আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকে নজর
৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ‘আওয়ামী লীগের ভোটের' দিকে নজর রাখছে সব রাজনৈতিক দল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে সেই ভোট দাবি করছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের কখনো ভাই, কখনো বন্ধু সম্বোধন করে ভোট চাইছেন জামায়াত নেতারা।
কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের স্বজন বা গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতাদের ছাড়িয়ে নিতেও দেখা গেছে জামায়াতকে। তবে আওয়ামী লীগের এখন আর ভোট ব্যাংক নেই বলে দাবি করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
অজ্ঞাতস্থান থেকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আরাফাত এ রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "ফেব্রুয়ারিতে যে ভোট হতে যাচ্ছে, তাতে দেশের মানুষের আগ্রহ নেই। সেই প্রবাদের মতো ‘আমরা আর মামুরা' - এমন ভোট হতে যাচ্ছে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাতীয় পার্টি, ১৪ দলীয় জোটের কাউকেই তো তারা ভোট করতে দিচ্ছে না। ফলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় যে জোট ছিল, তারাই ভোট করছে। ফলে মানুষ ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত। এই কারণে তাদের আগ্রহ নেই। তারা ভোট দিতে যাবেন না। দল হিসেবে আমরা জনগনকে ভোট দিতে না যেতে বলবো। অন্যদিকে এই সরকার যে গণভোট করতে যাচ্ছে সেটাও অবৈধ। এই সরকারের ম্যান্ডেটই নেই। কিভাবে গণভোট হতে পারে সে ব্যাপারে সংবিধানে পরিস্কার উল্লেখ আছে।”
ভোটের হিসাব-নিকাশ
বাংলাদেশে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনকে সকল দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। ওই চারটি নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পেয়েছে ৩০.০৮ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৭.৪৪ শতাংশ, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০.১৩ শতাংশ ও ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮.০৪ শতাংশ। এরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন হলেও সেগুলো ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
অন্যদিকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভোট পেয়েছে ৩০.৮১ শতাংশ, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ৩৩.৬১ শতাংশ, ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪০.৯৭ শতাংশ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পেয়েছে ৩৩. ২০ শতাংশ। আর বিগত নির্বাচনে ভোটের পরিসংখ্যানে জামায়াতের ভোট কমেছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত ভোট পেয়েছে ১২.১৩ শতাংশ, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ৮.৬১ শতাংশ, ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪.২৮ শতাংশ এবং ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪.৬০ শতাংশ ভোট পায় দলটি।
বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের গত ১৬ বছরের দুঃশাসনে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। এর ফলাফল গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের সাধারণ জনগণও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিল। তাই আওয়ামী লীগের আগের ভোটের হারের সঙ্গে বর্তমানকে অবস্থা মেলানো যাবে না বলে মনে করেন তারা। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ভোট সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হতে পারে - এমন আলোচনা আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা যা বলছেন
ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের তিনজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুইজন থানা পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তারা সকলেই বর্তমানে বাড়ি-ঘর ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে রয়েছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলার এক নেতা বলেন, "আমার ইউনিয়নে হিন্দু ভোট আছে ৩১ শতাংশ। সব বাদ দিয়েও ৬০ শতাংশ ভোট আছে আওয়ামী লীগের। এদের অনেকের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় আমরাও তাদের মিলেমিলে থাকতে বলেছি। এখন যদি ভোট হয় এই ৬০ শতাংশ ভোটারের মধ্যে অন্তত ৩৫ শতাংশ ভোটারকে ভোট দিতে যেতে হবে। কারণ, ভোট কেন্দ্রে না গেলে তাদের পক্ষে এলাকায় থাকা মুশকিল হয়ে যাবে। এখন যারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন, তাদের নিরাপত্তা যিনি দিতে পারবেন তাকেই তারা ভোট দেবেন। কিন্তু ২০-২৫ শতাংশ কট্টর সমর্থক কেন্দ্রে যাবেন না।”
রাজধানীর পার্শ্ববর্তী একটি জেলার থানা পর্যায়ের একজন নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমার উপজেলায় পদধারী কোনো নেতা এলাকায় নেই। তারা সবাই পলাতক। কর্মীদের অনেকে বাড়িতে আছেন। কারও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল হয়ে গেছে। ওদের সঙ্গে মিলে মিশে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান ফেরত পেলেও নিয়মিত ‘মাসোহারা' দিয়ে তারা টিকে আছেন। এই লোকগুলোকে তো ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে। কারণ, ভোট দিতে না গেলে আমরা তো তাদের প্রোটেকশন দিতে পারছি না। ফলে, আমাদের ভোটারদের একটা অংশ আসলে ভোট দিতে যাবেন। এই মুহুর্তে এই কারণে এলাকায় তাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন। সর্বোপরি সবারই তো পরিবার আছে।”
আওয়ামী লীগের ভোট নিয়ে এনসিপির ভাবনা
