বলাও হয়েছে৷ তাই যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্লগারদের সতর্ক প্রতিক্রিয়া
বৃহস্পতিবার আদালত রায় ঘোষণার আগেই ফেসবুকে আরিফ জিবতেক লিখেছেন, ‘‘হাইকোর্টের রায়টা কিন্তু জামায়াত নিষিদ্ধ নিয়া মামলা না৷ মামলাটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে জামায়াত আইনসিদ্ধভাবে নিবন্ধিত হয়েছে কিনা, সেটা নিয়ে বিবেচনা৷’’ এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার চাই, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিয়া আমার মাথাব্যথা নাই৷’’
ছবি: privat
এই দাবি নতুন নয়
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর মোট তিনবার দলটি নিষিদ্ধ হয়েছে৷ ১৯৫৯ এবং ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে৷ ১৯৭৯ সালের ২৫শে মে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়৷
আইনমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে তিনটি কারণ তুলে ধরেছেন – প্রথমত, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এ সংগঠনের শাস্তির বিধান নেই৷ দ্বিতীয়ত, জামায়াতের নিবন্ধনের ব্যাপারে একটি মামলা ইতিমধ্যে আপিল বিভাগে আছে৷ এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের আইনে কোনো অভিযোগ আনা হলে ওই মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, তা দেখতে হবে৷ এই পর্যায়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি মনে করি, প্রভাব পড়বে৷ এখন এ সব অন্যান্য পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে সময় লাগবে৷'' আর তৃতীয়ত, অন্যান্য আইনে বলা আছে, যদি কোনো সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি অপরাধ করে, তবে ওই সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা নিয়ন্ত্রককে দায়দায়িত্ব নিতে হবে এবং দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়া হবে৷ জামায়াতের যেসব নেতা মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, তাঁদের ইতিমধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বারের মতো তাঁদের আবার শাস্তি হলে তা আগের শাস্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কিনা, তা বিবেচনা করতে হবে৷
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে-বিদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর বিন্দুমাত্র ধারণা থাকলে এ সব কথা বলতেন না৷ এই আইনের আওতায় অপরাধী সংগঠনকে সাজা দেয়া যায় কিনা, এটা আইনমন্ত্রী বা সরকারের না, ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার৷ তাঁর উচিত রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের কোন্দল নিয়ে মাথা ঘামানো৷ জামায়াতের বিরুদ্ধে নিবন্ধনের মামলা ও সংগঠন হিসেবে মামলা দু'টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়৷ আমি তাঁর বক্তব্য শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি৷''
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যে বিচারের ব্যাপারে মানুষের কাছে ভুল সংকেত যাচ্ছে৷ জামায়াতের প্রশ্নে সরকার যদি কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার চেষ্টা করে, তবে তা আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রীর এই বক্তব্যে ট্রাইব্যুনালের উপর চাপ সৃষ্টি হবে৷'' তাঁর মতে, একজন ব্যক্তি ১০০ বার অপরাধ করলে তাঁর ১০০ বার বিচার হতে পারে৷ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিচার চলাকালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও তাঁর বিচার চলেছে৷ তখন কিন্তু ট্রাইব্যুনালে নিজামীর আইনজীবী আদালতে একবারও বলেনি চট্টগ্রামে আরেকটি আদালতে নিজামীর বিচার চলছে৷
শাহরিয়ার কবিরের চেয়েও একধাপ এগিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা মারুফ রসুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে আইনমন্ত্রী বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, বিদ্যমান আইনেই জামায়াতের বিচার সম্ভব৷ মারুফ রসুল মনে করেন, ইচ্ছে করেই আইনমন্ত্রী এ কথা বলেছেন৷ এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, হেফাজত ইসলামকে চাঙ্গা করা হচ্ছে, তাদের পক্ষে অনেককে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে৷ এমন সময় মন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্য বিশেষ কিছুর ইঙ্গিত বহন করে৷ তাঁর মতে, আইনমন্ত্রী এতটা অজ্ঞ নন যে তিনি ট্রাইব্যুনাল আইনের কিছুই জানেন না৷ হুট করেও তিনি একথা বলেননি৷
