সৌরভ বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকার সময় কোহলির সঙ্গে তার সংঘাত সামনে আসে। আইপিএলে সেই লড়াই অনেক বেড়েছে।
বিজ্ঞাপন
সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায় এখন দিল্লি ক্যাপিটালসে ক্রিকেট ডিরেক্টর। তা সত্ত্বেও দল পরপর পাঁচটি ম্যাচ হেরেছে। আর একটি ম্যাচ হারলে প্রতিযোগিতা থেকে কার্যত ছিটকে যাবে। এই আইপিএল টিমের কর্তারা পুরো কোচিং স্টাফকে ছাঁটাই করার কথা ভাবছেন। সেক্ষেত্রে সৌরভ, কোচ রিকি পন্টিং, চার সহকারী কোচ শেন ওয়াটসন, প্রবীণ আমরে, অজিত আগারকর, বিনু জর্জ সকলের চাকরি যেতে পারে।
তবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ। দিল্লির আগের ম্যাচ ছিল বিরাট কোহলির বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচেও ডাগ আউটে বসেছিলেন সৌরভ। একটা ক্যাচ নেয়ার পর বিরাট দিল্লির ডাগ আউটের দিকে তাকান। সেই চাহনিটা অনেকের কাছে একটু অদ্ভূত ঠেকেছে।
বেঙ্গালুরু সেই ম্যাচ জিতে যায়। তারপর নিয়মতো দুই টিম ও সাপোর্টিং স্টাফ একে অন্যের সঙ্গে হাত মেলায়। সেই পর্ব যখন চলছিল, তখন সৌরভের সামনে ছিলেন রিকি পন্টিং। তিনি যখন বিরাটের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলেন, তখন সৌরভ পন্টিংকে টপকে এগিয়ে পরের প্লেয়ারের সঙ্গে হাত মেলান। বিরটের সঙ্গে হাত মেলাননি সৌরভ।
নিজে থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিরাট কোহলি। আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলার সময় তিনি এই ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, বোর্ডকে আগে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন, রোহিত শর্মাকেও জানিয়েছিলেন। সেইসময়ের কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গেও তার কথা হয়েছিল। বিরাট জানিয়ে দেন, তিনি টেস্ট এবং একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করবেন।
ছবি: AFP/D. Sarkar
কোহলির জায়গায় রোহিত
এরপর কোহলির জায়গায় রোহিত শর্মাকে প্রথমে ভারতের টি-টোয়েন্টি টিমের অধিনায়ক করা হয়। কিছুদিন পর একটা বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, একদিনের ক্রিকেটেও রোহিতই অধিনায়ক হবেন। বোর্ডের যুক্তি ছিল, সাদা বলের ক্রিকেটে একজনই অধিনায়ক থাকা উচিত।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
সৌরভের সাফাই
কোহলির কাছ থেকে এইভাবে একদিনের ক্রিকেটের অধিনায়কের পদ ছিনিয়ে নেয়ার পর প্রবল বিতর্ক শুরু হয়। তখন সৌরভ জানান, কোহলিকে জানিয়েই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর তিনি কোহলিকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। কোহলি সেটা শোনেননি। সাদা বলে একজন অধিনায়ক থাকা উচিত বলে নির্বাচকরা রোহিতকে অধিনায়ক করেছেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Paranjpe
বিরাটের জবাব
এরপর বোমা ফাটান বিরাট কোহলি। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সৌরভ তাকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব না ছাড়ার কোনো কথা বলেননি। আর একদিনের ক্রিকেটে রোহিতকে অধিনায়ক ঘোষণার দেড় ঘণ্টা আগে তাকে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেটাও দক্ষিণ আফ্রিকায় দল নির্বাচন নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পর একেবারে শেষে।
ছবি: Getty Images/A. Davidson
'বোর্ড দেখছে'
প্রশ্ন হলো, কে ঠিক বলছেন, সৌরভ না বিরাট? সৌরভ এরপর জানিয়েছেন, বোর্ড বিষয়টি দেখছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝখানে বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। দল দেশে ফেরার পর নিতে পারে।
