সরকার পতনের সর্বাত্মক কর্মসূচিতে যাচেছ বিএনপি৷ সোমবার‘ যুগপৎ আন্দোলনের’ কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি৷ মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে তাদের আন্দোলন৷ অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শুরু করছে নির্বাচনী জনসংযোগ৷
বিজ্ঞাপন
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে৷ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷ তবে তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে চায়৷ কেননা তফসিল ঘোষণার পর সবাই নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে তখন আন্দোলন জমানো কঠিন হয়ে পড়বে৷ অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সারাদেশে নির্বাচনী জনসংযোগ শুরু করতে যাচ্ছে যা, মঙ্গলবার থেকেই শুরু হতে পারে৷ তবে সোমবার বিএনপি কী কর্মসূচি ঘোষণা করে সেটা দেখে তারা নতুন কর্মসূচিও দেবে বলে জানা গেছে৷
বিএনপির ‘যুগপৎ’ আন্দোলন পরিকল্পনা
সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি৷ আর এই কর্মসূচি হতে পারে প্রথম দফায় ১৫ দিনের জন্য৷ মঙ্গলবার শুরু হয়ে তা চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত৷
রোববার তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হয়েছে বিএনপির৷ নতুন কর্মসূচিতে বড় চার-পাঁচটি বড় সমাবেশ ছাড়াও থাকবে রোডমার্চ৷ তারা এই ১৫ দিনে কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় চার-পাঁচটি বড় সমাবেশ করতে চায়৷ আর ঢাকার বাইরে সব বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ কর্মসূচি দিতে পারে৷ এই ১৫দিনে প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারাদেশে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করবে দলটি৷ মঙ্গলবার ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জে বড় একটি সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন এই কর্মসূচি শুরু হতে পারে৷
‘সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তুলব’
এবার সব কর্মসূচিই বিএনপি এবং তাদের যুগপৎ আন্দোলনে শরিক ৩৭টি দল একযোগে পালন কববে৷ তাই সোমবার যে কর্মর্সূচি ঘোষণা করা হবে তা ‘যুগপৎ আন্দোলনের' কর্মসূচি হিসেবেই ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে৷
বিএনপির আন্দোলনের শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের (১১দল) সমন্বয়কারী এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘‘১৫ দিনের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে আমাদের সঙ্গে বিএনপির প্রাথমিক আলাপ আলোচনা হয়েছে৷ এই কর্মসূচি হবে বড় বড় জনসভা ও রোডমার্চ৷ ঢাকা, ঢাকার আশেপাশে ও বড় বড় শহরে এটা হবে৷ এই ১৫ দিনের কর্মসূচির মধ্যে যদি শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেন তাহলে তারপর থেকে শুরু হবে টানা অবরোধ, ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘট৷ তবে হরতালের চিন্তা আমরা এখনো করছি না৷’’
পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা অক্টোবরেই আমরা আন্দোলনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান৷ বলেন, ‘‘কারণ নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে৷ তার আগেই আমাদের দাবি আদায় করতে হবে৷ আর এখন থেকে সব কর্মসূচি হবে যুগপৎ৷’’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি৷ এই আন্দোলনে নতুন নতুন কর্মসূচি থাকবে৷ গ্রাম, শহরের সব জায়গায় সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তুলব৷ গণ-আন্দোলন গড়ে তুলব৷ আমাদের দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ এই দাবি আদায়ের জন্য আমাদের যা করণীয় তা করবো৷’’
তার কথা, ‘‘এই আন্দোলনে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরেও আরো অনেক দল যোগ দিচ্ছে৷ সরকারের সঙ্গে দুই-চারটি সুবিধাভোগী দল ছাড়া আর কেউ নেই৷ সরকারের লজ্জা থাকলে এখনই তারা পদত্যাগ করত৷ আর আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে সব সময়ই কথা হচ্ছে৷ এবার সব কর্মসূচি যুৎপৎভাবে পালন করা হবে৷’’
‘যারা প্রার্থী হতে চান তারা এখন নির্বাচনী জনসংযোগে আছেন’
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি
এদিকে শাসক দল আওয়ামী লীগ সারাদেশে নির্বাচনী জনসংযোগ শুরু করতে যাচ্ছে৷ সেটা মঙ্গলবার থেকেই শুরু হতে পারে৷ সোমবার বিএনপি কী কর্মসূচি ঘোষণা করে সেটা দেখে তারা নতুন কর্মসূচিও দেবে৷
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘যারা এমপি, যারা প্রার্থী হতে চান আগামী নির্বাচনে তারা সবাই এখন নির্বাচনী জনসংযোগে আছেন৷ এটা আরো বাড়ানো হচ্ছে৷ সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচি আরো বাড়ানো হচ্ছে৷’’
পাল্টা কর্মসূচি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শান্তি সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি চলছে৷ ঢাকা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আমাদের প্রতিদিনই কর্মসূচি আছে৷ নির্বাচন পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে৷ তাই আমাদের পাল্টা কর্মসূচি দিতে হবে কেন? আমাদের নিজেদেরই তো অনেক কর্মসূচি আছে৷’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি যদি জনসভা ও রোডমার্চের নামে অতীতের মতো নাশকতা করে৷ গান পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, তাহলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবে৷’’
৯০ দশক থেকে বাংলাদেশের আন্দোলনের ছবি
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এবং এই ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদ ছাড়াও বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো৷ সেসব আন্দোলনের কিছু ছবি থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: SHAFIQ ALAM/AFP/Getty Images
