আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে কাটছাঁট
১৯ ডিসেম্বর ২০২২তবে বরাবরের মতো বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা আমন্ত্রণ পাবেন৷
এসব তথ্য জানা গেছে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র থেকে৷ দলের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে অভ্যর্থনা উপকমিটি একাধিক বৈঠক করেছে৷ এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম৷ সদস্যসচিব হচ্ছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি৷
২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ দলটির সূত্র জানিয়েছে, এতে সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি হিসেবে প্রায় ১৫ হাজার নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে৷ এর বাইরে রাজনীতিক, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং বিদেশি কূটনীতিকদের বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হবে৷ সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ এ ছাড়া আমন্ত্রিতদের সমপরিমাণ উৎসুক নেতা-কর্মীও কাউন্সিলে আসবেন বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা৷
অভ্যর্থনা উপকমিটির সদস্যসচিব দীপু মনি প্রথম আলোকে বলেন, দূতাবাসের কূটনীতিক ছাড়া বিদেশ থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না৷ বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে৷ ইতিমধ্যে দাওয়াতপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান এবং ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে৷
আওয়ামীলীগের জাতীয় সম্মেলন বেশিভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে, এবার খরচ কমাতে একদিন করা হচ্ছে৷ গত জাতীয় সম্মেলনেও বিদেশি অতিথিদের দাওয়াত দেয়নি আওয়ামী লীগ৷ ২০২০ ও ২০২১ সালে ‘মুজিববর্ষ' উপলক্ষে এক বছর ধরে বিদেশি অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া হবে—এই বিবেচনায় তখন জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি৷ ২০১৬ সালে ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১১টি দেশের প্রায় ৫৫ জন অতিথি আওয়ামী লীগের সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ এবার বড় দিনের কারণে দূতাবাসের কূটনীতিকদের অধিকাংশ ছুটিতে থাকবেন৷ ফলে তাঁদের অংশগ্রহণও কমে যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা৷
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে৷ এবার তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে৷ ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর৷ সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা৷ এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি৷
এবার আলোকসজ্জা একেবারেই করা হবে না বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন৷ আগের মতো বিশাল তোরণও হবে না৷ সাদামাটা কিছু তোরণ হতে পারে৷ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে মঞ্চটিতে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে, সেখানেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে৷ তবে এই মঞ্চে নৌকার আদল দেওয়া হবে৷ পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন লাগানো হবে৷
২০১৯ সালে সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছে গাছে মরিচবাতি লাগানো হয়েছিল৷ মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে টানানো হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি৷ গতবার মূল মঞ্চ তৈরি হয়েছিল পদ্মা সেতুর আদলে৷ যা ছিল ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত৷
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বিবেচনা করে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে চাকচিক্য বাদ দিতে বলেছেন ফলে আলোকসজ্জা, বাহুল্য থাকবে না৷
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের৷ এ পর্যন্ত দলটির ২১টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সর্বশেষ ২০১৯ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পুনরায় নির্বাচিত হন৷ এবারও শেখ হাসিনাই সভাপতি থাকছেন—এই ব্যাপারে দলের নেতারা নিশ্চিত৷ সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে কি না, দলের ভেতরে সেটাই বেশি আলোচিত হচ্ছে৷
এনএস/কেএম (প্রথম আলো)