1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আখরোট আর তোতাপাখি

ইঙ্গা জিগ/এসি২৩ মার্চ ২০১৬

গুয়াতেমালার জঙ্গলে বুনো আখরোটের সঙ্গে আরা তোতাপাখিদের সম্পর্ক হলো এই যে, জঙ্গলের মানুষ যদি আখরোট বেচে কিছু রোজগার করেন, তাহলে পাখিদেরও উপকার হয়৷

আখরোট
ছবি: Colourbox

জঙ্গলের মায়া আখরোট বাদাম ডনা মাগদালেনা আর তাঁর সংসারের ১১ জন সদস্যের পক্ষে একটা ভালো রোজগারের পন্থা৷ কিছু বিশেষ শর্তে গাঁয়ের মানুষদের জঙ্গলে ফলমূল কুড়নোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ অর্থাৎ টেকসই অর্থনীতি – গুয়াতেমালায় যা খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়৷

এখান থেকে খানিক দূরেই ‘রেইনফরেস্ট', অর্থাৎ বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তিমণ্ডলীয় অরণ্য৷ মাত্র ২০ বছরের মধ্যে সেই অরণ্যের অর্ধেক উধাও হয়েছে৷ এখন সেখানে শুধু কৃষিক্ষেত্র, নয়ত চারণভূমি৷ মানুষ বাড়ছে, তাদের খাদ্যের প্রয়োজন৷ সমস্যা হলো: মাটি অত্যন্ত অনুর্বর৷ এখানে গরু চরাতে প্রচুর জমি লাগে৷ অরণ্যের আরেকটি অভিশাপ হলো মাদক পাচারকারীরা৷

জার্মান উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড-এর ইয়াপ শোর্ল বলেন, ‘‘মুশকিল হলো এই যে, যারা মাদক পাচার করে, তাদের অনেক টাকা৷ তারা সেই কালো টাকা সাদা করতে চায়, সেজন্য তারা বিপুল পরিমাণ জমি কেনে যেখানে তার আগেই বেআইনিভাবে গাছ কাটা হয়েছে৷ তারপর তারা সেই জমিতে গরু চরানোর ব্যবস্থা করে৷ কিন্তু অরণ্য ততদিনে উধাও হয়েছে৷ আর জঙ্গল একবার গেলে, তাকে ফেরানো অত সহজ নয়৷''

আখরোট বিক্রি হলে লাভ পাখিদেরও

05:24

This browser does not support the video element.

গোটা এলাকায় কিভাবে গাছ কেটে জঙ্গল সাফ করা হয়েছে, তার পরিমাণটা জানেন জিআইজেড-এর ইয়াপ শর্ল ও গুয়াতেমালার বনানী সুরক্ষণ কর্তৃপক্ষের ভিক্টর রামস, কেননা তাঁরা বহু বছর ধরে এই প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন৷ জার্মান পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক জলবায়ু উদ্যোগ আইসিআই-এর সাহায্যে এই দু'জন গবেষক ক্রান্তিমণ্ডলীয় অরণ্যের অন্তর্ধান যাচাই করার চেষ্টা করছেন৷ ‘সেমেক' প্রকল্পের সমন্বয়কারক রামস বলেন, ‘‘এটা হলো ২০০০ সালের অরণ্য, হালকা সবুজ আর গাঢ় সবুজ অংশগুলো হলো আদিম বনানী৷ হলুদ অংশগুলো হলো কৃষিকাজ আর গোচারণের জমি৷ এটা ছিল ২০০০, আর এই হলো ২০০৭; এই অংশটা হলো ২০১৩৷''

তিন হাজার বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ – প্রায় এক হাজার নানা ধরনের জীবজন্তু ও পাখি বাস করে এই মায়া গাছের জঙ্গলে৷ তাদের মধ্যে অনেক ধরনের গাছ বা পশুপাখি শুধু এখানেই পাওয়া যায়৷ ক্রান্তিমণ্ডলীয় অরণ্য যত উধাও হচ্ছে, ততই তাদের প্রাণধারণের উপযোগী এলাকা কমছে৷ গুয়াকামায়া পাখিরা ছিল অতীতের মায়া উপজাতির সূর্য উপাসনার প্রতীক৷ এই ব্রিডিং স্টেশনটিতে আরো তোতাপাখি মানুষ করা হচ্ছে৷ মুক্ত প্রকৃতিতে আরা তোতাপাখিদের সংখ্যা তিনশ'র বেশি নয়৷

