জার্মানির সবুজ দলের যুগ্ম প্রধান চেম ও্যজদেমির তাঁর ‘আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’ ভিডিও ক্লিপে একটি সূক্ষ্ম বার্তা যোগ করে দিয়েছেন: গঞ্জিকাসেবনকে বৈধ করার ব্যপারে৷
বিজ্ঞাপন
ক্লিপে ও্যজদেমির-এর পাশেই দেখা যাচ্ছে একটি গাঁজা বা ক্যানাবিস গাছ৷ নিউরোডিজেনারেটিভ লু গেরিগ ডিজিজ বা এএলএস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াবার জন্য বিশ্বের অন্যান্য বহু শিষ্ট-বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতো জার্মান পরিবেশবাদীদের তুর্কি বংশোদ্ভূত নেতা, ৪৮ বছর বয়সি ও্যজদেমির মাথায় বরফ জল ঢেলেছেন ঠিকই, বার্লিনের কোনো বাড়ির ছাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে৷ বোধহয় খেয়াল করেননি যে, পাশের একটি টবে রাখা পাতাওলা গাছটি আসলে একটি গাঁজার গাছ৷
আফগানিস্তানে বাড়ছে আফিম চাষ
আফগান চাষীরা আবারো বেশি করে ঝুঁকছেন আফিম চাষের দিকে৷ এর মধ্যেই উৎপাদনের পরিমাণ অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে৷
ছবি: AP
বিশ্ব নেতা
আফিম চাষের দিক থেকে বিশ্বের কোনো দেশই আফগানিস্তানকে টেক্কা দিতে পারবে না – তাই এক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে ‘বিশ্ব নেতা’ বলা যেতে পারে৷ ২০১৩ সালে দেশটিতে ২ লাখ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পপি ফুলের চাষ হয়েছে৷ এই পপি ফুলের বীজ থেকেই তৈরি হয় আফিম এবং হেরোইন৷ বিশ্বের অন্তত ৯০ ভাগ চেতনানাশক মাদক উৎপাদন হয় এখানে৷
ছবি: dapd
বৃহৎ জমি, ব্যাপক উৎপাদন
২০১৩ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে বলা হয় যে, ২০১৩ সালে এর আগের বছর, মানে ২০১২ সালের তুলনায় আফিমের উৎপাদন ৫০ ভাগ বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেনা প্রত্যাহার কি সঠিক সিদ্ধান্ত?
এই হারে আফিমের উৎপাদন বাড়ায় আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে জাতিসংঘকে৷ ধারণা করা হচ্ছে, সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির যে ক্ষতি হবে তা পোষাতে আফিমের উৎপাদন আরো বাড়াতে বাধ্য হবেন চাষীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa
কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য
জাতিসংঘের অনুমান, ২০১৩ সালে আফগানিস্তানে যে পরিমাণ আফিম উৎপাদন হয়েছে তার মূল্য অন্ততপক্ষে ৯৫ কোটি মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
অর্থের মোহ
স্বল্প উৎপাদনে বিপুল লাভের কারণে পপি উৎপাদনে চাষীদের লোভ বাড়ছে৷ এক কেজি আফিম আফগানিস্তানে বিক্রি হয় ১৫০ মার্কিন ডলারে৷ ফলে এটা তাঁদের জন্য একটি লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
হেলমন্দ – সমস্যাগ্রস্ত প্রদেশ
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে গত বছর যে পরিমাণ আফিম উৎপাদন হয়েছে তার অর্ধেক উৎপাদন হয়েছে দেশটির হেলমন্দ প্রদেশে৷ এই প্রদেশটি জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবানের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বৃথা লড়াই
মাদকবিরোধী লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ২০১৩ সালেই দু’দেশের মধ্যে ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি সই হয়েছে৷ আফগান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্তত ২ লাখ পরিবার আফিম চাষের উপর নির্ভরশীল৷
ছবি: AP
মাদক বাণিজ্য তালেবানের জন্য লাভজনক
আফগানিস্তানের এই মাদক বাণিজ্য থেকে একটা বড় লাভের অংশ যায় তালেবানের হাতে৷ কাবুল সরকার এবং আন্তর্জাতিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থের জন্য আফিম চাষীরা বরাবরই তাদের লাভের একটা অংশ তালেবান জঙ্গিদের হাতে তুলে দেয়৷
ছবি: AP
মাদকাসক্ত শিশু
ব্যাপক উৎপাদনের সাথে ব্যাপক আসক্তির ব্যাপারটাও জড়িত৷ আফগানিস্তানে কেবল যে মাদক উৎপাদন হচ্ছে তাই না, স্থানীয়রা এই মাদক বেচা-কেনাও করে৷ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো দেশে ১৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত এবং এদের মধ্যে ৩ লাখই নাকি শিশু৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
না, ও্যজদেমির-কে ‘বেনেফিট অফ ডাউট' দেবার কোনো প্রয়োজন নেই, কেননা পরে তিনি নিজেই মন্তব্য করেছেন: ‘‘ওটা ওখানে ভুল করে রাখা ছিল না'' – অর্থাৎ সজ্ঞানেই রাখা ছিল৷ ও্যজদেমির নাকি ঐ পদ্ধতিতে একটি ‘‘মৃদু রাজনৈতিক বার্তা'' রাখতে চেয়েছিলেন৷ সেই বার্তাটি যে কী, তা-ও কাউকে বলে দিতে হবে না: মারিজুয়ানা, অর্থাৎ গাঁজাকে বৈধ করো৷
ও্যজদেমির তাঁর এই ‘গঞ্জিকা বার্তা'-র কথা স্বীকার করা আগেই আইসবাকেটচ্যালেঞ্জ-এ যাঁরা ক্লিপটি দেখেছেন, সেরকম অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছেন বটে, কিন্তু তাঁদের মধ্যে অর্ধেক ভেবেছেন, ও্যজদেমির জেনেশুনে এমন কাজ করতে পারেন না৷ বাকি অর্ধেক কিন্তু সবুজ রাজনীতিকের মারিজুয়ানা বৈধকরণের প্রতি এই পরোক্ষ সমর্থনে খুবই আনন্দিত৷
তবে ইন্টারনেটে আনন্দ আর ব্যঙ্গের মধ্যে তফাৎটা সবসময় ধরা যায় না৷ তাই একজন টুইট করেছেন: ‘‘ও্যজদেমির যে শুধু নিজের পুরুষত্ব প্রমাণ করেছেন, এমন নয়, তাঁর কাছে ভালো গাঁজার গাছ আছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে৷'' আরেক মহাত্মা নির্দোষভাবে প্রশ্ন করেছেন: বার্লিনে এমন কোনো বারান্দা আছি নাকি, যেখানে গাঁজার চাষ হয় না? আরেক রসিক ক্যানাবিস গাছের সবুজ পাতা দেখে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন: ‘‘সাধে কি ওদের দলের নাম ‘সবুজ'!''
ও্যজদেমির গতকাল ‘বিল্ড' ট্যাবলয়েডকে বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, ওটা গাঁজার গাছ৷'' মারিজুয়ানা বৈধকরণ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য: ‘‘আমরা সবুজরা ব্যক্তিস্বাধীনতার ভক্ত৷ কেউ গাঁজা খেতে পারবে কিনা এবং সেই সংক্রান্ত ঝুঁকি নিতে পারে কিনা, একটি মুক্ত সমাজে সেই সিদ্ধান্ত নাগরিকরা নিজেরাই নেবেন৷''
ভালো কথা, কিন্তু পুলিশ যদি এবার বেআইনিভাবে গাঁজা চাষের জন্য ও্যজদেমির-কেই ধরে?