1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী পাচার

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২০ ডিসেম্বর ২০১২

নারী ও শিশু পাচার উপ-মহাদেশের এক ভয়াবহ আর্থ-সামাজিক সমস্যা৷ শুধু ভারত থেকেই ১০ লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়ে যায় প্রতি বছর৷ এছাড়া পাচার হয়ে আসে বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে৷

ছবি: DW

নারী ও শিশু পাচার উপ-মহাদেশে সব থেকে বেশি৷ এটা এক ধরণের ক্রীতদাসত্ব৷ এ সমস্যা শুধু আর্থ-সামাজিক নয়, গভীর এক মানবিক সমস্যাও বটে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রধান কারণ দারিদ্র্য, অশিক্ষা, জাতি দাঙ্গা, রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে ছিন্নমূল পরিবার৷

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ১০ লাখ শিশু ও নারী পাচার হয়ে যায় প্রতি বছর৷ বাংলাদেশ থেকে বছরে পাচার হয়ে ভারতে আসে ১০ থেকে ১৫ হাজার এবং নেপাল থেকে আসে ৫ থেকে ১০ হাজার মেয়ে৷ ভারতে শুধু পাচার হয়েই আসে না, ভারত পাচার হবার একটি ‘ট্রানজিট পয়েন্ট'-ও বটে৷ বিভিন্ন কাজে শিশু ও মেয়েদের চাহিদা বেশি৷ কারণ এদের শোষণ করা যায় সহজে, কম পয়সায়৷ জোর করে ভিক্ষাবৃত্তি, এমন কি দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্যও করা হয়৷

ছবি: AP

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় যৌন শোষণ সবার ওপরে৷ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, পাচার হওয়া নারী শিশুদের ৫৩ শতাংশ যৌন শোষণ এবং ৩২ শতাংশ আর্থিক শোষণের শিকার৷ ‘‘এটা শুধু আর্থ-সামাজিক সমস্যাই নয়, এটা একটা সংগঠিত অপরাধও বটে'', যা ডয়চে ভেলেকে জানান জার্মানির অর্থ সাহায্যপুষ্ট এনজিও ‘সংলাপ'-এর প্রধান ইন্দ্রানি সিংহ৷ তাঁর কথায়, ‘‘১২ থেকে ১৬ বছরের একটা মেয়েকে নিয়ে আসা হয়, সে রোজগার করে টাকা পাঠাবে এই টোপ দিয়ে৷ তার জন্য আগাম হিসেবে পরিবারের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়৷ আর সেটা করা হয় চেনা পরিচিত মানুষদের মাধ্যমে৷''

ভারত-বাংলাদেশের চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তে চেকপোস্ট কম৷ উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রোজই নারী পাচার হচ্ছে৷ এটা একটা লাভজনক ব্যবসা৷ এতে মাথা পিছু মাত্র ৫০-৬০ টাকা ঘুস দিলেই চলে৷ বাংলাদেশ থেকে মেয়ে পাচার সুগম হয়েছে পাচারকারী ও সীমান্তে গ্রামের কিছু লোকজনের যোগসাজশে৷ যেমন কুষ্টিয়া, রাজশাহির সীমান্তের কিছু গ্রাম কাজ করছে ‘হল্ট-স্টেশন' হিসেবে৷ দালালরা মেয়েদের প্রথমে ঐ সব জায়গায় ওঠায়৷ তারপর সময় বুঝে পাচার করে পশ্চিমবঙ্গে এবং সেখান থেকে ভারতের অন্যত্র৷ একই ভাবে নেপাল থেকেও মেয়ে পাচার হয় ভারতে৷

Week 51/12 Women 2: Women Trafficking in India - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

নারী পাচার সমস্যা যে কত ভয়াবহ হয়ে উঠছে, সেটা বোঝাতে গিয়ে ইন্দ্রানি সিংহ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের দেশে জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নীচে৷ সেই সংখ্যা থেকে বছরে কয়েক লাখ মেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, অপহৃত হচ্ছে, পালিয়ে যাচ্ছে, শিশু শ্রমিক হচ্ছে, নাবালিকার হচ্ছে বিয়ে৷ এছাড়া, এর মধ্যে একটা বড় সংখ্যা পাচার হয়ে যাচ্ছে৷ ভারতে, বাংলাদেশে ও নেপালে নারী এবং শিশু পাচার রোধে কঠোর আইন আছে৷ তবুও এই চক্র সক্রিয়৷''

ইন্দ্রানি সিংহ বলেন, ‘‘এই সমস্যার সুরাহা করতে হলে বাড়াতে হবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা, সচেতনতা৷ পঞ্চায়েত স্তরে, সমষ্টি স্তরে এবং পরিবার স্তরে৷ যারা এই পাচার কাজে যুক্ত, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার৷ পাশাপাশি দরকার মেয়েদের সার্বিক বিকাশ৷ দু'দিক থেকেই করতে হবে কাজটা৷ আইন করতে হবে, বন্ধ করতে হবে সীমান্ত পেরিয়ে আসাও৷ নজর রাখতে হবে অন্য রাজ্য থেকে পাচার হচ্ছে কিনা, সেদিকে৷ এছাড়া, প্রতিরোধক কাজ চালিয়ে যেতে হবে৷ মেয়েদের দিতে হবে শিক্ষার সুযোগ৷ বাড়াতে হবে সচেতনতা৷ হাতের কাজ শিখে তাঁরা যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে৷ আর এর জন্য প্রশাসনকে হতে হবে আরো তৎপর৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য