শাহবাগ আন্দোলনের বছরপূর্তি
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷ তবে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আরো অনেক ইস্যুতে এখন সরব গণজাগরণ মঞ্চ৷ শাহবাগ আন্দোলনের বর্ষপূর্তি নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি৷ বর্ষপূর্তিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন আন্দোলনের কর্মীরা৷ গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে চলবে এই আন্দোলন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু
পাঁচ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চের অনুষ্ঠান মালা৷ তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় বর্ষপূর্তি৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘ফাঁসির’ দাবি
শাহবাগ আন্দোলনের এক বছর পূর্তির শোভাযাত্রায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ‘ফাঁসির’ দাবিতে সোচ্চার ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনতার ভিড়
গণজাগরণের মঞ্চের আয়োজিত বর্ষপূর্তির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষের ঢল নামে৷ এক বছর পূর্তিতে ঢাকার শাহবাগ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে গণজাগরণ মঞ্চ কর্মীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘প্রতীকী ফাঁসি’
শোভাযাত্রায় ‘প্রতীকী ফাঁসির’ চিত্রও তুলে ধরা হয়৷ বলাবাহুল্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগকে সমর্থন করলেও ফাঁসির বিষয়ে সমর্থন নেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের৷
ছবি: DW/M. Mamun
আলোকচিত্র প্রদর্শনী
আন্দোলনের বছর পূর্তিতে শাহবাগে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শাহবাগ ছাড়িয়ে গোটা বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘নাস্তিক ব্লগার’
শাহবাগ আন্দোলন থেকে সৃষ্ট গণজাগরণের মঞ্চের গত এক বছরের পথচলা মোটেই সহজ ছিল না৷ বরং আন্দোলনের এক পর্যায়ে খুন হন ব্লগার রাজিব হায়দার৷ এরপর ঢালাওভাবে ব্লগারদের নাস্তিক এবং ইসলাম ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে তাঁদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে নামে হেফাজতে ইসলাম৷ এক পর্যায়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লগে ‘ইসলাম ধর্ম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য ও কটূক্তির' অভিযোগে চার ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
ছবি: Getty Images
‘সমর্থন আগের মতোই’
তবে ‘নাস্তিক ব্লগার’ প্রচারণার কারণে শাহবাগে জনসমর্থন কমেনি বলে মনে করেন ব্লগার আরিফ জেবতিক৷ শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম এই কর্মী বলেন, ‘‘আমাদের শুরুতে যে জনসমর্থন ছিল, আজকেও সেই একই জনসমর্থন আছে৷ এবং আমি চ্যালেঞ্জ করি যে কোনো মিডিয়া এটা জরিপ চালিয়ে দেখতে পারে৷’’
ছবি: Arif Jebtic
ভিন্নমত
শুরুর দিকে শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন অবশ্য মনে করেন, ‘‘রাজনৈতিক দল এবং আমাদের রাজনীতিক নেতারা আসলে আমাদের আন্দোলনটা খেয়ে ফেলেছে৷’’ দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত আসিফ গত বছর বাংলাদেশে কয়েকমাস কারাভোগের পর বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: DW/A. Islam
বিভিন্ন ইস্যুতে সরব গণজাগরণ মঞ্চ
প্রসঙ্গত, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির পাশাপাশি আরো অনেক ইস্যুতে সরব রয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ‘রোড মার্চ’ করে গণজাগরণ মঞ্চ৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
10 ছবি1 | 10
গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ব্লগার আকাশ আদিত্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী বলেছেন, জামায়াতের নিবন্ধনের ব্যাপারে একটি মামলা ইতিমধ্যে আপিল বিভাগে আছে৷ এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের আইনে কোনো অভিযোগ আনা হলে ওই মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা দেখতে হবে৷''
এই পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, প্রভাব পড়বে৷ তার মানে হলো – আইনমন্ত্রী আগে থেকেই বুঝে আছেন প্রভাব পড়বে৷ আর দেশের ১৬ কোটি মানুষ মনে করছে প্রভাব পড়বে না৷ আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি করছি আমরা৷ পাশাপাশি জামায়াতের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে যে বিচার চলছে তা দ্রুত এগিয়ে নেয়ারও দাবি জানাচ্ছি৷''