আকাশসীমা সুরক্ষায় পোল্যান্ডকে সহায়তা করতে চায় জার্মানি
২১ নভেম্বর ২০২২
গত সপ্তাহে পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের পর সে দেশের আকাশসীমার সুরক্ষার জন্য জার্মানি ইউরোফাইটার বিমান ও প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের দেশগুলির পক্ষে যে একা প্রতিরক্ষা মজবুত করা সম্ভব নয়, সেই বিশ্বাস আরো বাড়ছে৷ তাই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরো পারস্পরিক সহযোগিতার পথে চলতে চায় কিছু দেশ৷ সামরিক জোট ন্যাটোর রক্ষাকবচ সত্ত্বেও বাড়তি পদক্ষেপের প্রয়োজন বোধ করছে এই দেশগুলি৷ ইউক্রেনে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর ক্ষেত্রেও এমন সমন্বয় ও সহযোগিতা দেখা যাচ্ছে৷ সেখানে সোভিয়েত আমলের ট্যাংক পাঠিয়ে পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ জার্মানি থেকে বিকল্প সাঁজোয়া গাড়ি পাচ্ছে৷
এবার ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডের আকাশসীমা রক্ষায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে জার্মানি৷ গত সপ্তাহে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের ঘটনার পর ভবিষ্যতে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত হামলা এড়াতে পেট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম কাজে লাগতে পারে বলে জার্মান সরকার মনে করছে৷ ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সমস্যাই গত সপ্তাহের ঘটনার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে৷ জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিনে লামব্রেশট রোববার এক সংবাদপত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই প্রস্তাবের উল্লেখ করেন৷ উল্লেখ্য, জার্মানি এর আগে ইউরোফাইটার বিমানের সাহায্যে পোলিশ সীমান্তে টহলদারির প্রস্তাবও দিয়েছিল৷
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে সামরিক জোট ন্যাটো পূর্ব ইউরোপের আকাশসীমা আরো নিরাপদ করার জন্য পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে৷ অক্টোবর মাসে জার্মানির নেতৃত্বে প্রায় ১২টি ন্যাটো সদস্য দেশ যৌথভাবে একাধিক স্তরের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু করেছে৷ শীতল যুদ্ধের সময়ে জার্মানিতে ৩৬টি প্যাট্রিয়ট ইউনিট মোতায়েন ছিল৷ বর্তমানে সেই সংখ্যা ১২, যার মধ্যে দুটি স্লোভাকিয়ায় মোতায়েন রয়েছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাই যৌথ সুরক্ষার উপর জোর দিচ্ছে জার্মানি৷ তবে ফ্রান্সের মতো ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পরমাণু শক্তিধর দেশকে বাইরে রেখে জার্মানির এমন উদ্যোগ নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ইসরায়েল অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে৷ তবে অন্যান্য প্রতিরক্ষা প্রকল্পে ফ্রান্সের সঙ্গেই সহযোগিতা করছে জার্মানি৷
শুধু পোল্যান্ড নয়, স্লোভাকিয়া ও বাল্টিক দেশগুলির আকাশসীমা সুরক্ষা আরো মজবুত করতে হবে বলে মনে করেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী লামব্রেশট৷ ইউক্রেন ও রাশিয়ার সীমান্তের দেশগুলির জন্য এমন বাড়তি পদক্ষেপ অবিলম্বে প্রয়োজন বলে জার্মানি মনে করছে৷ মোটকথা ন্যাটো যাতে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে যাবতীয় পদক্ষেপ নেবার পক্ষে সওয়াল করছে জার্মানি৷ তবে সেই লক্ষ্যে সব দেশকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে বলে মনে করেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)
পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কি আসন্ন!
ভূরাজনীতি কি আবার ঠান্ডাযুদ্ধের সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে? বাড়ছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা?
ছবি: KCNA via KNS/AP Photo/picture alliance
সময়ের চাকা
ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। পরমাণু অস্ত্র প্রদর্শনের আস্ফালনও ছিল চরম। সোভিয়েতের পতনের পর তা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। বর্তমান সময়ে ফের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা বেড়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
ছবি: Pavel Golovkin/AP/picture alliance
রাশিয়ার অবস্থান
ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ফোর্সের জন্য বিশেষ অ্যালার্ট জারি করেছেন। আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ।
ছবি: Mark Schiefelbein/AP/picture alliance
রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ক্ষমতা
রাশিয়ার হাতে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র আছে। সবমিলিয়ে তাদের পরমাণু ওয়ারহেড ছয় হাজার ৩০০।
ছবি: Oleg Kuleshov/TASS/dpa/picture alliance
অ্যামেরিকার পারমাণবিক শক্তি
ন্যাটোর সঙ্গে যৌথভাবে অ্যামেরিকার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮০০। যদিও এই সংখ্যা আরো বেশ বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যামেরিকা সব অস্ত্রের খতিয়ান দেয়নি বলেই মনে করা হয়।
ছবি: picture-alliance/AP/US Navy/R. Rebarich
ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য
ফ্রান্সের হাতে আছে ৩০০ এবং যুক্তরাজ্যের হাতে ২১৫টি পরমাণু অস্ত্র আছে।
ছবি: Ludovic Marin/AFP/Getty Images
চীনের শক্তি
বেজিংয়ের কাছে ৩২০টি পরমাণু অস্ত্র আছে। তবে চীনও গোপনে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার বাড়িয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা।
ছবি: Stephen Shaver/UPI Photo/Newscom/picture alliance
পরমাণু শক্তি ব্যবহারের মানসিকতা
পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মানসিকতা আলাদা। ফ্রান্স এবং ব্রিটেন পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পক্ষপাতী নয়। তাদের বক্তব্য, পরমাণু শক্তিকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা যাবে না।
ছবি: Takuya Yoshino/AP/picture alliance
মার্কিন অভিমত
অ্যামেরিকা মনে করে, প্রয়োজনে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তার মাত্রা হবে কম। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তা পৌঁছে যাবে। এ কারণে, কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে জোর দিয়েছে অ্যামেরিকা। মার্কিন প্রশাসন মনে করে, কোনো না কোনো সময়ে কম শক্তির পরমাণু যুদ্ধ হবে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জার্মানির কুচকাওয়াজ
জার্মানির টর্নেডো যুদ্ধবিমানের ফাইটার পাইলটদের পরমাণু বোমা ফেলার ট্রেনিং দেওয়া হয়। জার্মানিতে সঞ্চিত মার্কিন পরমাণু বোমা যে কোনো সময় টর্নেডো বিমানের সাহায্যে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ফেলতে পারেন এই পাইলটরা। বছরে একবার নকল বোমা নিয়ে তারা কুচকাওয়াজ করে।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Gallup
নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইটালি
এই তিন দেশও ন্যাটোর পরমাণু প্রকল্পের অংশ। এখানেও অ্যামেরিকার ১০০ থেকে ১৫০টি পরমাণু পরমাণু বোমা রাখা আছে। টর্নেডো বিমানে যা বহন করা যায়।
ছবি: Michael Varaklas/AP Photo/picture alliance
পরমাণু অস্ত্র এবং আন্তর্জাতিক আইন
কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক আইনে নিষেধ আছে। এর শাস্তি চরম হতে পারে। তবে কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র সমুদ্রে ব্যবহার করার সুযোগ এখনো আছে। এমনকী, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করতেও তা ব্যবহার করা যেতে পারে।