ছবি: privat
গাভাস্কারের মতে
সুনীল মনোহর গাভাস্কার মনে করেন, বিরোধের কারণ, কোহলির বিবৃতি। টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময় কোহলি বলেছিলেন, তিনি টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক থাকবেন। তার বলা উচিত ছিল, এই দুই ফরম্যাটে অধিনায়ক থাকতে তার কোনো অসুবিধা নেই। কোহলির কথায় বোর্ড চটেছে বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ছবি: picture alliance/AP Photo
অশ্বিন বনাম শাস্ত্রী
ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে অন্যতম রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি সম্প্রতি ক্রিকইনফোডটকমে বলেছেন, ২০১৮-১৯-এর অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় কোচ রবি শাস্ত্রীর একটি কথায় ভেঙে পড়েছিলেন। সে সময় একটি টেস্টে স্পিনার কুলদীপ যাদব পাঁচ উইকেট নেয়ার পর রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, কুলদীপই এখন ভারতের সেরা স্পিনার। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সফল বোলার অশ্বিন এই কথাটা মেনে নিতে পারেননি বলে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Parks
শাস্ত্রীর জবাব
রবি শাস্ত্রী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, সবার টোস্টে মাখন মাখানো একজন কোচের কাজ নয়। তার কাজ, কোনো এজেন্ডা ছাড়া ঠিক তথ্য পরিবেশন করা। কুলদীপ সেই টেস্টে অসাধারণ বল করেছিলেন এবং পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। তিনি এত ভালো বল করেছিলেন বলেই ওই কথাগুলো বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন শাস্ত্রী।
ছবি: dapd
শাস্ত্রী খুশি
শাস্ত্রীর বক্তব্য, তার ওই মন্তব্যের ফলে অশ্বিন আরো ভালোভাবে নিজের কাজটা করেছেন। তাই তিনি খুশি। শাস্ত্রীর দাবি, তার মন্তব্যের পরই অশ্বিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন। উপরের ছবিতে মহম্মদ শামির সঙ্গে শাস্ত্রী।
ছবি: IANS
9 ছবি1 | 9
বিষয়টা এখানেই থামেনি। এরপর বিরাট ইনস্টাগ্রামে সৌরভকে আনফলো করে দেন। মোট ১৭৬ জনকে ফলো করতেন বিরাট। তার মধ্যে সৌরভও ছিলেন। সৌরভকে আনফলো করে প্রত্যাঘাত করেন বিরাট।
তার জবাবে সৌরভও বিরাটকে আনফলো করে দিয়েছেন বলে আনন্দবাজার জানিয়েছে।
এভাবেই আইপিএলেও সৌরভ ও বিরাটের সম্পর্কের তিক্ততা প্রকাশ পেয়েছে। এর আগে সৌরভ যখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট তখন বিরাট জানান, তিনি টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে অধিনায়ক থাকবেন। কিন্তু বোর্ড এরপর টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিকে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে বিরাটকে সরিয়ে দেয়। সৌরভের যুক্তি ছিল, টি-টোয়েন্টি ও একদিনের আন্তর্জাতিকের অধিনায়ক একই হওয়া উচিত।
পরে সৌরভ দাবি করেন, তিনি বিরাটকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কপদ ছাড়তে মানা করেছিলেন। কিন্তু বিরাট সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, বোর্ডের কারো কাছ থেকে তিনি এরকম কোনো ফোন পাননি।
শাস্ত্রীর কটাক্ষ
রবি শাস্ত্রীর সঙ্গেও সৌরভের সম্পর্ক খুব একটা মধুর নয়। শাস্ত্রী সম্প্রতি আইপিএলের ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘'লড়াই করে হারা এক কথা, আর বিপক্ষের কাছে এভাবে প্রতিরোধহীনভাবে হারা আরেক জিনিস। সৌরভ গাঙ্গুলির দলের হারগুলো দ্বিতীয় শ্রেণির। তার ডাগআউট ছেড়ে ওপরতলায়(ধারাভাষ্য দেয়ার জায়গায়) চলে আসা উচিত।''