সবজি চাষের ‘গ্রিনহাউসের' ভিতরে এক রেস্টুরেন্ট৷ আইসল্যান্ডের রাইকহোল্টের ফ্রিডহাইমার রেস্টুরেন্টে সব কিছুই টমেটোকে ঘিরে৷ টমেটোর পোলাও থেকে শুরু করে টমেটোর কেক, এমনকি ‘ব্লাডি মেরি' নামের টমেটো জুস দেওয়া ককটেল – সব টমেটোর!
বিজ্ঞাপন
সবচেয়ে বেশি চাহিদা হল টমেটো সুপের৷ শেফ ইয়ন সিগফুসন নিজে এই টমেটো সুপ তৈরি করে থাকেন৷ এক প্লেট টমেটো সুপের দাম হলো ২০ ইউরো – তবে সাথে রেস্টুরেন্টের নিজস্ব বেক করা পাঁউরুটি পাওয়া যায়৷
সিগফুসন জানালেন, ‘‘এটা হলো আমাদের পঞ্চম বর্ষ৷ শুরু করেছিলাম বছরে হাজার পাঁচেক অতিথি দিয়ে৷ গতবছর এসেছিলেন এক লাখ চল্লিশ হাজার গেস্ট৷ এ-বছর এক লাখ সত্তর হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার খদ্দের আসবেন বলে আশা করছি৷ রেস্টুরেন্টভালোই চলেছে, আমরাও কাজের চাপে হাঁসফাঁস করছি না৷ সঠিক প্রস্তুতিই হলো আসল কথা৷''
ঘোড়ায় চড়া থেকে টমেটোর চাষ
যে ২০ জন কর্মী খাবার পরিবেশন করেন, তাদের মধ্যে আছেন ইয়ানিস শ্ভেংকে৷ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়া এই জার্মান নারী মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে আইসল্যান্ডে এসে বাসা বেঁধেছেন৷ তিনি রেস্টুরেন্টের অতিথিদের হটহাউসগুলো ঘুরিয়ে দেখান ও বুঝিয়ে দেন, আইসল্যান্ডের শীতল আবহাওয়ায় টমেটোর চাষ কীভাবে সম্ভব৷ ইয়ানিস বললেন, ‘‘এখানকার যে আবহাওয়া আর যে পরিবেশ, তার সুযোগ নিতে হবে৷
আইসল্যান্ডের টমেটো রেস্টুরেন্ট
02:38
এখানকার প্রকৃতি, মাটির নীচে তাপ, উষ্ণ প্রস্রবণ, আবার ঠান্ডা জল বা রৌদ্রকিরণ, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, আমরা এ সব ব্যবহার করি৷ এগুলো হলো আইসল্যান্ডের বিশেষত্ব৷''
গ্রিনহাউসগুলিতে কৃত্রিমভাবে যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়া সৃষ্টি করা হয়েছে, তার কল্যাণে দিনে মোট এক টন টমেটো ফসল তোলা সম্ভব – যা কিনা গোটা দ্বীপের টমেটোর চাহিদার পাঁচ ভাগের এক ভাগ৷ ইয়ানিস শোনালেন, ‘‘আমার গাছপালার মধ্যে থাকতে ভালো লাগে৷ আমি ঘোড়া ভালোবাসি, ঘোড়ায় চড়তে ভালোবাসি – আমি যখন প্রথম আইসল্যান্ডে আসি, তখন তার কারণই ছিল ঘোড়ায় চড়া৷ টুরিস্ট হিসেবে এসেছিলাম, তারপর অনেকে বন্ধু হয়ে পড়ে৷ বার বার এখানে বেড়াতে এসেছি, শেষমেষ এই চাকরিটাও পেয়েছি৷''
কাজেরও কোনো অভাব নেই – বিশেষ করে আইসল্যান্ডের ফ্রিডহাইমার টমেটো রেস্টুরেন্টে৷
উডো বিস/এসি
পুষ্টিগুণে ভরা টমেটো জার্মানদের খুবই প্রিয়
ছোট বড়, গোল, লম্বাটে, লাল, হলুদ, সবুজ, কালো বিভিন্ন রং-এর এবং বিভিন্ন সাইজের ও স্বাদের টমেটো কাঁচা এবং রান্না – নানাভাবে জার্মানিতে টমেটোর ব্যবহার হয়ে থাকে৷ জার্মানিতে টমেটোকে বলা হয় ভিটামিনে ভরপুর ‘ভালোবাসার আপেল’৷
ছবি: Fotolia
স্বাদে, গন্ধে অতুলনীয়
টমেটো –কে না চেনে? কিন্তু এর উপকারিতা বা গুণাগুণ সম্পর্কে কি আমরা সবাই জানি? টমেটোর মিষ্টি গন্ধ ভালো লাগে অনেকেরই, খেতেও মজা এবং ভিটামিনে ভরপুর৷ এই সুন্দর সবজির জন্ম পেরু এবং মেক্সিকোতে৷ ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯৮ সালে প্রথম ইউরোপে টমেটো নিয়ে এসেছিলেন৷
ছবি: DW/S.El-Farra
নানা জাতের টমেটো
ছোট বড়, গোল, লম্বাটে, লাল, হলুদ, সবুজ, কালো বিভিন্ন রং-এর এবং বিভিন্ন সাইজের ও স্বাদের টমেটো রয়েছে৷ কাঁচা এবং রান্না – নানাভাবে জার্মানিতে টমেটোর ব্যবহার হয়ে থাকে৷ রয়েছে টমেটোর জুস, কেচাপ, স্যুপ, টমেটো সস৷ আর টমেটো ছাড়া সালাদ, ভাবা যায় না একদমই!
