আইনের শাসন না থাকায় গণপিটুনি, মব তৈরি বাড়ছে
৩ জুলাই ২০২৫
গণপিটুনির সবশেষ ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার৷ কুমিল্লার মুরাদনগরে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ এর আগে রোববার গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় এক শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল৷ আর শনিবার রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷
মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএসএস এর হিসেব বলছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে গণপিটুনির ১০০৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৮১৬ জন নিহত হয়েছেন৷ তবে প্রকৃত গণপিটুনির ঘটনা ও নিহত-আহতের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি৷ গত ১০ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান ‘সবচেয়ে ভীতিকর' বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
গণপিটুনির ঘটনাগুলোর মধ্যে কতগুলো ঘটনার বিচার হয়েছে জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যতদূর মনে পড়ে শুধুমাত্র বাড্ডার রেনু বেগমের মামলাটির বিচার হয়েছে৷ এছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ঘটনার বিচার হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না৷''
বাড্ডায় যা হয়েছিল
২০১৯ সালের ২০ জুলাই ঢাকার বাড্ডায় স্কুল প্রাঙ্গণে ‘ছেলেধরা' গুজবে তাসলিমা বেগম ওরফে রেনু নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল৷ সেদিন উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাসলিমা তার চার বছরের মেয়েকে ভর্তি করানোর বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন৷ সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাকে ‘ছেলেধরা' সন্দেহ করেন৷ এই গুজব দ্রুত বাইরে ছড়িয়ে পড়ে৷ আশপাশ থেকে বিভিন্ন বয়সী কয়েক শ নারী-পুরুষ স্কুল প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন৷ তাদের মারধর থেকে রক্ষা করতে তাসলিমাকে স্কুলের দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে রাখা হয়৷ এর মধ্যে কয়েকজন বিদ্যালয়ের কলাপসিবল গেট ভেঙে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যান৷ তারা তাসলিমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে পেটাতে শুরু করেন৷ প্রায় আধা ঘণ্টা নির্যাতনের পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তাসলিমা৷ এ ঘটনায় তাসলিমার ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচ শ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন৷
২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ৷ পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত৷ গত বছরের ৯ অক্টোবর এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷ এ ছাড়া চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন আট আসামি৷ মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তির নাম হৃদয় ইসলাম মোল্লা ওরফে ইব্রাহীম ওরফে নয়ন মোল্যা৷ তিনি আগে থেকেই কারাগারে আছেন৷ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া চারজন হলেন আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, রিয়া বেগম ও আসাদুল ইসলাম৷ এই চারজন জামিনে ছিলেন৷ রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়৷''
কুমিল্লায় তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
কুমিল্লার মুরাদনগরে বৃহস্পতিবার একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাঙ্গরা থানার আকবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে৷ নিহতরা হলেন- রুবি বেগম (৫৮), তার ছেলে রাসেল (৩৫) ও মেয়ে জোনাকি আক্তার (২৭)৷ এই ঘটনায় আহত অপর মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷
মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা যেটা জানতে পেরেছি, দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবারটি মাদক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত৷ এ নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে তাদের একটা বিরোধ ছিল৷ এর প্রেক্ষিতেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে৷''
কেউ কি মবের মাধ্যমে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে? জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘‘অবশ্যই না৷ এজন্য আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছি৷ পুলিশ পৌঁছার আগেই ঘটনাটি ঘটে গেছে৷''
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন থেকে চার দিন আগে একটি মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে রুবি আক্তারের পরিবারের সঙ্গে স্থানীয়দের ঝগড়া হয়৷ সে সময় রুবি ও তার ছেলে বেশ কয়েকজনকে মারধর করেন৷ এ ঘটনার সূত্র ধরেই কড়ইবাড়ি গ্রামে বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে রুবির বাড়িতে হামলা করে৷ ওই পরিবারের চার জনকে বেদম মারধর করে৷ এ সময় ঘটনাস্থলেই রুবি, তার মেয়ে জোনাকি ও ছেলে রাসেল নিহত হয়৷ রুবির অপর মেয়ে রুমাকে পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়৷
