জুলাইতে আর্জেন্টিনার বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১১৩ শতাংশ৷ অর্থাৎ, এক বছর আগে যে পণ্য বা সেবা কিনতে মানুষ ১০০ টাকা ব্যয় করতেন তা পেতে দেশটির মানুষকে এখন দ্বিগুণেরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে৷ তবে জুনে এই হার ছিল আরো বেশি, ১১৫ শতাংশ৷ সবশেষ ১৯৯১ সালে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার তিন অঙ্ক ছাড়িয়েছিল৷
অর্থনীতির দুরাবস্থা, ভয়াবহ খরায় কৃষির বিপর্যয়, রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি, স্থানীয় মুদ্রা পেসোর অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে আর্জেন্টিনায় জীবনযাত্রায় ব্যয় বেড়ে চলেছে৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুক্রবার সুপারমার্কেটগুলোর সঙ্গে দাম নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে সরকার৷ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী তিন মাস ইচ্ছামাফিক দাম বাড়াতে পারবে না তারা৷ এক মাসে একটি পণ্যের দাম পাঁচ শতাংশের বেশি হতে পারবে না৷
ভারত কি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে যাচ্ছে?
01:22
This browser does not support the video element.
৩১টি সুপারমার্কেটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী সার্জিও মাসা৷ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রণোদনা হিসেবে সরকারের কাছ থেকে কর ছাড় পাবে সুপারমার্কেটগুলো৷ এছাড়াও পণ্য সরবরাহকারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ঋণ তহবিলের ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়৷ এই সিদ্ধান্ত আগামী অক্টোবরে হতে যাওয়া নির্বাচন পর্যন্ত বহাল থাকবে৷ এর আগে বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জ্বালানির দাম বাড়ানো যাবে না৷ এ নিয়েও শিল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছে সরকার৷
আগামী অক্টোবরে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ সেখানে অর্থমন্ত্রী মাসা নিজেই ক্ষমতাসীন জোটের হয়ে লড়াই করবেন৷ গত রোববার প্রাইমারি ভোটে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই জয়ী হয়েছেন তিনি৷ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণার পর দেশটির মুদ্রা পেসোর বড় ধরনের দরপতন হয়েছে৷ এতে আগস্টে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷
বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, পাইকারি পর্যায়ে পণ্যের দাম আবারো বড় আকারে বাড়ার আভাস দেখা যাচ্ছে৷ এতে বাজারে জিনিসপত্রের দামের দ্রুতই আরেক দফা উল্লম্ফন ঘটবে৷ সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে তা আশির দশকের শেষের উচ্চ মূল্যস্ফীতির রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে৷
এফএস/আরআর (রয়টার্স)
বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণে ব্রিকস
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বিশ্বের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মেরুকরণে নতুন আলোচনায় ‘ব্রিকস’৷ পাঁচ দেশের এই জোট এখন আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে৷ যার নতুন সদস্য হতে পারে বাংলাদেশও৷ ব্রিকসের আদ্যোপান্ত ছবিঘরে৷
ছবি: Fang Zhe/Xinhua/IMAGO
নামকরণের ইতিহাস
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন; বিশ্বের দ্রুত বেড়ে চলা অর্থনীতির চার দেশ৷ তাদের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে ২০০১ সালে প্রথম ‘ব্রিক’ শব্দটি ব্যবহার করেন মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্সের সেসময়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিল৷ ধারণাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় দেশগুলোও৷ ২০০৬ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সম্মেলন চলাকালীন পুটিনের উদ্যোগে চার দেশের মন্ত্রীরা জোটের কার্যক্রম নির্ধারণে আলোচনায় বসেন৷
ছবি: Pavel Golovkin/AP Photo/picture alliance
সাউথ আফ্রিকার অন্তর্ভূক্তি ও ব্রিকস
২০০৯ সালে রাশিয়ায় ব্রিকের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সাউথ আফ্রিকা জোটে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়৷ এর মাধ্যমে ব্রিক পরিণত হয় ব্রিকস-এ৷ ব্রিকের তৃতীয় আর পাঁচ দেশ নিয়ে প্রথম সম্মেলনটি হয় ২০১১ সালে বেইজিং-এ৷ তার আগে ২০১০ সালে দ্বিতীয় সম্মেলনটি বসেছিল ব্রাসিলিয়াতে৷
২০০৯ সালে ব্রিক দেশগুলোর নেতাদের সম্মেলন শেষে একটি যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়৷ তাতে বলা হয়, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমৃদ্ধি অর্জনে কাজ করবে তারা৷ তবে বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে আধিপত্য বজায় রাখা উন্নত দেশগুলোর জোট জি-সেভেন এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই এই জোট নিয়ে মাঠে নামে চীন ও রাশিয়া৷
ছবি: Wu Hong/AP Images/picture alliance
কতোটা শক্তিশালী ব্রিকসের অর্থনীতি?
