ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই রীতি মেনে আগস্টে তদারকি সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন শরীফ।
বিজ্ঞাপন
রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জানিয়ে দিলেন, তিনি রীতি মেনে চলবেন। অগাস্টেই তিনি তদারকি সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। এরপর পাকিস্তানে নির্বাচন হবে।
সংবাদপত্র দ্য ডন জানাচ্ছে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১২ অগাস্ট। শাহবাজ শরীফ ইঙ্গিত দিয়েছেন, হয়ত তার আগেই ক্ষমতা হস্তান্তর হতে পারে। শিয়ালকোটে একটি জনসভায় শরীফ বলেছেন, ''আগামী মাসে আমাদের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সম্ভবত একটু আগেই আমরা তদারকি সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেব। আর নির্বাচনে জিততে পারলে নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বে পাকিস্তানে নবযুগ আনব।''
শাহবাজ শরীফ: ব্যবসায়ী থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হলেন পিএমএল-এন নেতা শাহবাজ শরীফ৷ ব্যবসা সংগঠনের নেতৃত্ব, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব, বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকার পর কঠিন এক সময়ে সরকার প্রধান হলেন তিনি৷ ছবিঘরে জানুন তার বিস্তারিত৷
ছবি: picture alliance/dpaEPA/PMLN
ব্যবসায়ী পরিবার
মিয়া মোহাম্মদ শাহবাজ শরীফের জন্ম ১৯৫১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের লাহোরে৷ তার বাবা ছিলেন শিল্পপতি মিয়া মোহাম্মদ শরীফ৷ স্নাতক শেষ করে শাহবাজ শরীফ নিজেও পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘ইত্তেফাক’-এর হাল ধরেন৷ ১৯৮৫ সালে তিনি লাহোর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW/T. Shahzad
রাজনীতির ময়দানে
১৯৮৮ সালে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ব্যবসায়ী শাহবাজ৷ ১৯৯০ সালে এমএনএ নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের নেতা হয়ে ওঠেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
লিডার অব দ্য হাউজ
পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের নেতা হিসেবে সাফল্যের পথ ধরে ১৯৯৭ সালে তিনি লিডার অব দ্য হাউজ নির্বাচিত হন৷ তখন তিনি কঠোর প্রশাসক হিসেবেও নাম কুড়ান৷ পাঞ্জাব প্রদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন তিনি৷
ছবি: DGPR Pakistan
গ্রেপ্তার ও নির্বাসন
১৯৯৯ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ পিএমএল-এন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে৷ সেই সময় গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীতে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে পরিবারসহ নির্বাসিত হন সৌদি আরবে৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন
জেদ্দাহ ও লন্ডনে থাকাকালে বেশ কয়েক বছর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন শাহবাজ৷ ২০০৭ সাালের ২৫ নভেম্বর ভাই নওয়াজ শরীফের সঙ্গে পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন৷ এরপর থেকে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় তিনি৷ ২০০৯ সালে পাঞ্জাবের ২১তম মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷ প্রদেশের উন্নয়নে এসময় বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প নেন৷ তার সামাজিক প্রকল্প ‘সস্তা তন্দুর’ এবং ‘আশিয়ানা ঘর’ প্রশংসা কুড়ায়৷ দুর্নীতি দমনে কঠোর অবস্থানও নেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Raza
বিরোধী দলীয় নেতা
২০১৩ সালে তৃতীয় দফা পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শাহবাজ৷ ২০১৮ সালে পিএমএল-এন পরাজিত হলে এই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে৷ এসময় তিনি জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন৷ ২০১৯ সালে অর্থ পাচারের অভিযোগে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো তার ও তার সন্তানের নামে থাকা ২৩ সম্পত্তি জব্দ করলে বিপাকে পড়েন শাহবাজ৷ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে জামিন পান শাহবাজ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
প্রধানমন্ত্রীর দুয়ার
চলতি বছরের মার্চে জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো৷ নানা নাটকীয়তার পর ইমরান খান সেই অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন৷ প্রধানমন্ত্রীত্বের দুয়ার খোলে শাহবাজের জন্য৷ বিদেশ নীতির ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক সংকটসহ যেসব কারণে ইমরান ক্ষমতা হারিয়েছেন, সেগুলো সামাল দেয়াই এখন পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: picture alliance/dpaEPA/PMLN
এক পরিবারের দুই প্রধানমন্ত্রী