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির পক্ষ থেকে নৌকার সমর্থক এবং ভোটব্যাংক নিয়ে আলাদা মূল্যায়ন রয়েছে। দলটির মূখ্য যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আওয়ামী লীগের এখন আর সেভাবে ‘ভোটব্যাংক' নেই। আওয়ামী ভোটব্যাংক নিয়ে এনসিপি পৃথক কোনো চিন্তা-ভাবনা করছে না। আওয়ামী লীগের সমর্থক তারা ভোট দিতে এসে যদি আমাদের প্রার্থীকে যোগ্য মনে করেন, তাহলে আমাদের ভোট দেবে। এছাড়া অভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের- বিশেষ করে ছাত্র-তরুণদের মধ্যে একটা বড় ট্রান্সফরমেশন হয়েছে বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি।”
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির আরেক নেতা বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ছাত্রলীগ করতো, তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অমান্য করে সরাসরি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। সেই জায়গা থেকে ভোটারদের মধ্যেও একটা ট্রান্সফরমেশন ঘটবে। দলের জায়গা থেকে আমাদের যে সেন্ট্রাল নেতৃত্ব আছে, সেখানে সাবেক ছাত্রলীগ বলেন, সাবেক ছাত্র শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ কিংবা ছাত্র ইউনিয়ন- এই যে একটা কম্বিনেশন আমাদের এখানে হয়েছে, সে জায়গা থেকে আমাদের এখানে অধিকাংশ সাবেক সংগঠনেরই মূল নেতৃত্ব আছে। ফলশ্রুতিতে এই নেতৃত্বের মূল্যায়ন বা তাদের কাজের মাধ্যমে ভোটাররা প্রভাবিত হবেন।”
আওয়ামী লীগের ভোটে বিশেষ নজর বিএনপির
বাংলাদেশে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভোটকে কাছে টানার চেষ্টা করছে দলটি।
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ নৌকার ভোট টানতে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। রুহুল কবীর রিজভী এক বক্তৃতায় বলেছেন, "আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিরা বিএনপির সদস্য হতে পারবেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে অনেক আগেই দূরে সরে গেছেন। ক্লিন ইমেজ রয়েছে যাদের। এ ছাড়া শ্রমিক, কৃষক, ব্যাংকার, অর্থাৎ, এলাকায় সজ্জন হিসেবে পরিচিত সবাই আমাদের নতুন সদস্য হতে পারবেন, যদি আমাদের দলের আদর্শ ধারণ করেন।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ইমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা কোনো পার্টিকুলার ধর্ম বা গোষ্ঠীর জন্য রাজনীতি করছি না। আমরা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য। কোনো গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে তো কোনো রাজনীতি হতে পারে না। এটা তো ডিভিশন হবে। আমরা তো বলছি রাজনীতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে চাই। ফলে আমরা বলছি, বিএনপি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে সবার জন্য একটা বসবাসের পরিবেশ তৈরি হবে।”
সম্প্রতি বিএনপির শীর্ষ নেতার ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে মাগুরা-২ নির্বাচনি এলাকায় শালিখা উপজেলার সকল হিন্দুদের আমন্ত্রণ করে খাইয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী কাজী সালিমুল হক কামাল। ওই অনুষ্ঠানে ১০ হাজারের বেশি হিন্দু জনগোষ্ঠীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেছেন থানা যুবদল নেতা ইকরাম হোসেন তুষার। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "এখানে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসেছেন। কাউকে জোর করে আনা হয়নি। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আমাদের এখানে কোনো সংঘাত হয়নি, কারও বাড়ি-ঘর বা জমিদখলও হয়নি। এখানে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানে রয়েছে।”
আওয়ামী লীগের ভোট পেতে কৌশলী জামায়াত
সম্প্রতি এক নির্বাচনি জনসভায় আওয়ামী লীগের সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবকে ভাই সম্বোধন করে দলটির ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে দেখা গেছে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে৷ ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এবার তো মুজিব ভাই নেই৷ তাহলে আপনাদের আগের অনুভূতিতে তো দুই নম্বরে আমি আছি৷ তাহলে ইনশাআল্লাহ, আপনারা তো আমাকে ভোট দেবেন৷ আবার যদি মুজিব সাহেব কখনও আসেন, তাহলে আমার সঙ্গে কথা বলে নিয়েন, কোনো অসুবিধা নেই৷''
তবে জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মনে করেন, "বাস্তবে নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের ভোট ৫ শতাংশের বেশি নয়৷ ফলে এই ভোট তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না৷''
গত ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিমকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয় লোকজন৷ কিছুক্ষণ পরই তাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য লোকজন নিয়ে থানায় হাজির হন জামায়াতে ইসলামীর নেতা জাহাঙ্গীর আলম৷ গত জানুয়ারিতে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে শফিকুল ইসলাম সিকদার নামে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানা পুলিশ৷ ওই নেতাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা৷ জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুর সদর উপজেলার নায়েবে আমির আব্দুল বারী তখন সাংবাদিকদের বলেন, "শফিকুল আমাদের সংগঠনের লোক৷''
আগামী সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক কর্নেল (অব.) অধ্যাপক ডা. জিহাদ খান৷ ডা. জিহাদ খান জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরা সদস্য৷ বর্তমানে তিনি ইবনে সিনা হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে কর্মরত৷ এভাবে অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতার আত্মীয় স্বজনেরা অন্য দলের হলেও আওয়ামী লীগের ভোট টানার চেষ্টা করছে৷
টার্গেট হিন্দু ভোটার?