এলাকাবাসীর দাবি, মাদক ব্যবসা ও প্রতারণা করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা রুবি ও তার পরিবারের প্রতি গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ ছিল৷ তার (রুবি) বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে৷ এছাড়াও সরকারি খাল দখল করে তার বিরুদ্ধে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে৷ এসব কারণে অনেকদিন ধরে তাদের উপর ক্ষুব্ধ ছিল মানুষ৷
উপজেলার আকবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে যতটুকু শুনেছি নিহত পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভে সকালে ওই পরিবারের ৪ সদস্যকে গণপিটুনি দেন৷ এতে তিনজন ঘটনাস্থলে মারা যান৷ একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷''
পিটুনিতে মৃত্যুর আরও কিছু ঘটনা
গত রবিবার গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় এক শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ মারধরের ভিডিও সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ার পর কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ৷ এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হলেও জড়িত কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি৷ এই ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ গত শনিবার ভোরের দিকে গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ীতে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড নামের কারখানায় ওই ঘটনা ঘটে৷ নিহত শ্রমিক হৃদয় (১৯) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে৷ তিনি কারখানাটিতে মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন৷
গত শনিবার বেশ কয়েকজন মিলে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন৷ স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিন ধরে কিছু যুবক ধারালো অস্ত্রসহ ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল৷ তারা পথচারীদের ছিনতাই করত, বাসার দরজায় নক করত, নারীদের উত্ত্যক্ত করত এবং পুরো এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেছিল৷ ওই দিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনজন ধারালো অস্ত্রধারী যুবক আবারও এলাকায় আসে৷ স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হলে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে তাদের ঘিরে ফেলে৷ একপর্যায়ে গণপিটুনি দিলে দুই যুবকের মৃত্যু হয়৷ এই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি৷
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ নিহতের নাম তোফাজ্জল হোসেন৷ চোর সন্দেহে একদল ছাত্র তাকে দফায় দফায় মারধর করে৷ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর কথা জানান৷ হল কর্তৃপক্ষ তোফাজ্জলকে প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিমের কাছে হস্তান্তর করার পর টিমের সদস্যরা তোফাজ্জলকে হাসপাতালের পরিবর্তে প্রথমে শাহবাগ থানায় নিয়ে যান৷ এরপর পুলিশের পরামর্শে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ হাসপাতালে তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করা হয়৷ ছাত্রদের দাবি, হলে শিক্ষার্থীদের খেলা চলার সময় কয়েকজনের মোবাইল ফোন চুরি হয়৷ শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে আটক করে বেধড়ক মারধর করে৷
মব তৈরির ঘটনা
সম্প্রতি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে ধরে এনে মবের নামে গলায় জুতোর মালা পরানো হয়৷ ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে একজনকে নুরুল হুদার মুখে জুতা দিয়ে আঘাত করতে দেখা গেছে৷ তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই ঘটনাগুলোকে ‘মব' বলতে রাজি নন৷ তার মতে, এগুলো জনরোষ৷ তার এমন বক্তব্য একধরনের ‘উসকানি' বলে সমাজিক মাধ্যমে অনেকে মন্তব্য করেছেন৷
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে দেশে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে৷ সরকার মুখে শক্ত কথা বললেও কার্যত এমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি যে কারণে মানুষ ভয় পাবে৷ ফলে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে দেখাতে হবে যে তারা এ ব্যাপারে মুখে নয়, কাজে শক্ত৷''
পটিয়ায় ওসি প্রত্যাহার
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পটিয়া শহীদ মিনার এলাকা থেকে রাঙামাটির একজন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় নিয়ে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা৷ থানায় গিয়ে ওই নেতাকে গ্রেপ্তার দেখাতে বলেন তারা৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা থানা চত্বরে ওই নেতাকে ‘মারধরের চেষ্টা করলে' পুলিশ বাধা দেয়৷ এসময় উত্তেজনার মধ্যে পুলিশের লাঠিচার্জে বেশ কয়েকজন আহত হয়৷
যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে বিষয়টি আইন অনুযায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল৷ বিক্ষুব্ধরা পুলিশের ওপর চওড়া হয় এবং থানার জানালার আয়না ভাঙচুর করে৷ এর প্রতিবাদে সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে থানা ঘেরাওয়ের কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা৷ পরদিন অর্থাৎ বুধবার সকালে পটিয়া থানা ঘেরাও করা হয়৷ বিক্ষোভকারীরা বাইপাস এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন৷ এছাড়া পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারসহ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা৷
এক পর্যায়ে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বুধবার রাতে পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে প্রত্যাহার করা হয়৷ তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে৷
কেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না? জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার আন্তরিক হলেও এখানে দুর্বলতার পরিচয় দিচ্ছে৷ আমরাও বারবার বলেছি, সরকারকে এ ব্যাপারে আরো কঠোর হতে হবে৷ এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷''
অনেকেই অভিযোগ করছেন, এনসিপি বিকল্প সরকার হিসেবে কাজ করছে৷ তারা যে দাবি করছে, সরকার সেটা মেনে নিচ্ছে৷ এই অভিযোগের ব্যাপারে মনিরা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা একেবারেই ভুয়া কথা৷ বরং সরকার বিএনপির দাবির প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী৷ একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা যা বলছেন সরকার সেটা শুনছে৷ এমনকি অধিকাংশ থানার ওসি, ইউএনও তো বিএনপির কথায় উঠছে, বসছে৷ অনেকে আবার বিএনপি পরিবারের সদস্য বলে নিজেদের পরিচয় সামনে আনার চেষ্টা করছেন৷''
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ কেউ কোনো দাবি নিয়ে যমুনার সামনে গেলেই সরকার সেটা মেনে নিচ্ছে৷ ফলে তারা তো বেপরোয়া হবেই৷ অন্যদিকে একজন উপদেষ্টা অস্ত্রের গুলি নিয়ে বিমানবন্দরে চলে যাচ্ছেন৷ সেখানেও কোনো আইন মানা হচ্ছে না৷ আবার তিনি বলছেন, ৫ আগস্ট সরকারের পতন না হলে আমরা অস্ত্র তুলে নিতাম৷ এখানে শব্দটা বলেছেন ‘আমরা'৷ এ বিষয়ে কি সরকার কোনো খোঁজ খবর নিয়েছে? তাহলে আইনের শাসন আপনি কীভাবে প্রতিষ্ঠা করবেন? এমন ঘটনা তো ঘটতেই থাকবে৷''
পাটগ্রামে থানায় হামলা করে আসামি ছিনতাই
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা পাওয়া দুই আসামিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে৷ এ সময় পুলিশের সঙ্গে একদল লোকের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন৷ গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনার পর থেকে থানার সামনে বিজিবি মোতায়েন রয়েছে৷
ছিনিয়ে নেওয়া দুই আসামি হলেন- পাটগ্রাম উপজেলার মমিনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে বেলাল হোসেন (৩৩) এবং একই উপজেলার মির্জারকোট গ্রামের সামসুল হকের ছেলে সোহেল রানা চপল (৩৫)৷ তারা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য বলে জানা গেছে৷
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাস বলেন, বুড়িমারী-রংপুর মহাসড়কে বিভিন্ন পাথর ও বালু বোঝাই ট্রাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে উপজেলার সরেয়ার বাজার এলাকায় অভিযান চালনো হয়৷ এ সময় চাঁদাবাজির অভিযোগে বেলাল ও সোহেলকে আটক করা হয়৷ এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে চাঁদার লক্ষাধিক টাকা জব্দ করা হয়৷ পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বাসিয়ে তাদের প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয় বলে জানান তিনি৷
পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘ওই দুজনকে কারাদণ্ড দেওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাতেই একদল লোক পাটগ্রাম থানার সামনে জড়ো হয়৷ যাদের অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ এ সময় কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে৷ পুলিশ আত্মরক্ষার্থে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে৷ এক পর্যায়ে হামলাকারীরা থানায় ঢুকে কিছু জিনিসপত্র ভাঙচুর করে দুই আসামিকে নিয়ে চলে যায়৷''
আসামি ছিনতাই ও থানায় হামলার ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত ছিল না বলে দাবি করেছেন পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান সোহেল৷ বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম৷ এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না৷ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে৷''