দ্বিতীয়বারের মতো এক পরিবার থেকে দুই প্রধানমন্ত্রী পেলো পাকিস্তান৷ ১৯৯০ সালে এবং ১৯৯৭ সালে দুই দফা প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শাহবাজ শরীফের ভাই নওয়াজ শরীফ৷ এর আগে ১৯৭৩ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তারপর ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তার মেয়ে বেনজির ভুট্টো৷ ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়বারের জন্যেও নির্বাচিত হয়েছিলেন আতাতায়ীর হামলায় নিহত বেনজির৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
8 ছবি1 | 8
শরীফ বলেছেন, ''ইমরান খানের পিটিআই সরকার চার বছর ধরে কী কাজ করেছে এবং তারা এক বছরে কী করেছেন, তা বিচার করেই যেন ভোটদাতারা ভোট দেন।''
শরীফের দাবি, তার দাদা নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানে লোডশেডিং সমস্যার সমাধান করেছেন। যুবকদের ল্যাপটপ দিয়েছেন, ঋণ দিয়েছেন, চীন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোরকে বাস্তবায়িত করেছেন। তিনি যোগ্য রাষ্ট্রনেতা। তা সত্ত্বেও তাকে ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়েছে।
ইমরান খানের সমালোচনা করে শাহবাজ বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি সমানে প্রতিহিংসার রাজনীতিকে হাতিয়ার করেছেন।
ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পর দুইদিন ধরে পেশোয়ারে তাণ্ডব চালিয়েছেন পিটিআই কর্মীরা। বিভিন্ন ভবন, বাস, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। অবাধে ভাঙচুর চলেছে। ইমরান নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পর তারা আবার রাস্তায় নেমে বিজয়োৎসব করেছেন।
ছবি: Muhammad Sajjad/AP Photo/picture alliance
ইমরানের ছবি নিয়ে
পাকিস্তানের প্রায় সর্বত্রই একই দৃশ্য দেখা গেছে। ইমরান খানের ছবি-সহ পোস্টার, ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমে আনন্দে মেতেছেন কর্মীরা।
ছবি: Muhammad Sajjad/AP Photo/picture alliance
অধিকাংশ নেতাই গ্রেপ্তার
সহিংসতায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে ইমরানের দলের অধিকাংশ নেতাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাবেক যুবকল্যাণ মন্ত্রী উসমান ডর বলেন, সব কর্মী যেন রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করেন। এভাবেই ইমরানকে সমর্থন করার বার্তা পৌঁছে দেয়া যাবে। তারপর প্রচুর কর্মী রাস্তায় নামেন। উপরের ছবিটি পিটিআই নেতা কুরেশির। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
সুপ্রিম কোর্টের বাইরে
কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের বাইরে পৌঁছে গিয়েছিলেন কয়েকজন সমর্থক। প্রধান বিচারপতির নির্দেশের কথা জানার পর তারা উল্লাসে ফেটে পড়েন। একটু দূরে দাঁড়ানো নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের আর কিছু বলেনি।
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
কঠোর নিরাপত্তা
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আশপাশে নিরাপত্তা প্রচুর বাড়ানো হয়। আদালতের অনুমতিতে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে বিচারপতিরা যে গেট দিয়ে ঢোকেন, সেখান দিয়েই ইমরানের গাড়ি ঢোকানো হয়।
ছবি: Aamir Qureshi/AFP
মরিয়ম নওয়াজ ক্ষুব্ধ
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এনের নেত্রী মরিয়ম নওয়াজ জানিয়েছেন, তারা এই রায়ে একেবারেই খুশি নন। প্রধান বিচারপতির উচিত ইস্তফা দিয়ে ইমরানের দলে যোগ দেয়া। তার দাবি, যে ব্যক্তি সরকারি কোষাগারের ছয় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছে, তাকে দেখে প্রধান বিচারপতি কী করে এত খুশি হন?
ছবি: Arshad Butt/AP/dpa/picture alliance
পাক অর্থনীতিতে আঘাত?
এমনিতেই পাকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় দুইদিন ধরে পিটিআই কর্মীরা নির্বিচারে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করেছেন। প্রচুর ভবন, বাস, গাড়ি ও অন্য সম্পত্তি পুড়িয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন দোকান লুট করা হয়েছে, বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর তছনছ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এর ফলে অর্থনীতির হাল আরো খারাপ হবে বলে ক্ষমতাসীন জোট অভিযোগ করেছে।
ছবি: Muhammad Sajjad/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
ইমরানের হুমকি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হুমকি দিয়ে বলেছেন, তার দল পিটিআই-কে সরকার যদি নিষিদ্ধ করে, তাহলে তিনি নতুন দল গঠন করবেন এবং নির্বাচনে জিতবেন।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, পিটিআই-কে নিষিদ্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হবে। তারপরই শনিবার ইমরান এই মন্তব্য করেছেন।