সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর মামলার প্রধান আসামি শহীদুল ইসলাম স্বাধীন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
তবে মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার তরুণ ঝুমন দাস আপন জামিন পাননি৷ তিনি এখনও কারাগারে৷ উচ্চ আদালতে তার জামিনের শুনানি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে৷
স্বাধীনের জামিনআর ঝুমনের কারাগারে থাকা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, প্রভাবশালীদের দিকে আইন একটু হেলে পড়ে৷ সেটা অর্থশালী হোক আর ক্ষমতার দিক দিয়ে প্রভাবশালী হোক অথবা পেশি শক্তির অধিকারীই হোক৷ এটা কোনভাবেই কাম্য নয়৷ এই অবস্থা চলতে থাকলে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা এক সময় শেষ হয়ে যাবে৷ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের শাসনথাকাটা জরুরি৷ আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে অপপ্রয়োগ হচ্ছে সেটা তো আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি৷ এই ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে এই আইনটির সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না৷’’
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের শাসন থাকাটা জরুরি: অধ্যাপক মিজানুর রহমান
শুধু স্বাধীন নয়, দুর্নীতির মামলায় প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে জামিন পেয়েছেন যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান৷ গত ৯ মার্চ ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন৷ যদিও বিষয়টি এতদিন জানা যায়নি৷ একইভাবে ঘুস গ্রহণ ও অর্থপাচার আইনের মামলায় বরখাস্তকৃত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিককেও জামিন দিয়েছেন আদালত৷
একই ধরনের দুর্নীতির মামলায় কারও জামিন হচ্ছে, আবার কারও হচ্ছে না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢালাওভাবে তো এগুলো নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না৷ প্রতিটি মামলাই আলাদা৷ কোন মামলায় কী আছে সেটা দেখে বলতে হবে৷ হুট করেই এগুলো নিয়ে মন্তব্য করাও ঠিক হবে না৷’’
তবে সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একই ধারার মামলায় আদালত একজনকে জামিন দিতে পারেন, আরেকজনকে জামিন নাও দিতে পারেন৷ এটা আদালতের এখতিয়ার৷ আদালত যেটা দেখেন একই ধারার দুর্নীতির মামলা হলেও কার দুর্নীতির পরিমাণ কত? একজন হয়ত অবৈধভাবে তিন লাখ টাকা উপার্জন করেছেন৷ অন্যজন একশ' কোটি টাকা উপার্জন করেছেন৷ দু'টি মামলার ধারা কিন্তু এক৷ কিন্তু আদালত তিন লাখ টাকা দুর্নীতি করা ওই লোকটিকে আগে জামিন দেন৷ এই কারণে দেখবেন দুর্নীতির মামলার শুরুতেই আদালত শোনেন কত টাকার দুর্নীতি করেছেন৷’’
গত ১৭ মার্চ হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয় নোয়াগাঁও গ্রামের ৮৮টি হিন্দু বাড়িতে৷ এ সময় পাঁচটি মন্দির ভাঙচুর করা হয়৷ ঝুমন দাস আপনের ফেসবুক আইডি থেকে মামুনুল হককে কটাক্ষ করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে এই হামলা চালানো হয়৷ যদিও হামলার ঘটনার আগেই পরিবারের লোকজন ঝুমনকে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়৷ এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে দেড় হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ শাল্লা থানা পুলিশও একটি মামলা করে৷ এ ছাড়া ঝুমন দাসের মা নিভা রানী দাসও আরেকটি মামলা করেন৷ এই মামলায়ও ৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়৷ সব মামলায় প্রধান আসামি স্বাধীন৷
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নোয়াগাঁওয়ের ঘটনায় বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল এবং পুলিশের করা দুটো মামলাই দুর্বল৷ এরই সুযোগ নিয়েছে আসামিপক্ষ৷ প্রথমে পুলিশ যে মামলা করেছে সেটা তো চুরির মামলা৷ পরে আমরা এটা নিয়ে কথা বলার পর কিছু ধারা নতুন করে যুক্ত হয়েছে৷ আমরা বলেছি, এটা ধর্মীয় উসকানির বিষয় বলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের যাওয়ার মতো মামলা৷ নতুন কিছু ধারা যোগ করলে তো আর মামলা শক্তিশালী হয় না৷ ফলে সহজেই জামিন পেয়েছে স্বাধীন৷ অন্যদিকে ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে৷ সাধারণত নিম্ন আদালত এই মামলায় জামিন দিতে চান না৷’’