ঝিনাইদহের স্থানীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নভেম্বরের শুরুর দিকে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার উমেদপুর বাজারের পাশে খোলা একটা স্থানে কয়েকটি বেঞ্চ বসানো। গোল হয়ে সেখানে বসেছেন দশ থেকে ১২ জন ব্যক্তি, যাদের সবাই সনাতন ধর্মের অনুসারী৷ তাদের মধ্যে দলীয় লিফলেট বিতরণ করছিলেন স্থানীয় জামায়াতের একজন নেতা৷ জিজ্ঞেস করতেই জানালেন সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে এটি তাদের একটি ‘দলীয় সভা'৷ সভায় যারা এসেছেন তাদের সকলেই জামায়াতে ইসলামীর ‘সমর্থক'৷’’
শুধু ঝিনাইদহ নয়, অনেক এলাকায় হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে জামায়াতের ‘সনাতনী কমিটি' গঠন করা হয়েছে৷ কিছুদিন আগে খুলনার ডুমুরিয়ায় শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে জামায়াতের একটি ‘হিন্দু সম্মেলন' অনুষ্ঠিত হয়৷ খুলনা-১ আসনে জামায়াত কৃষ্ণ নন্দীকে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে৷ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কারো কারো এরকম জামায়াতে যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই ‘নিরাপত্তার আশ্বাসের' কথা জানিয়েছেন৷
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার প্রায় ১০ শতাংশ৷ দেশটির বিভিন্ন আসনে নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে সংখ্যালঘু ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়কালে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভোট কোন দিকে যাবে সেটা একটা বিষয়৷ অনেকেই মনে করেন, সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিএনপির অবস্থান থাকলেও ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে তেমন অবস্থান নেই৷
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভোট কাকে দেবো তার চেয়ে বড় কথা নির্বাচন আসলেই তো আমরা আতঙ্কে থাকি। আবার মনে হয় নির্যাতন শুরু হবে! আমরা যদি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাই তাহলে ভোট দিতেই যাব না৷ কারণ, আমরা ভোট দিলেও মার খাই, না দিলেও মার খাই। আমরা চাই, একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। ফলে আমাদের নীতির সঙ্গে যাদের যায়, তাদের আমরা ভোট দিই৷ এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কোনো কথাই শোনেনি। কোথাও আমাদের রাখা হয়নি। ফলে ভোট আমাদের কাছে আতঙ্ক৷''
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ভোট পাগল জাতি৷ ভোট এলেই আমরা ভোট দিতে চাই৷ যদিও সুযোগ না থাকায় অনেক সময় ভোট দিতে যেতে পারিনি৷ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলেও তাদের সমর্থকেরা এবার ভোট কেন্দ্রে আসার সম্ভাবনা রয়েছে৷ প্রথমত তারা যদি কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পায় তাহলে কিন্তু তারা ভোট কেন্দ্রে যাবে৷ আবার জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনে থাকে তাহলে বিএনপি-জামায়াতের বাইরে তারা একটা বিশেষ সুবিধা পেতে পারে৷ যদি কোনো প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে ভোটারদের আর্কষণ করতে পারেন, তাহলে আওয়ামী লীগের ভোট পেতে পারেন৷''
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা একেবারে কট্টর তারা হয়ত ভোট দিতে যাবেন না৷ যারা আওয়ামী লীগকে মন্দের ভালো মনে করে ভোট দেয় তারা হয়ত অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে ভোট দেবে। সেক্ষেত্রে তারা ব্যক্তি দেখে ভোট দিতে পারেন৷''
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা কাকে ভোট দেবে সেটি নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর৷ প্রথমত, দলটির আদর্শের কাছাকাছি যদি কোনো প্রার্থী থাকে তাদের ভোট দেবে৷ দ্বিতীয়ত, ভোটারদের সঙ্গে প্রার্থীর সম্পর্কের ওপর৷ আবার তারা ভোট দিতে না পারেন৷ এখনই এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা করা কঠিন৷''