ব্রিকস বর্তমানে বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে অন্যতম বৃহৎ শক্তিশালী জোট৷ কিছু পরিসংখ্যানে সেই চিত্র পাওয়া যায়৷ জাতিসংঘের বিনিয়োগ বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই পাঁচ দেশের সম্মিলিত জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ৷ বিশ্বের অর্থনৈতিক জিডিপির ৩১ শতাংশ বা এক তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রক তারা৷ বিশ্ব বাণিজ্যেরও ১৬ শতাংশ পাঁচটি দেশের দখলে৷
ছবি: AP
নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক
বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা এই পাঁচ দেশ ২০১৪ সালে বিশ্ব্যাংকের আদলে ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ গঠন করে৷ চীনের সাংহাইয়ে এর প্রধান কার্যালয়৷ ব্যাংকটি ৫০ বিলিয়ন ডলারের ‘সিড মানি’ বা প্রাথমিক মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে৷ তবে পাঁচ দেশের বাইরেও এর সদস্য হওয়ার পথ উন্মুক্ত রাখা হয়৷ বিভিন্ন প্রকল্পে এখন পর্যন্ত তাদের অনুমোদিত অর্থায়নের পরিমাণ তিন হাজার ২৮০ কোটি ডলার৷
ছবি: Ji Haixin/MAXPPP/dpa/picture alliance
বাংলাদেশের সদস্যপদপ্রাপ্তি
ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ দেশের বাইরে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রথম নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়৷ একই বছরের চার অক্টোবর সদস্য হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ আর ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নতুন সদস্য হয়েছে মিশর৷ সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে উরুগুয়ের নাম রয়েছে৷
ছবি: Wang Gang/Costfoto/picture alliance
ডলারকে হুমকি
আগস্টে ব্রিকসের ১৫ তম সম্মেলন বসবে সাউথ আফ্রিকায়৷ ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের বিষয়টি এই বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য হতে যাচ্ছে। ডলারের পরিবর্তে কিভাবে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন করা যায় তার একটি রূপরেখা তুলে ধরা হতে পারে এই বৈঠকে৷ কার্যকর বিকল্প চালু করতে পারলে তা বিশ্ব অর্থনীতির একচ্ছত্র মুদ্রা ডলারের আধিপত্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Khaled Elfiqi/epa/dpa/picture alliance
বাংলাদেশের সদস্যপদ
আগস্টের এই বৈঠক থেকে ব্রিকসের নতুন সদস্যের ঘোষণা আসতে পারে৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি জেনেভায় শ্রম সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন৷ তাছাড়া, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের আরো কয়েকটি বৃহৎ অর্থনীতির দেশও ব্রিকসের সদস্য হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ এর ফলে ব্রিকস হয়ে উঠতে পারে ‘ব্রিকস প্লাস’৷
ছবি: DW
জি -৭ এর প্রতিদ্বন্দী?
জিডিপির আকারের দিক থেকে ব্রিকস এরইমধ্যে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-সেভেনকে পেছনে ফেলেছে৷ জি -সেভেন যেখানে বিশ্বের উত্তরের দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করছে, ব্রিকস সেখানে উদীয়মান এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একত্রিকে করে একটি প্লাটফর্ম করার চেষ্টা করছে৷ যে কারণে ব্রিকস বিশ্ব অর্থনীতিতে জি-সেভেন এর প্রভাব কমিয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন অনেকে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে৷
ছবি: Susan Walsh/AP Photo/picture alliance
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মেরুকরণ
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বিশ্বের সামরিক ও অর্থনৈতিক মেরুকরণের প্রভাব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ এমন বাস্তবতায় এক যুগেরও বেশি আগে যাত্রা করা ব্রিকসকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটের বিকল্প হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন অনেকে৷ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলো ক্রমেই ব্রিকস জোটে ভিড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