1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আউশভিৎসের সাক্ষীর জবানবন্দি

Sanjiv Burman২৭ জানুয়ারি ২০১০

৯২ বছর বয়স্ক প্রাক্তন বন্দি ভিলহেল্ম ব্রাসে আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে আউশভিৎসে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনান৷

৯২ বছর বয়স্ক ভিলহেল্ম ব্রাসেছবি: AP

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

আউশভিৎস বন্দি শিবির থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন অল্প সংখ্যক কিছু মানুষ৷ তাঁদের মধ্যে আজও জীবিত রয়েছেন কয়েক জন৷ তাঁদের কণ্ঠে ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কাহিনী সেদিনের সেই কালো ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে৷ এমনই একজন পোল্যান্ডের নাগরিক ভিলহেল্ম ব্রাসে৷ এখন তাঁর বয়স ৯২৷ ফোটোগ্রাফির শখই তাঁর প্রাণ বাঁচিয়ে দেয়৷ নাৎসিরা তাকে দিয়ে ক্যাম্পের ছবি তোলাতো৷ কুখ্যাত নাৎসি ডাক্তার ইয়োজেফ মেঙেলে বন্দিদের উপর যে পাশবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাত, ব্রাসের দায়িত্ব ছিল, তার ছবি তুলে রাখা৷ প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে তাঁকে এই জঘন্য কাজ করতে হয়েছিল৷ আজ তিনি আবার আউশভিৎসে ফিরে এসে তরুণ প্রজন্মের কাছে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছেন৷

৯২ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ৷ তাঁর সামনে ১৬-১৭ বছর বয়স্ক একদল জার্মান কিশোর-কিশোরী৷ তাঁদের জীবনকাহিনীর মধ্যে বিস্তর ফারাক৷ আউশভিৎস থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ভিলহেল্ম ব্রাসে বহু দশক ধরে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা মন খুলে বলতে পারেন নি৷ কিন্তু গত প্রায় ৩ বছর ধরে তিনি বছরে কয়েকবার নিয়মিত জার্মান কিশোর-কিশোরীদের সামনে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কাহিনী শোনান৷ ৩৪৪৪ – বন্দি হিসেবে এই ছিল তাঁর ক্রমিক সংখ্যা৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘সেটা ছিল ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে একদিন৷ সন্ধ্যায় দেখলাম দুই দল যুদ্ধবন্দিদের ক্যাম্পে আনা হয়েছে৷ তারা খোলা আকাশের নিচে জমাট বরফের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে – সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়৷ একের পর এক জন সেই শীত সহ্য করতে না পেরে কাঁপতে কাঁপতে মাটির উপর লুটিয়ে পড়ছে, মারা যাচ্ছে৷''

দুই প্রজন্মের সেতুবন্ধ

দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে নিঃশব্দে ব্রাসে'র বর্ণনা শুনছে৷ কারো কণ্ঠে একটা শব্দ নেই৷ খ্রীষ্টান যাজক মানফ্রেড ডেসেলেয়ার মনে করেন, তরুণ এই জার্মানদের জন্য এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত জরুরি – যেমনটা জরুরি আউশভিৎস শিবিরে এককালে বন্দি থাকা ভিলহেল্ম ব্রাসের জন্য৷ ডেসেলেয়ার বললেন, ‘‘প্রথমত, মানুষ হিসেবে আজ তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা পাচ্ছেন৷ অথচ জার্মানি সম্পর্কে তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, মানুষ হিসেবে তাঁদের কোন মর্যাদা থাকতে পারে না৷ প্রাক্তন বন্দিদের জন্য আরও একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তাঁরাই ঐ শিবির থেকে বেঁচে ফিরে এসেছেন৷ তাঁদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সেখানে থেকে গেছেন৷ সেই সব হারিয়ে যাওয়া মানুষদের প্রতি আনুগত্য বোধ থেকে আজ তাঁরা তাঁদের কথা জানানোর দায়িত্ব পালন করছেন৷''

আউশভিৎস সংলগ্ন শহরের পোলিশ নাম অশফিয়েনচিম৷ সেখানে সংলাপ ও প্রার্থনা কেন্দ্রে প্রায় ২০ বছর ধরে যাজক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন মানফ্রেড ডেসেলেয়ার৷ সেখানেও প্রাক্তন বন্দিদের সঙ্গে তরুণ জার্মানদের সাক্ষাৎ ঘটে৷ বন্দিরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, তবে শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়৷ ডেসেলেয়ার জানালেন, যে বন্দিরা প্রায়ই জার্মান তরুণ তরুণীদের বলে থাকেন, ‘‘আমরা চাই না, তোমাদের মনে অপরাধ বোধ জেগে উঠুক৷ তোমরা তো আর এই কাজ করো নি৷ তবে কী ঘটেছিল, সেটা তোমাদের জানা দরকার৷ তোমাদের এটাও জানা উচিত, কারা এই কাজ করেছিল এবং তোমাদের আরও বোঝা উচিত, যে ভবিষ্যতে যাতে এমন কাণ্ড কখনো না ঘটতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তোমাদের কাঁধে কত বড় দায়িত্ব রয়েছে৷''

ব্যাপক আগ্রহ

গত বছর প্রায় প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ আউশভিৎস বির্কেনাউ স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেছেন৷ তাদের মধ্যে ৮ লক্ষেরও বেশী তরুণ-তরুণীও ছিল৷ সংখ্যার বিচারে পোল্যান্ড, ব্রিটেন, ইটালি ও ইসরায়েলের পরেই জার্মানির স্থান৷ প্রায় ৫৮,০০০ জার্মান আউশভিৎস ঘুরে দেখেছেন৷ ডেসেলেয়ার মনে করেন, জার্মানি থেকে যে এত মানুষ এখানে আসেন, সেটা অত্যন্ত ভালো কথা৷ তাঁর মতে, পোল্যান্ডের মানুষের সঙ্গে সংলাপের আরও সুযোগ খোঁজা উচিত – শুধু ইতিহাসের যাঁরা সাক্ষী ছিলেন তারা নয়, বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গেও৷ ডেসেলেয়ারের বিশ্বাস, এমন সাক্ষাতই পারস্পরিক বোঝাপড়ার মূল চাবিকাঠি৷ তাঁর মতে, ‘‘পোল্যান্ডের অনেক মানুষের মনের গভীরে আজও এক আতঙ্ক বাসা বেঁধে রয়েছে৷ অনেকে মনে করেন, জার্মানরা আজও বদলায় নি৷ সেকারণেই পরস্পরের মধ্যে আরও সাক্ষাৎ হওয়া প্রয়োজন৷ জার্মানির তরফ থেকে লজ্জার বোধও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷''

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