শাল্লার হিন্দু গ্রামে হামলার ঘটনায় পুলিশ সব মিলিয়ে ১০৫ জনকে গ্রেফতার করে৷ এদের বেশিরভাগ আসামি ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছে৷ ১৮ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে৷ সুনামগঞ্জ ডিবির ওসি ইকবাল বাহার জানান, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া ১৮ জনই ভাঙচুর-লুটপাটে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে৷ শহীদুল ইসলাম স্বাধীনও যে হামলায় ছিলেন- ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার সময় অনেকেই তা বলেছে৷ তবে স্বাধীন নিজে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন৷ ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির এখনও তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি৷
বাংলাদেশে আইনের কিছু ফাঁকফোকর
বাংলাদেশের প্রায় সব আইনেই আছে ফাঁকফোকর৷ এ কারণে প্রকৃত অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার নজিরও অনেক৷ অপরদিকে আইনের এই ফাঁকফোকরের কারণে নিরীহ মানুষও অহরহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ফাঁকের কারণে মূল আসামীরা প্রায় সবসময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়৷ এ আইনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আলামত জব্দ করা৷ অর্থাৎ কার দখলে কিংবা কোন জায়গা থেকে মাদক জব্দ করা হয়েছে সেটাই প্রধান বিবেচ্য৷ তাই এ ধরনের মামলায় মাদক দ্রব্যের বাহক, অর্থাৎ চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও আসল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে৷
ছবি: picture-alliance/epa/Barbara Walton
যৌতুক নিরোধ আইন
যৌতুক নিরোধ আইনে নানান ফাঁকের কারণেও অনেকক্ষেত্রেই পার পেয়ে যায় অপরাধী৷ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ২ ধারায় বলা হয়েছে, বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গে পরিপন্থি না হলে এ আইনে যৌতুক বলতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রদত্ত যে কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে বোঝাবে৷ তবে কোনো উপঢৌকন যৌতুক হিসেবে গণ্য হয় না এ আইনে৷ ফলে হালে সমাজে উপঢৌকন বা উপহারের নামেও যৌতুক দেয়া-নেয়া চলছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
নারী ও শিশু নির্যাতন আইন
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু এ সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে কী হবে, তা বলা নেই৷ তবে এরপর মামলার বিচারকাজ ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী চলার কথা৷ তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচারকাজ বা তদন্ত শেষ করতে না পারলে আসামিরা জামিন পেতে পারে – উচ্চ আদালতের এমন সিদ্ধান্তও রয়েছে৷ এ সিদ্ধান্তের কারণেও এ আইনে তৈরি হয় ‘ফাঁক’ আর সেই ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায় আসামীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
অর্থঋণ আইন
অর্থঋণ আইনেরও সমালোচনা রয়েছে৷ আইনে ফাঁক থাকায় ঋণখেলাপিরা ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েও তা পরিশোধ করেন না বা করতে চান না৷ বাংলাদেশে আইনের ফাঁক গলে ঋণখেলাপিদের পার পেয়ে যাওয়ার নজির অনেক৷ উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের অর্থঋণ আইনে ঋণখেলাপির কোনো সংজ্ঞাই নেই৷
ছবি: Reuters/A. Rahman
অস্ত্র আইন
বাংলাদেশে যে অস্ত্র আইন প্রচলিত আছে, তা ১৮৭৮ সালে প্রণীত৷ বিভিন্ন ধারায় সরকারি অনুমোদন ছাড়া অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার, প্রদর্শন, ক্রয়-বিক্রয়, আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধ করা এ আইনের ১৯এ আর ১৯এফ ধারায়ই সাধারণত অবৈধ অস্ত্র দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ তবে যারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের আইনের আওতায় আনা যায় না৷
ছবি: Getty Images/AFP
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন
পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যু নিবারণের উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন’৷ এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ তবে এ আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কারাদণ্ড অথবা জরিমানা করতে পারবেন আদালত৷ ফলে হেফাজতে নির্যাতন করে মৃত্যু ঘটিয়েও শুধু জরিমানা দিয়েই মুক্তি পেতে পারবে অপরাধী৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Z. Chowdhury
6 ছবি1 | 6
ঝুমনের ভাই নুপুর চন্দ্র দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ঝুমনের জামিনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একবার, জজ কোর্টে একবার আবেদন করেছিলাম৷ কিন্তু আদালত জামিন দেননি৷ সর্বশেষ গত সোমবার হাইকোর্টে জামিনের জন্য তোলা হয়েছিল৷ কিন্তু আদালত শোনেননি৷ পরে শুনবেন বলে ফেরত দিয়েছেন৷ পুলিশ ঝুমনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কী পেয়েছে সেটাও আমাদের বলে না৷ আবার জামিন চাইলে বিরোধিতা করে৷ এর মধ্যে স্বাধীনের জামিন হয়ে গেল৷ গতকালই সে এলাকায় এসেছে৷ এলাকায় গুজব রয়েছে, তার লোকজন অনেকদিন ধরেই বলছিলেন, স্বাধীন আসুক তারপর...৷ এখন কী হবে সেটাই বুঝতে পারছি না৷ আবার আমার ভাইয়ের ফেসবুক এখনও খোলা৷ পুলিশ তার কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়েছে৷ কী যে হচ্ছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না৷ কোথায় গেলে বিচার পাব তাও জানি না৷’’
আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি নিম্ন আদালত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন দিতে চান না৷ দিচ্ছেনও না৷ অথচ হামলা, ভাঙচুরের মতো ফৌজদারি অপরাধের মামলায় জামিন দিচ্ছেন৷ এটা উচিত না৷’’
প্রসঙ্গত, সাবেক যুবলীগ নেতা কাজী আনিসুরের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা করেন কমিশনের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান৷ ওইদিন কাজী আনিছের স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে এক কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনের অভিযোগেও আরেকটি মামলা হয়৷ গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুটি মামলার চার্জশিট দাখিল করেন একই কর্মকর্তা৷ এর আগে সুমি রহমানও জামিন পেয়েছেন৷ একইভাবে ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিক দুর্নীতি ও ঘুসের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন৷ ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির ভূতের গলিতে পার্থ গোপাল বণিকের নিজ ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়৷ এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়৷
৫০ বছরেও ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র না পাওয়ার আক্ষেপ
বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থান করে নেয়ার ৫০ বছর পূর্তিতে এ দেশের অগ্রযাত্রায় মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দিত৷ কিন্তু অনেকে মনে করেন এখনো ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এখনো গন্তব্য বহুদূর৷
ছবি: picture alliance/Pacific Press Agency/B. H. Rana
‘সঠিক ইতিহাস প্রজন্ম যেন জেনে নেয়’
বরিশালের সৈয়দ আবদুল মালেক একাত্তরে যুদ্ধ করেন নয় নম্বর সেক্টরে৷ ডান পায়ে গুলি লাগে৷ এখনও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না৷ ১৯৭৩ সালে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন পটুয়াখালিতে, দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে যান সচিব হিসেবে৷ তিনি বলেন, ’’দেশের জমি কমেছে, মানুষ বেড়েছে, তবুও খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন আমরা৷ কর্মসংস্থান ও আয় বেড়েছে৷ এগুলো দেখলেই তৃপ্ত হই৷ তবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা প্রজন্ম যেন জেনে নেয়৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘বাংলাদেশ পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া’
সাব-সেক্টর কমাণ্ডার মাহফুজ আলম বেগ ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের এলিট কমান্ডো৷ একাত্তরে কৌশলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন৷ স্বাধীনতার পর চাকরি জীবন শুরু করেন, সবশেষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন৷ এখনও স্বপ্ন দেখেন দেশকে নিয়ে৷ বললেন, ‘‘বাংলাদেশ পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া৷ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এর চেয়ে বড় সফলতা আর কী আছে!’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এখনো হয়নি’
