রোববার সকালে রেকেনেস অঞ্চলে দ্বিতীয়বার জেগে ওঠে আগ্নেয়গিরি। লাভাস্রোত ঢুকতে শুরু করেছে স্থানীয় বসতি অঞ্চলে।
বিজ্ঞাপন
কয়েকদিনের মধ্যে শ-খানেক ভূমিকম্প হয়েছে আইসল্যান্ডের ওই অঞ্চলে। তারই জেরে জেগে উঠেছে আগ্নেয়গিরি। মাসখানেক আগে একবার অগ্নুৎপাত হয়েছিল ওই আগ্নেয়গিরিটি থেকে। রোববার সকাল থেকে আবার তা জেগে ওঠে।
দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত রেকেনেস পেননিসুলা। সেখানেই আছে এই আগ্নেয়গিরিটি। রোববার সকাল থেকে আকাশ লাল করে লাভা স্রোত বার হচ্ছে ওই আগ্নেয়গিরিটি থেকে। লাভার যে দেওয়াল এতদিন পর্যন্ত সেখানে ছিল, তা ভেঙে ক্রমশ লাভাস্রোত নীচের দিকে নামতে থাকে। পাহাড়ের নিচেই আছে গ্রিনদাভিক শহর। মৎসজীবীদের ওই এলাকায় ঢুকে পড়ে লাভাস্রোত। তার আগেই অবশ্য একরাতের মধ্যে পুরো শহর খালি করে দেয়া হয়েছিল।
আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির দর্শনীয় অগ্ন্যুৎপাত
দক্ষিণ-পশ্চিম আইসল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত রাতের আকাশে চিত্তাকর্ষক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। তেমন কিছু ছবি দেখুন এই ছবিঘরে।
ছবি: Civil Protection of Iceland/REUTERS
আগাম সতর্কতা
কয়েক মাস ধরে একাধিক ভূমিকম্পই জানান দিচ্ছিল, কিছু একটা ঘটতে চলেছে। অবশেষে ১৯ ডিসেম্বর রাতে আইসল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত গ্রিন্ডাভিকের আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। দীর্ঘ ফাটল থেকে নিক্ষিপ্ত ম্যাগমা রাতের আকাশে উজ্জ্বল কমলা বর্ণ ধারণ করে।
ছবি: Marco Di Marco/AP Photo/picture alliance
লাভাপ্রবাহ নিরীক্ষণ
আইসল্যান্ডিক মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট- আইএমও এর তথ্য অনুসারে আগ্নেয়গিরির ফাটলটি শুরুতে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল। ধীরে ধীরে এটি আরো দীর্ঘ হয়েছিল। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ কিউবিক মিটার লাভা উদ্গীরণ হচ্ছে আগ্নেয়গিরি থেকে। এই এলাকায় আগের যেকোনো অগ্ন্যুৎপাতের তুলনায় এটি বহুগুণ বেশি। দেশটির সিভিল ডিফেন্স জনসাধারণকে এই এলাকার আশেপাশে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ছবি: Icelandic Coast Guard/AP/picture alliance
গ্রিন্ডাভিক গ্রামে নজর
লাভার গতিপ্রবাহের দিক বিশ্বেষণ করে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, নিকটবর্তী জনবসতি গ্রিন্ডাভিক গ্রামটির জন্য এখনও কোনো হুমকি দেখা যাচ্ছে না। গ্রামটির বাসিন্দারা আশা করছেন তাদের বাড়িগুলো রেহাই পাবে।
ছবি: Civil Protection of Iceland via REUTERS
ফিরছে স্থিতিশীলতা
এরই মধ্যে অগ্ন্যুৎপাতের গতি হ্রাস পাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মানে এই নয় যে, অগ্ন্যুৎপাত দ্রুতই বন্ধ হয়ে যাবে। বরং আগ্নেয়গিরিটি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে বলে বিশ্লেষণ তাদের।
ছবি: Civil Protection of Iceland/REUTERS
পর্যটকের ভিড় ঠেকাতে উদ্যোগ
অগ্ন্যুৎপাত যাতে পর্যটন আকর্ষণে পরিণত না হয়, সেদিকে নজর রাখছে নাগরিক সুরক্ষা বিভাগ। আইসল্যান্ডের স্থানীয় টেলিভিশন আরইউভি-তে কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। দেশটির পর্যটন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অঞ্চলে অগ্ন্যুৎপাত দেখতে প্রায় ছয় লাখ ৮০ হাজার পর্যটক জড়ো হয়েছিলেন।
ছবি: Kristin Elisabet Gunnarsdottir/AFP
মাটির নীচে লাভার স্রোত!
গ্রিন্ডাভিক রাজধানী রেইকিয়াভিক থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে একটি মাছ ধরার বন্দরও রয়েছে। ১১ নভেম্বরই সেখান থেকে চার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল৷ বিজ্ঞানীরা এর আগে আশঙ্কা করেছিলেন, গ্রামটির নীচে ম্যাগমার একটি টানেল বয়ে চলেছে।
ছবি: Brynjar Gunnarsson/AP/picture alliance
ভূতুড়ে গ্রাম
নভেম্বর থেকে অসংখ্য ভূমিকম্প নাড়া দিয়েছে গ্রামটিকে। কোনো কোনো দিন একশর বেশি ভূমিকম্প হয়েছে এই অঞ্চলে। এর ফলে আশেপাশের রাস্তা এবং ভবনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর থেকে বাসিন্দাদের শুধুমাত্র দিনের নির্দিষ্ট সময়ে নিজেদের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ছবি: Bjorn Steinbek/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
তিন হাজার আটশ মানুষ ওই এলাকায় বসবাস করতেন। তাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত নভেম্বরে একের পর এক ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল ওই এলাকা। তখনো একবার তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে তারা বাড়ি ফিরেছিলেন। এবার আরো একবার তাদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। লাভাস্রোত শহরে ঢুকে যাওয়ার পর আর তারা সেখানে ফিরে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অগ্নুৎপাত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকার পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়।
রোববার সকালে একটি স্থানীয় চ্যানেলের ফুটেজে দেখা গেছে গল গল করে লাভা শহরের বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। একটি বাড়িতে আগুন লেগে গেছে। দাউদাউ করে সেটি জ্বলছে। দেশের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বোঝা সম্ভব নয়। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে সরকার। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, অগ্নুৎপাতের জন্য এখনো কোনো উড়ান বাতিল করা হয়নি।
আইসল্যান্ডের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল ৭টা ৫৭ মিনিটে প্রথম অগ্নুৎপাত শুরু হয় আগ্নেয়গিরিটি থেকে। যেখানে এই ঘটনা ঘটছে সেখান থেকে আইসল্যান্ডের রাজধানী মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে। ওই গোটা অঞ্চলে সতর্কবার্তা জারি হয়েছে।