ছবি: picture-alliance/ZB
সবজির শীর্ষে টমেটো
জার্মনিতে টমেটো জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় থেকে৷ আর এখন লাল টকটকে সুন্দর সবজি টমেটো ছাড়া যেন কোনো রান্নাঘরই সাজে না৷ জার্মানিতে জন প্রতি বছরে ২৫ কেজি টমেটো খাওয়া হয়৷ অর্থাৎ, অন্যান্য সবজির মধ্যে জার্মানিতে টমেটোর স্থান একেবারে শীর্ষে রয়েছে৷
ছবি: DW/Karin Jäger
পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি
রসালো আর টকটকে রং-এর এই সবজি শুধু খেতেই মজা নয়, রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিমানও৷ এতে বেশ কয়েকটি ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজন৷ মাত্র ১০০ গ্রাম টমেটোতে আছে ২৫ গ্রাম ভিটামিন ‘সি’ এবং পটাশিয়াম৷ অন্যান্য সবজির তুলনায় টমেটোতে ক্যালোরি খুবই কম৷ যারা স্বাস্থ্য সচেতন এবং হালকা খাবার পছন্দ করেন তাঁদের কাছে খুবই প্রিয় টমেটো৷
ছবি: picture-alliance/ZB
ফ্রেঞ্চফ্রাই-এ টমেটোর কেচাপ
টমেটো কেচাপ সবাই পছন্দ করে, তবে ছোটদের কাছে তা খুবই প্রিয়৷ বিশেষ করে ফ্রেঞ্চফ্রাই-এর সাথে টমেটোর সস বা কেচাপ ছাড়া যেন ভাবাই যায় না৷
ছবি: Fotolia/koi88
ক্যানসার প্রতিরোধে টমেটো
টমেটো সবজি হলেও এর মধ্যে ফলের বিভিন্ন গুণও রয়েছে, যার জন্য রান্না না করেও এটা ফলের মতোও খাওয়া হয়৷ তার সঙ্গে সঙ্গে টমেটোর মধ্যে লাইকোপেন নামে যে উপাদানটি রয়েছে, তা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে৷ ভারি খাবারের পর একটু টমেটোর জুস খেলে তা হজমেও সহায়তা করে৷
ছবি: DW/F.Schmidt
টমেটো নার্ভ শান্ত রাখে
যাদের খাবারে অরুচি তাদের জন্য টমেটো খুবই উপকারী৷ তাছাড়া টমেটো উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও ভূমিকা রাখে৷ এছাড়া, টমেটো নার্ভকে শান্ত রাখে এবং ভালো ঘুম হয়৷ শুধু শরীরের ভেতরে নয়, টমেটোর উপস্থিতি খাবার টেবিলের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং খেতে উৎসাহিত করে৷ ছোট চেরি টমেটো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও খাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সহজেই টমেটো চাষ করা যায়
টমেটো চাষ করা খুবই সহজ, এর জন্য বিশাল বাগানেরও প্রয়োজন নেই৷ যে কেউ বাগান ছাড়াও ছোট্ট বারান্দাতেই সেরকম কোনো যত্ন ছাড়া সহজেই টমেটোর চাষ করতে পারেন৷ এর জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না৷ বীজ বা চাড়া লাগিয়ে জার্মানিতে অনেক বাড়িতেই তাই দেখা যায় টমেটো ঝুলছে৷
ছবি: DW/A. Slavnic
ভিটামিনে ভরপুর ভালোবাসার আপেল
বাগার্র বা পিৎসা যাই হোক না কেন টমেটোর সস বা তাজা টমেটো ছাড়া তার আসল স্বাদ যেন পাওয়া যায় না বা খাওয়াটা ঠিকমতো জমেও ওঠে না৷ আর যা না বললেই নয় যে, টমেটো যে কোনো খাবারকেই আকর্ষণীয় করে তোলে লাল টকটকে অর্থাৎ ভালোবাসার রং-এর জন্য৷ তাই জার্মানিতে টমেটোকে বলা হয় ভিটামিনে ভরপুর ‘ভালোবাসার আপেল’৷
ছবি: Fotolia
টমেটোর স্যুপ ও জুস, কেচাপ
জার্মানদের কাছে টমেটোর স্যুপ বেশ পছন্দের খাবার৷ অস্বস্তিবোধ বা শরীর গুলিয়ে উঠলে টমেটোর স্যুপ বেশ সাহায্য করে৷ তাই বিমানে ভ্রমণকারীদের প্রায়ই টমেটোর স্যুপ বা জুস খেতে দেখা যায়৷ টমেটো জার্মানিতে সারা বছর পাওয়া যায়, তবে গ্রীষ্মকালের টমেটোর স্বাদ একেবারেই আলাদা৷ গন্ধ এবং স্বাদ তাতে যে অনেক বেশি!