একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনে দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে৷ কিন্তু বিএনপি কার্যালয়ে ছিল না কোনো নির্বাচনি তৎপরতা৷
ছবি: bdnews24.com
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন৷ ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ নভেম্বর, বাছাইয়ের তারিখ ২২ নভেম্বর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ নভেম্বর৷ ভোট গ্রহণ ২৩ ডিসেম্বর৷
শুক্রবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রির ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিল আওয়ামী লীগ৷ সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফরম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়৷ একটি ফরম কেনা হয়েছে শেখ হাসিনার নিজের আসন গোপালগঞ্জ -৩ (টুঙ্গীপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনের জন্য৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফরমটি কিনে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লা’র কাছে হস্তান্তর করেন৷ এ ছাড়া তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর জন্যও একটি ফরম সংগ্রহ করেন৷ ওবায়দুল কাদেরের জন্য নোয়াখালী-৫ আসনের একটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ৷
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ বার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সে সময় ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়৷ আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫টি৷ ঐ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ৭ এপ্রিল, তেজগাঁওয়ে অবস্থিত তখনকার জাতীয় সংসদ ভবনে৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জয়লাভ করে৷ বঙ্গবন্ধু সে সময় ঢাকা-১২ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন৷
ছবি: AP
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রথম নারী সাংসদ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হয়৷ সেবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ৩০টি৷ তবে ঐ সংসদেই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে একজন নারী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ খুলনা-১৪ থেকে নির্বাচিত হন সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ৷ প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২ এপ্রিল৷ নির্বাচনে মাত্র মাস ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ২০৭টি আর আওয়ামী লীগ ৫৪টি আসন পেয়েছিল৷
ছবি: imago stock&people
তৃতীয় সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে৷ জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
চতুর্থ সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ জাতীয় পার্টি আসন পেয়েছিল ২৫১টি৷ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সংসদে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আর জাতীয় পার্টি ৩৫টিতে জয়লাভ করে৷ এছাড়া নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ৩০ জন মহিলাকে সাংসদ নির্বাচিত করা হয়৷ অবশ্য তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি সংবিধানের অংশ ছিল না৷ পরের সংসদে সেই বিল পাস হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি৷ আওয়ামী লীগ সহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল৷ ফলে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১ শতাংশ৷ ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ২৭৮টিতে জয়লাভ করেছিল৷ মাত্র চার কার্যদিবসে সংসদ বসার পর তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়৷ এই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo
সপ্তম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬ ও জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয়লাভ করে৷ পরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷
ছবি: Reuters
অষ্টম সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর৷ অষ্টম সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷ কারণ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শুরুতে কোনো মহিলা আসন ছিল না৷ পরে আইন করে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ এ উন্নীত করা হয়৷ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩ আর আওয়ামী লীগ ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
নবম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত সবশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পেয়েছিল ২৬৩টি আসন৷ আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট পায় ৩৩টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar
দশম সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি৷ ফলে ১৫৩ জন সাংসদ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সাংসদ নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাদশ সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া এই নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের ২৮৮টিই পেয়েছিল ক্ষমতাসীন দল ও মহাজোট৷ সেই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট পড়েছে পাঁচ ভাগের চার ভাগ৷ ঘটেছে নজিরবিহীন ঘটনাও৷ ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে৷ প্রায় আট হাজার কেন্দ্রে পড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
11 ছবি1 | 11
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কতদিন পর্যন্ত কেনা যাবে জানতে চাইলে দলের সাধারণ সম্পাদক বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘১১ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে৷ সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে৷’’
আটটি বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে আওয়ামী লীগ৷ ফরমের দাম ৩০ হাজার টাকা৷ সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা শহর থেকে বাসে করে সমর্থকদের নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন প্রার্থীরা৷
ফরম বিক্রি উপলক্ষে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয় এলাকায় ব্যান্ড পার্টি বাজানো হয়৷ প্রার্থী ও সমর্থকদের গলায় ছিল শ্লোগান৷ তবে অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজে না এসে অন্য কাউকে দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন৷
সমর্থকেরা ছবিসহ প্ল্যাকার্ড, কাটআউট নিয়ে সাতমসজিদ সড়কে মিছিল করেছেন৷ অনেকের হাতে ফুল, কাগজ ও কাঠের ছোট ছোট নৌকাও ছিল৷ নারী সমর্থকদেরও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মিছিলে আসতে দেখা গেছে৷ দলে দলে মিছিল আসায় ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল৷ বাস থেকে লোকজনকে নেমে নির্দিষ্ট গন্তব্যে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে৷
তবে মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিন বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চিত্রটি ছিল ঠিক অন্যরকম৷ বেলা ১১টায় দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন ছিল৷ এ সময় দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন৷ রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ থাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলক কম৷ এ কারণে দলটির কার্যালয়ে নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি৷ এ ছাড়া দলটি এখনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ঘোষণাও দেয়নি৷
এপিবি/এসিবি (সূত্র: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, প্রথম আলো)