1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইনের শাসনের অর্থ জানে জার্মানি

২২ নভেম্বর ২০১৬

নাৎসি আমলের অভিজ্ঞতাই তার কারণ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও ‘ডি-নাৎসিফিকেশন’ বা দেশকে নাৎসি-মুক্ত করার প্রচেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়নি৷ জার্মান মানসে ও অবচেতনে তার গভীর দাগ মিটতে বহু দশক লেগে গেছে৷

Deutschland NPD Verbotsverfahren
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach

নাৎসি আমলে বিচারের নামে যে প্রহসন চলত আদালতকক্ষে, তা আজও কোনো নাটক বা ফিল্মে বা পুরনো তথ্যচিত্রে দেখলে রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়৷ আবার রক্ত গরম হয়ে ওঠে৷ বিচারকরা নিরপরাধ আসামীদের ওপর হম্বিতম্বি করছেন, তাদের কথা বলতে দিচ্ছেন না, শেষমেষ যে মৃত্যুদণ্ড তাদের দেওয়া হবে, তা জানাই ছিল, পরে সেই সাজাই ঘোষণা করা হচ্ছে৷ নাৎসি ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায় যদি বন্দিশিবিরগুলো হয় – বন্দিশিবির তো নয়, মৃত্যুশিবির – তবে তাদের পরেই আসবে নাৎসি বিচার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ ও বিচারের নামে নির্দোষিদের হত্যা৷ জার্মানরা সে দুঃস্বপ্ন আজও ভোলেননি, যে কারণে ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রে বিচারহীনতা বলে কোনো বস্তু নেই৷

হ্যাঁ, নাৎসি আমলের সেই ‘বিচার বিভীষিকার' কথা স্মরণ করেই হয়ত এ দেশে অপরাধের দণ্ড বা সাজা কিছুটা কমই হয়, বা কম বলে মনে হয়৷ জার্মানরা পারতপক্ষে কাউকে জেলে পাঠাতে চান না, পারোলে, অর্থাৎ পালাবে না, এই শর্তে, ছাড়াই রাখেন৷ নাৎসি পরবর্তী জার্মানির গোটা বিচার ব্যবস্থাই যেন অপরাধীরাও যে মানুষ, সে কথা স্মরণে রেখে৷ এদেশে দণ্ডদানের অর্থ ও উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে তার অপরাধের প্রবণতা থেকে মুক্ত করা, সে যা-তে আবার ব্যক্তি বা বর্গের পক্ষে ঝুঁকি না হয়ে ওঠে, তার ব্যবস্থা করা৷ কিন্তু মৃদু বা মানবিক দণ্ডের অর্থ বিচারহীনতা নয়৷

যেমন হত্যার মতো অপরাধের কোনো স্ট্যাটিউটরি লিমিটেশন নেই, অর্থাৎ এ অপরাধ – বা তার তদন্ত – কোনোদিনই তামাদি হয়ে যাবে না৷ ২০, ২৫ বা ৩০ বছর পরেও যদি তদন্তের কোনো নতুন সূত্র আবিষ্কৃত হয় – যেমন হাল আমলের কোনো ডিএনএ-র হদিশ – তাহলে গোয়েন্দা পুলিশ সেই সূত্র অনুসরণ করে হত্যাকারীকে ধরার চেষ্টা করবে৷ এভাবে আবার ভুলক্রমে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মুক্তি পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে৷

জার্মানিতে হাই প্রোফাইল অপরাধের কেস মানেই সাধারণত কর ফাঁকি দেওয়ার কেস৷ বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক হর্তাকর্তা উলি হ্যোনেস থেকে শুরু করে স্টেফি গ্রাফ – বা তাঁর বাবার মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও লৌহকপাট দেখতে হয়েছে কর ফাঁকি দেওয়া দায়ে৷ ওদিকে কর ফাঁকি দিয়ে থাকলেও, পরে নিজেই কর বিভাগকে সে-কথা জানালে বকেয়া কর ও স্বল্প কিছু জরিমানা দিয়েই মকুব পাওয়া যায় – একেও কিন্তু বিচারহীনতা বললে ভুল করা হবে৷

আমি বলব, গত নিউ ইয়ার্স ইভে কোলোনের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশনের সামনের চত্বরে মহিলাদের উপর যে ব্যাপক হামলা চলেছে, ও পুলিশ যেভাবে – যে ধৈর্য এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে – সেই সব চুরি ও যৌন হামলা ও যৌন হয়রানির আসামীদের খুঁজে বার করার ও আদালতের সামনে পেশ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা থেকেই প্রমাণ হয় যে জার্মানি একটি ‘রেশ্ট-স্টাট' বা আইনশাসিত দেশ৷ এখানে অপরাধ করে একদিকে যেমন ছাড় নেই – অর্থাৎ বিচারহীনতা নেই – অন্যদিকে তেমন এ নিশ্চয়তা আছে যে, বিচারপ্রক্রিয়া হবে ন্যায্য ও আইনসম্মত৷ যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এদেশে অপরাধী থেকে শুরু করে পুলিশ বা উকিল বা কারাগার কর্তৃপক্ষ, সবাই সংবিধান ও আইনের শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে যে যার নিজের কাজ – বা অকাজ – করে যাচ্ছেন৷ কোথাও কোনো ফাঁক বা ফাঁকি নেই, যা থেকে আসছে সরকার ও আইনব্যবস্থার উপর জনসাধারণের আস্থা ও নির্ভরশীলতা৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

নুরেমব্যার্গ ট্রায়ালে গোনাগুনতি ২৪ জন উচ্চপদস্থ নাৎসি কর্মকর্তার বিচার করে বাকি জার্মান জাতির জন্য একটা নিদর্শন স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছিল৷ মিত্রশক্তিদের দখলীকৃত জার্মানিতে ডি-নাৎসিফিকেশন বা নাৎসি মানস বিতাড়নের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি৷ বিশেষ করে সর্ষের মধ্যেই ভূত ছিল – অর্থাৎ যুদ্ধপরবর্তী বিচার বিভাগের বিচারক, কৌঁসুলি ও উকিলদের মধ্যে সাবেক নাৎসিদের অনুপাত ছিল মাত্রাতিরিক্ত রকম বেশি৷ গোড়ার দিকের বেশ কিছু জার্মান সাংসদেরও নাৎসি পটভূমি ছিল বলে শোনা যায়৷ স্বয়ং নোবেল পুরস্কার জয়ী লেখক গ্যুন্টার গ্রাস সারাজীবন মুখ ফুটে বলতে পারেননি যে, তিনি নাৎসিদের কুখ্যাত ওয়াফেন এসএস-এর সদস্য ছিলেন – ১৬ বছর বয়সে৷

তাই এ দেশে বিচারহীনতার অর্থ: গণতন্ত্রের অবসান, জার্মানরা যে মূল্য দিতে রাজি নন৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