রমা রানী দাস ট্রেনিং নেন ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগের কাছে৷ নয় নম্বর সেক্টরের অধীনে সাতক্ষীরা, ভোমরা, আসাশুনিতে গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করতেন৷ স্বাধীনতার পর ঝালকাঠি হরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করেন৷ দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত৷ তবে রমা রানী বলেন, ‘‘স্বাধীন দেশে ভালো আছি৷ তবে অসাম্প্রদায়িক দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম৷ সেটা এখনও হয়নি৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘ধর্মনিরপেক্ষতা বাধার মুখে পড়েছে’
ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল হক একাত্তরে ধলেশ্বরীতে জোনাল কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন৷ স্বাধীনতার পর যোগ দেন চিকিৎসা পেশায়৷ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম ট্রেজারার তিনি৷ সব মিলিয়ে তৃপ্ত হলেও একটা আক্ষেপ আছে তার, ‘‘বঙ্গবন্ধু টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া মুসলমানদের নিয়েই একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে সেই ধর্মনিরপেক্ষতার দিকটা বাধার মুখে পড়েছে৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয়টাই যেন বড় হয়
সিলেটের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আহম্মদ বাবু একাত্তরে ট্রেনিং নেন আসামে৷ চার নম্বর সেক্টরে দিলখুশা চা বাগান অপারেশনে সাবমেশিন গানের গুলিতে তার বাম পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ স্বাধীনতার পর ব্যবসা শুরু করেন৷ এখন সানি স্যোলার লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি দেখতে চাই না– তুমি হিন্দু কি মুসলমান৷ দেখতে চাই, তুমি মানুষ কিনা, তুমি বাংলাদেশকে ভালবাসো কিনা, তুমি বাঙালি কিনা৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘গণতন্ত্রের নামে যেন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হয়’
মো. সাইফুল আলম আট নম্বর সেক্টরে গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন৷ স্বাধীনতার পর আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ সহকারি জজ, জেলা জজের দায়িত্ব শেষে দুদকের মহাপরিচালক হিসাবে অবসরে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ৷ গণতন্ত্রের নামে যেন পরোক্ষ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না পায় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার৷ ফাইনান্সিয়াল অফেন্স, আর সেক্সচুয়াল অফেন্স কমিয়ে আনতে না পারলে সোনার বাংলা হবে না৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘তৃণমূলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে’
অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন একাত্তরে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন দুই নম্বর সেক্টরে৷ নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা, উপ-উপাচার্য ছিলেন চার বছর৷ অবসরের পরও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনারারি প্রফেসর হিসেবে কাজ করছেন৷ বললেন, ‘‘তৃণমূলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে আনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে৷’’
ছবি: Salek Khokon/DW
‘মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো প্রজন্ম দেখুক’
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে করিমপুর ইয়ুথ ক্যাম্পের সঙ্গে সহকারি প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন যুদ্ধ-আলোকচিত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হান৷ পরে বাংলাদেশ ভলান্টারি সার্ভিসেস কোর-এর আলোকচিত্রী হিসেবে যোগ দেন৷ মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও ঘটনা ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন৷ এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো প্রজন্ম দেখুক৷ ছবি দেখে প্রজন্ম ভাবুক কত কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে আমার স্বাধীনতা পেয়েছি৷’’