1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আওয়ামী লীগ সরকার কি জামাতি কাউকে নিয়োগ দেবে: ঢাবি উপাচার্য

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৮ জানুয়ারি ২০২২

রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগকে নেতিবাচক বলে মনে করেন না অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান৷ তবে একাডেমিক দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান (বাম থেকে দ্বিতীয়)ছবি: bdnews24/A.M. Ove

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে দলীয় বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি৷ উপাচার্য দলীয় না হলে ক্ষতি কী? দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কি ভালো চলছে? এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান৷

ডয়চে ভেলে : ১৯৭৩ সালের এ্যাক্ট অনুযায়ি ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়৷ এখানে উপাচার্য নিয়োগের জন্য সিনেট তিনজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে৷ সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন৷ এটাই নিয়ম৷ কিন্তু অনেক সময় এটা মানা হয় না৷ সবসময় এটা মানতে সমস্যা কোথায়?

অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান: যেটি ঘটে, যখন অন্তবর্তীকালীন অবস্থা তৈরি হয় তখন সরকারকে তথা চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে পদক্ষেপ নিতে হয়৷ তখন তিনি কাউকে নিয়োগ দেন৷ পরে বিশ্ববিদ্যালয়কে যেটা করতে হয়, সেটা সিনেটের মাধ্যমে একটা প্যানেল তৈরি করতে হয়৷ সুতরাং যেটা হয়, সেটা অন্তবর্তীকালীন একটা ব্যবস্থা৷ এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া৷ বিশেষ পরিস্থিতিতে তো উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে৷  

এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগের কোন সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধিবিধান নেই৷ ফলে সরকার ইচ্ছে মতো দলীয় শিক্ষককে উপাচার্য নিয়োগ দেয়৷ এতে নানা ধরনের সংকটের সৃষ্টি হয়৷ এই পরিস্থিতির উত্তরণে স্থায়ী কোন সমাধান আছে কি-না?

একেবারে কোন আইন নেই সেটা না, সেখানেও আইন আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় যে আইন দ্বারা পরিচালিত হয়, সেই আইনের মধ্যেই উপাচার্য কীভাবে নিয়োগ হবে সেটার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে৷ সে মোতাবেকই সরকার ব্যবস্থা নেয় এবং রাষ্ট্রপতি উপাচার্য নিয়োগ দেন৷ সবচেয়ে বড় কথা হল, উপাচার্যও তো একজন শিক্ষক৷ প্রথমত তিনি একজন অধ্যাপক৷

অনেকেই মনে করেন উপাচার্যকে যেহেতু প্রশাসনিক কাজ করতে হয় তাই শুধু ভালো শিক্ষাবিদ দিয়ে কাজ নাও হতে পারে৷ সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীও এমনটি বলেছেন৷ এটা কী আসলে ঠিক?

উপাচার্যকে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজের একটা সমন্বয় করতে হয়৷ কাজের ধরনের মধ্যে উপাচার্যদের কাজ অন্য প্রশাসকদের চেয়ে ভিন্ন৷ এখানে যে প্রশাসন, সেই প্রশাসনে থাকবে একাডেমিক ছোঁয়া৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের  বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ধরনের পদক্ষেপ আছে, অনেক ধরনের পদ আছে যেগুলো আবার অন্যত্র নেই৷ সে কারণেই শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসন এই দু’টো সমন্বয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়৷

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ লাভ করেন মেধায়’

This browser does not support the audio element.

বুয়েটে তো দীর্ঘ সময় ধরে জ্যেষ্ঠতা মেনে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেখানে তো তখন কোন সংকট হয়নি? অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এভাবে উপাচার্য নিয়োগ দিলে সমস্যা কী?

এটি একটি ভিন্ন দিক, ভিন্ন কথা৷ উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে একজন শিক্ষাবিদকে, অধ্যাপককে সেটিই তো প্রত্যাশিত৷ উপাচার্য তো বড় কথা নয়, বড় কথা হল তিনি একজন অধ্যাপক৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান যারা হন, তারা তো সিনিয়রিটির ভিত্তিতে নিয়োগ লাভ করে থাকেন৷ সেটা তো অন্য একটা রুটিন কাজ৷ কিন্তু এটা তো উপাচার্য৷ এখানে নিয়োগে ভিন্নতা থাকাই বাঞ্ছনীয়৷ 

গত তিন দশক ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় শিক্ষকেরাই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন৷ ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ভালো ফলের চেয়ে রাজনৈতিক আদর্শকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ বর্তমানে শিক্ষকতার চেয়ে শিক্ষকদের কাছে রাজনীতি মূখ্য হয়ে উঠেছে৷ এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য কী বিঘ্নিত হচ্ছে না?

দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পেলে তো সমস্যা হবেই৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই চরিত্র নেই৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ লাভ করেন মেধায়৷ ঢালাও ভাবে দায়িত্বহীন কথা বলা যাবে না৷ একজন ভালো ছাত্র, যিনি ভালো ফল করেন তিনিই নিয়োগ লাভ করেন৷ কী বিবেচনায়, সেটির সঙ্গে আমরা পরিচিতও নই৷ এই ধরনের ধারণার সঙ্গে আমার পরিচিতি ঘটার দুর্ভাগ্য হয়নি৷ মেধাবীরাই এখানে নিয়োগ লাভ করেন৷ কখনও কখনও ব্যতিক্রম ঘটেনি সেটা বলাও কঠিন৷

দলীয় শিক্ষক উপাচার্য হওয়ার ফলে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতারা বেপরোয়া হয়ে উঠেন৷ হলগুলোতে তাদের একছত্র আধিপত্য থাকে৷ সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতিত হন৷ মুক্ত জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবেশ বাধার সৃষ্টি করে কি-না?

যখন তিনি নিয়োগ লাভ করবেন তখন তিনি উপাচার্য হয়ে যাবেন৷ তিনি তো একজন অধ্যাপক, তিনি তো একজন শিক্ষক৷ নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি তো কোন দলের না৷ এই ধারণাটাই পোষণ করতে হবে আমাদের৷  এমন ভাবার কোন কারণ আছে কি যে, আওয়ামী লীগ সরকার জামাতি একজন নিয়োগ দেবেন? পৃথিবীর কোথাও কী এটা আছে? ফলে কথাগুলো দায়িত্বশীভাবেই বলতে হবে৷ তিনি যখন নিয়োগ লাভ করবেন তখন তার কাছে সকলেই সমান৷

বর্তমানে শিক্ষক রাজনীতি না করা কোন শিক্ষাবিদকে উপাচার্য করা হয় না৷ রাজনীতি করা শিক্ষককে উপাচার্য করলে লাভ কী?

এটি ভিন্ন৷ প্রত্যেক মানুষই রাজনীতিমনস্ক থাকবেন৷ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটিকে আরো বেশি উৎসাহিত করে থাকি৷ আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই রাজনীতিমনস্ক থাকবেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটি শিক্ষা দেয়৷ আমাদের শিক্ষকেরা মুক্তমনে ভিন্ন ভিন্ন দর্শন-মতামত পোষণ করেন৷ তারা ব্যাখা দেন, বিবৃতি দেন৷ ফলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ৷ যখন তিনি একাডেমিক দায়িত্ব পালন করবেন তখন তিনি নিরপেক্ষ থাকবেন৷ প্রশাসন যখন চালাবেন তখন সেটিও নিরপেক্ষ৷ তবে মূল্যবোধ, ধর্ম দর্শন, সামাজিক দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গভীরভাবে থাকবে৷ 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যেরা৷ এতে কী সাধারণ শিক্ষার্থীদের নায্য দাবি দলীয় উপাচার্যদের কারণে উপেক্ষতি হলো না?

কাউকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই৷ যখন যে কথা বলবেন, তখন তারা বলবেন, কোথাও যেন অচলাবস্থার সৃষ্টি না হয়৷ যেন অবিচার না হয়৷ কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সেটা যেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে সেটির সুরাহা করা হয়৷ কোন ধরনের স্থবিরতা না ঘটে এই ধরনের বক্তব্য থাকাই তো বাঞ্ছনীয়৷ 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনটি আসলে উপযুক্ত পদ্ধতি বলে আপনি মনে করেন?

এটি গবেষণার দাবি রাখে৷ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যেটি দরকার, সেখানে শিক্ষার পরিবেশ থাকবে, গবেষণার পরিবেশ থাকবে৷ সেখানে একাডেমিক, প্রশাসনিক মূল্যবোধ থাকবে৷ উপাচার্য যিনি হবেন তিনি এসবকিছুর সমন্বয় করবেন৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