আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে জিয়া হত্যার বিচার চান রুমিন ফারহানা
২৫ মার্চ ২০২২
ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার না করে ভুল করেছে বলে মনে করেন দলটির সংসদ সদস্য ব্যরিস্টার রুমিন ফারহানা৷ আওয়ামী লীগ কেন বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে না এমন প্রশ্ন তার৷
বিজ্ঞাপন
‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ ইউটিউব টকশোতে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাতের কথার জবাবে এই প্রসঙ্গটি আনেন রুমিন ফারহানা৷ অনুষ্ঠানে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেন৷ বলেন, ‘‘এখানে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার হয় না, বিচার চাইতে হয়৷ সেই সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করেছি বিচারটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাওয়া হয়৷ তার মানে ধরেই নেয়া হয় বাংলাদেশে বিচার করবার মালিক একমাত্র একজনই আছেন এবং তিনি চাইলেই বিচার হবে আর তিনি না চাইলে বিচার হবে না৷অর্থাৎ একটা সুস্থ স্বাভাবিক রাষ্ট্রে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের যার যার কাজ যে তার তার করার কথা তার আশপাশেও আমরা নাই৷''
জবাবে আওয়ামী লীগে সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত বলেন, ‘‘বিচার অবশ্যই হওয়া দরকার৷ তবে আমার সবচেয়ে দুঃখ লাগে যে জিয়াউর রহমান মারা গেলেন সেই জিয়াউর রহমানের দল ৯১ থেকে ৯৬ সালে ক্ষমতায় ছিল এবং পরবর্তীতেও ক্ষমতায় ছিল সেই সময়ও তারা জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারটি করেনি এবং সেভাবেই বিচারটি শেষ করে দিয়েছেন৷ শুধু মার্শাল লতে কিছু লোককে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল৷'' তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকারের আমলে যত বিচার হয়েছে অতীতে আর হয়নি৷
প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা আওয়ামী লীগ সরকারকেই জিয়া হত্যার বিচার করার আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘ওনারা যখন এত বিচার করছেন তখন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া হত্যার বিচার ওনারা কেন করছেন না? এটা তো একটা ক্রিমিনাল অফেন্স, হত্যা মামলা ৩০২ একটা ক্রিমিন্যাল অফেন্স (ফৌজদারি অপরাধ) এবং এই অফেন্সের (অপরাধের) জন্য কারো রাজনৈতিক পরিচয়, মতাদর্শের দিকে দেখা উচিত না৷ বিচার তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে এবং আওয়ামী লীগ যেহেতু দাবি করে সকল বিচার তাদের সময়ই হয় তাহলে কেন এই অতি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচারটি তারা করল না৷ বিএনপিতো ক্ষমতার বাইরে আজ ১৫ বছর৷ তার আগে যখন তারা বিচার করেনি, তারা ভুল করেছে৷ আওয়ামী লীগ কেন সেই বিচারটি করছে না এবং করে কেন তারা সেই দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছে না?''
এই সংসদ সদস্যের মতে, আওয়ামী লীগ যদি সত্যিকারভাবে আইনের শাসন, ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে জিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে৷ এই বক্তব্যের জবাবে সরকার দলীয় সদস্য হাবিবে মিল্লাত বলেন, বিএনপি বা জিয়াউর রহমানের পরিবার চাইলে মামলাটি আবার চালু করা যেতে পারে৷ ‘‘যদি বিএনপি অফিসিয়ালি বলে, তার পরিবার বলে তাহলে এই মামলাটি আবার চালু করা সম্ভব৷ একটা মামলা যদি শেষ হয়ে যায় সেই মামলাটি নিয়ে দ্বিতীয়বার বিচার হতে পারে না৷ সুতরাং, বিএনপি বা তারেক জিয়া বা খালেদা জিয়া যদি বলে বিচার শুরু হোক তাহলে আওয়ামী লীগ সরকার অবশ্যই করবে৷ যত দ্রুত সম্ভব চালু করবে,'' বলেন তিনি৷
উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যার্থ সামরিক অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদল সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন৷
এফএ/এআই
বিএনপির চার দশক
৪৫ বছরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷ যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত আছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ এত বছরে কী ছিল দলটির পথচলা?
ছবি: Getty Images/Keystone
প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন৷ এরপর প্রায় তিন বছর বাংলাদেশে ছিল অনির্বাচিত সরকার৷ সে সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান৷ পরে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে রাজনৈতিক দল গঠন করেন৷
ছবি: imago/Belga
প্রতিষ্ঠা
বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছিল৷ পরে তা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করে দলের যাত্রা করেন জিয়াউর রহমান৷
ছবি: imago/United Archives International
নির্বাচন ও মৃত্যু
জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেই ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে বিএনপি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে৷ তখন মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জেতে৷ নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/Keystone
খালেদার রাজনীতিতে আসা
জিয়ার মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের আহ্ববানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন৷ ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন৷ ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় প্রথম বক্তৃতা করেন৷ ১৯৮৪ সালের ১০মে পার্টির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন৷
ছবি: AP
এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও খালেদা জিয়া
জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন৷ তবে তাঁকে হটিয়ে ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন৷ বিএনপি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই আন্দোলনে বেগম জিয়া ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দু’জনই ছিলেন, যদিও আপোষহীনতার কারণে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
সরকার গঠন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রশ্নবিদ্ধ আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদে মাত্র ৪৫ দিন টিকতে পারে সেই সরকার৷
ছবি: AP
শেষবার সরকারে
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে জিতে আবারো সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট৷এই সরকারই ছিল বিএনপির শেষ সরকার৷ এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর নানা বিতর্ক ও ঘটনার প্রেক্ষাপটে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল প্রায় দুই বছর৷ সে সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়কেই জেলে যেতেও হয়েছিল৷ পরে অবশ্য দু’জনই ছাড়া পান৷
ছবি: Getty Images
জোটের রাজনীতি
বিএনপি এ পর্যন্ত বারবার জোট করেছে৷ প্রথম সাতদলীয় জোট করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে৷ এরপর জামায়াতে ইসলামীসহ গড়ে চারদলীয় জোট৷ পরবর্তীতে জোটে দলের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ সেটি ঠেকে বিশ দলীয় জোটে৷
ছবি: bdnews24.com
রাজনৈতিক ভুল ও কারাগারে খালেদা
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়াকে অনেকেই রাজনৈতিক ভুল বলে মনে করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে থাকা নানা মামলার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেয়৷ আরো কয়েকটি মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
বিদেশে তারেক রহমান
মানি লন্ডারিংসহ নানা মামলায় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন জিয়াপুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ নানা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না৷ এসব সংকট নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় আছে বলে মনে করেন অনেকেই৷