১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩
ঢাকার মিরপুরে উপ-নির্বাচনের ফলের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের সময় গুলিস্তানে এক পথশিশুকে পুলিশের কাছে কৃপা চাইতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: BANGLADESH-STRIKE/AFP/Getty Images
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫
খালেদা জিয়ার সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে ডাকা ৩২ ঘণ্টার হরতাল পালন চলাকালে ঢাকার একদল পথশিশুকে বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: MUFTY MUNIR/AFP/Getty Images
৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫
খালেদা জিয়ার সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে ডাকা হরতাল শেষে আয়োজিত বিক্ষোভে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন শেখ হাসিনা৷ সেখান থেকে তিনি নতুন বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন৷
ছবি: MUFTY MUNIR/AFP/Getty Images
১১ নভেম্বর, ১৯৯৫
খালেদা জিয়ার সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে ডাকা ছয় দিনের হরতালের প্রথম দিনের ছবিতে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: MUFTY MUNIR/AFP/Getty Images
১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৬
নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের দিকে যাত্রা শুরুর আগে বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: MUFTY MUNIR/AFP/Getty Images
১১ মে, ১৯৯৯
সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালনের পুরানা পল্টন এলাকায় বিএনপি নেতাদের মারতে উদ্যোত এক পুলিশ সদস্য৷
ছবি: AFP/Getty Images
২৫ জুলাই, ১৯৯৯
শেখ হাসিনা সরকারের ‘দুঃশাসন, দুর্নীতি এবং পরাধীন পররাষ্ট্রনীতির’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে ‘রোড মার্চ’ করেছিল বিএনপি৷ তার আগে ২৫ জুলাই ঢাকার আজমপুরে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া৷
ছবি: MUFTY MUNIR/AFP/Getty Images
২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগে দাবিতে ঢাকার এক সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করছেন খালেদা জিয়া৷
ছবি: AFP/Getty Images
১২ এপ্রিল, ২০০০
আগাম নির্বাচনের দাবিতে ২০০০ সালের ১৩ এপ্রিল সারা দেশে ১২ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট৷ তার সমর্থনে ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করেন বিএনপি নেতারা৷
ছবি: MUFTY MUNIR/AFP/Getty Images
২ এপ্রিল, ২০০১
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্য়াগ ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির ডাকা তিনব্যাপী হরতালের দ্বিতীয় দিনের দৃশ্য৷
ছবি: AFP/Getty Images
৯ জানুয়ারি, ২০০২
বিভিন্ন সেবার মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছিল৷ ছবিতে পুলিশকে আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিমকে মারতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
২৪ মার্চ, ২০০২
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রদর্শন সংক্রান্ত আইন বাতিলের প্রতিবাদে ডাকা অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা৷ ছবিতে তাকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সরকারের পদত্যাগ ও আগাম নির্বাচন আয়োজনের দাবি না মানায় আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের সময় রাস্তায় পড়ে যান সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
৭ এপ্রিল, ২০০৪
এপ্রিলের মধ্যে জোট সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আওয়ামী লীগের সাংসদরা ব্যানার নিয়ে সংসদের সামনে বসানো ব্যারিকেড পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ দুইদিনব্যাপী হরতালের প্রথম দিনের চিত্র ছিল এটি৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
২৬ এপ্রিল, ২০০৪
৩০ এপ্রিলের মধ্যে খালেদা জিয়া সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ডাকা তিনদিনের অবস্থান কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
২৪ আগস্ট, ২০০৪
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ডাকা দুই দিনের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সময় তোলা এই ছবিতে আওয়ামী লিগের নারী কর্মীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images
২৯ অক্টোবর, ২০০৬
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিতে না পারেন ২০০৬ সালের অক্টোবরে আন্দোলন করছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট৷ ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টন-বায়তুল মোকাররম এলাকায় জামায়াতে ইসলামী এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়৷ ঐদিন ছিল বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন৷ পরের দিনের পত্রিকায় সেই সংঘর্ষের ছবি ছাপা হয়৷
ছবি: SHAFIQ ALAM/AFP/Getty Images
৬ জুলাই, ২০১১
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা হরতালের সময় সংসদ ভবনের সামনে ধস্তাধস্তির পর পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হন বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক৷
ছবি: Abdullah Mohammad/AFP
৭ ডিসেম্বর, ২০২২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির ডাকা সমাবেশের আগে দলীয় কার্যালয়ে সমবেত হওয়া কর্মীদের উপর পুুলিশের হামলা৷ সেদিন পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে৷ এতে একজন নিহত ও অনেকে আহত হন৷
ছবি: Jibon Ahmed/AFP/Getty Images
২৮ জুলাই, ২০২৩
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
২৯ জুলাই, ২০২৩
বিএনপির অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি চলার সময় ঢাকার ছবি৷