‘আর্কাস' পশুত্রাণ কেন্দ্রের পশুচিকিৎসক ফ্যার্নান্দো মার্টিনেস জানালেন, ‘‘এই তোতাপাখিদের পক্ষে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, তাদের বাসের উপযোগী পরিবেশের হানি৷ তার পরেই আসছে এই পাখিগুলোকে নিয়ে বেআইনি বেচাকেনা৷ ছোট ছোট পাখিগুলোকে তাদের বাসা থেকে বের করে কালোবাজারে বেচা হয় প্রায় পাঁচ হাজার ডলার দামে৷''

পাখিগুলো বড় হওয়া অবধি সেগুলোকে এই কেন্দ্রেই রাখা হয় – তারপর এখান থেকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ এই আরা নামধারী ম্যাক' গোত্রীয় বড় তোতাপাখিগুলি ৮০ বছর বয়স অবধি বাঁচতে পারে৷ তবে এই জঙ্গল অতদিন বাঁচবে কিনা, তা বলা শক্ত৷

গ্রামের নাম উয়াক্সাতুন

মায়া গাছের বাদাম গুঁড়ো করে তা থেকে ময়দা কিংবা বিস্কুট তৈরি করা হয়৷ গ্রামের মহিলারা এভাবে কাজ পান ও কিছু রোজগার করেন৷ জার্মান জিআইজেড সংস্থার একটি দল স্থানীয় বিশেষজ্ঞ জুলিও মাদ্রিদকে সঙ্গে নিয়ে প্রকল্পটি চালাচ্ছেন৷ ‘আকফোব' প্রকল্পের সমন্বয়কারী হুলিও হাবিয়ে মাদ্রিদ, ‘‘মায়া বাদামগুলো আমার খুব ভালো লাগে, কেননা ওগুলো খেতে খুব ভালো৷ আবার স্বাস্থ্যকরও বটে৷ এই বাদামে নানারকম পুষ্টিকর পদার্থ আছে, আবার অনেক ভিটামিনও আছে৷''

মায়া বাদাম থেকে তৈরি পণ্য কিছুটা স্থানীয় ভাবে বিক্রি হলেও, তার অধিকাংশ রপ্তানি করা হয় বিদেশে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে৷

এ পর্যন্ত আটটি কমিউন মায়া গাছের বাদাম বা তা থেকে তৈরি পণ্য বিক্রি করে থাকে৷ ক্রমেই আরো বেশি পরিবার এই কাজ থেকে কিছু কিছু রোজগার করছে৷

জঙ্গলও তা থেকে উপকৃত হচ্ছে, কেননা দেখা গেছে, মায়া গাছের জঙ্গলের যে সব অংশে মানুষের বাস, সে সব এলাকায় জঙ্গল ভালোই আছে৷ স্থানীয় অধিবাসীরা গাছপালাগুলোর জন্য দায়িত্ব বোধ করেন ও সেগুলোকে রক্ষা করেন৷ জঙ্গলের মনুষ্যবিহীন এলাকাগুলোয় কিন্তু বেআইনি কাঠ কাটা চলেছে নির্বিচারে৷ জিআইজেড-এর ইয়াপ শোর্ল বলেন, ‘‘মানুষ ছাড়া জঙ্গলকে রক্ষা করা যায় না৷ কাজেই জঙ্গলকে বাঁচানোর জন্য মানুষের প্রয়োজন৷ আর সেই সব মানুষদের জঙ্গল থেকে টাকা রোজগারের কোনো না কোনো পন্থা থাকা চাই, নয়ত কোনো লাভ হবে না৷''

গুয়াতেমালা কথাটার মানে হলো ‘গাছের দেশ'৷ কিন্তু মানুষ না বদলালে হয়ত নাম বদলাতে হতে পারে!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