আইফেল টাওয়ার
২৬ জানুয়ারি ২০১২১৮৮৭ সালের ২৬শে জানুয়ারি আইফেল টাওয়ার চালু হয়েছিল৷ শহরের মানুষ বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, প্যারিসের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেল৷ বিশিষ্ট জনরা গর্জে উঠেছিলেন, ‘এ যেন এক দৈত্য – শহরের লজ্জা'৷ এমনকি কমিটি গড়ে রীতিমত ‘আইফেল টাওয়ার হটাও' আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি সেনাবাহিনী নাৎসিদের অপব্যবহার রুখতে টাওয়ারের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলার কথা ভেবেছিল৷ তারপর হিটলার স্বয়ং আইফেল টাওয়ার ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যদিও তা অমান্য করা হয়েছিল৷
ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সেসময়ে শহরে বসেছিল আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আসর৷ এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে তুলতে গড়ে তোলা হয়েছিল এই টাওয়ার৷ ১৮৮৭ থেকে ১৮৮৯ – দুই বছর লেগেছিল টাওয়ারটি তৈরি করতে৷ এত কাণ্ড করে তৈরি করে চট করে আবার তা খুলে না নিয়ে পরিকল্পনা ছিল, মেলা শেষ হওয়ার ২০ বছর পর সেটি আবার খুলে নেওয়া হবে৷
কিন্তু সেই পরিকল্পনা আর কার্যকর হয় নি৷ কারণ ততদিনে আইফেল টাওয়ারের খ্যাতি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ দলে দলে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন এই ‘আয়রন লেডি'কে দেখতে, যা ততদিনে আইফেল টাওয়ারের ডাকনাম হয়ে গেছে৷ আশেপাশের দোকানে বিক্রি হচ্ছে আইফেল টাওয়ারের ক্ষুদ্র সংস্করণ৷ কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতারা এই টাওয়ার দেখে প্রেরণা পেতে শুরু করেছেন৷ এই সব কাণ্ডকারখানা দেখে প্যারিসের মানুষ অবাক৷ অবাক স্বয়ং গুস্তাভ আইফেল'ও, যিনি এই টাওয়ারের স্থপতি৷ উদ্বোধনের দিন ফরাসি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার সময় তিনি ভাবতেই পারেন নি, যে তাঁর এই সৃষ্টি অমর হয়ে থাকবে৷
মনে রাখতে হবে, সেই যুগে প্রায় ৩০০ মিটার লম্বা এই টাওয়ার ছিল গোটা বিশ্বে মানুষের তৈরি সবচেয়ে উঁচু কোনো সৃষ্টি৷ ১৯৫৭ সালে একটি অ্যান্টেনা বসানোর পর উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ৩২৪ মিটার৷ ৭,৩০০ টন ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয়েছে এই টাওয়ার৷ টেলিগ্রাফ ও রেডিও সংকেত পাঠানোর কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে এই টাওয়ারকে৷ ১৯২১ সালে ফ্রান্সের প্রথম পাবলিক রেডিও সম্প্রচারও শুরু হয়েছে সেখান থেকে৷ এখন সূর্যাস্তের পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট করে আলোর সাজে সেজে ওঠে ‘তুর দিফেল'৷ প্রায় ২০,০০০ বাল্বের সেই আলোর ছটা অপরূপ এক দৃশ্য উপহার দেয়৷ আইফেল টাওয়ারকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনার অভাব নেই৷ পর্যটকদের ঢলও কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক