ইউক্রেন ও করোনা সংকটের জের ধরে ভবিষ্যতেও মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামলাতে জার্মান সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করছেন চ্যান্সেলর শলৎস৷ বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা বিশ্ব অর্থনীতির উপর কালো ছায়া ফেলছে৷ কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাতের ফলে মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারের অবস্থা কঠিন হয়ে উঠছে৷ জার্মানির সরকার গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপর বাড়তি বোঝা কিছুটা হলেও কমানোর চেষ্টা করছে৷ কিন্তু সেই সব উদ্যোগের কার্যকরিতা নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি সরকারের ভরতুকি বহন করার ক্ষমতার সীমা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে জোট সরকার বর্তমান মূল্যস্ফীতির ধাক্কা থেকে সাধারণ মানুষকে কিছুটা রেহাই দিতে জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ বিশেষ করে পরিবহণ ও জ্বালানির মূল্যের ক্ষেত্রে সরকার বেশ কিছু সাময়িক ছাড় দিচ্ছে৷ পেট্রোল-ডিজেলের মূল্য কমানো, সস্তায় গণপরিবহণ ব্যবস্থা, জ্বালানির উচ্চ মূল্যের ধাক্কা সামলাতে এককালীন ভাতার মতো কিছু স্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷ তবে ইউক্রেন ও করোনা সংকট এখনো দূর হবার কোনো লক্ষণ দেখা না যাওয়ার ফলে সরকারকে ভবিষ্যতেও এমন উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করছেন শলৎস৷ অর্থাৎ শুধু তিন মাসের কর্মসূচির জন্য ২,০০০ কোটি ইউরো অংকের বাড়তি ব্যয় দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে যথেষ্ট হবে না বলে তিনি মনে করছেন৷ তার মতে, এই সব পদক্ষেপের মাধ্যমে চলতি বছর মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কার ৯০ শতাংশ সামলানো সম্ভব হলেও ভবিষ্যতে আরও এমন উদ্যোগের প্রয়োজন হতে পারে৷
বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর ১৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার সময়ে বলেন, এখনই এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করার প্রয়োজন রয়েছে৷ আগামী বছরও জার্মানির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ থাকবে বলে তিনি মনে করছেন৷ ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেকও এমন সাবধানবাণী শুনিয়েছেন৷ তাঁর মতে, মূল্যবৃদ্ধির কারণে আগামী বছর সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা রয়েছে৷ বিশেষ করে শীতের মাসগুলিতে ঘর গরম রাখার ব্যয় অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেলে প্রবল ক্ষোভ দেখা দিতে পারে বলে হাবেক মনে করছেন৷
এমন লাগাতার অনিশ্চয়তার মুখে জার্মান চ্যান্সেলর ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি কর্মদাতা ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গেও অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ তার মতে, ভবিষ্যতে বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবার প্রয়োজন রয়েছে৷ কারণ এভাবে সরকারি ব্যয়ের সীমা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে৷ অর্থাৎ দেশের সব মানুষের জন্য ভবিষ্যতে এমন উদার ভরতুকির ব্যবস্থা নাও করা হতে পারে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
৯ ইউরোর টিকিটে ঘোরার জন্য জার্মানির সবচেয়ে সুন্দর কয়েকটি রুট
জার্মানিতে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে ৯ ইউরো বা সাড়ে আটশ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কেনা যাবে৷ এই টিকিটে ট্রেনে করে জার্মানির যে কোনো জায়গায় যাওয়া যাবে৷
ছবি: Peter Schickert/picture alliance
ব্ল্যাক ফরেস্ট
এটি সম্ভবত জার্মানির ট্রেন ভ্রমণের ইতিহাসে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অফার৷ মাত্র ৯ ইউরো বা সাড়ে আটশ টাকা খরচ করে কেনা টিকিট দিয়ে পুরো এক মাস ট্রেনে (দ্রুতগামী ট্রেন ছাড়া) করে জার্মানির যে কোনো জায়গায় যাওয়া যাবে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বাড়তি খরচ সামাল দিতে সরকার এই অফার নিয়ে এসেছে৷ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ব্ল্যাক ফরেস্ট রুটে ঘুরে আসা যেতে পারে৷
ছবি: Jürgen Wiesler/Zoonar/picture alliance
আপার মিডল রাইন
বিঙেন, ব়্যুডেসহাইম ও কোবলেনৎসের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া এই রুটে চলার সময় ট্রেনের জানালা দিয়ে দুর্গ আর মনোরম সব গ্রাম দেখা যাবে৷ আরও চোখে পড়বে আঙুর খেত৷
ছবি: Peter Schickert/picture alliance
মোজেল রিভার রুট
কোবলেনৎস শহরে রাইন ও মোজেল নদী একসঙ্গে মিশেছে৷ জার্মান ট্রেন সংস্থা ডয়চে বানের মোজল রুট শুরু হয়ে কোবলেনৎস থেকে৷ শেষ হয় কার্ল মার্ক্সের জন্মভূমি ট্রিয়ারে গিয়ে৷ পথে পড়বে কখেমের মতো অসাধারণ সুন্দর গ্রাম৷ আঙুর ক্ষেত আর দুর্গতো আছেই৷ মন চাইলে কোথাও নেমে ওয়াইনের স্বাদও গ্রহণ করা যেতে পারে৷
ছবি: Peter Schickert/picture alliance
স্টুটগার্ট-লিন্ডাও
জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত লেক কন্সটান্সের জার্মান অংশের দ্বীপ শহর লিন্ডাও৷ স্টুটগার্ট থেকে আরই৫ ট্রেনে চড়ে সেখানে যাওয়া যায়৷ চলতি পথে বুনো ফুলের অবারিত মাঠ আর প্রকৃতি এবং আল্পসের দৃশ্য দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে৷
ছবি: Werner Thoma/Zoonar/picture alliance
মিউনিখ-জালৎসবুর্গ
জার্মানির মিউনিখ থেকে যাত্রা শুরু করে ৯ ইউরোর টিকিট দিয়ে আপনি চলে যেতে পারবেন অস্ট্রিয়ায় মোৎসার্টের জন্মভূমি জালৎসবুর্গে৷
ছবি: fabio lotti/Zoonar/picture alliance
হামবুর্গ-জ্যুলট
জার্মানির অন্যতম আকর্ষণীয় দ্বীপ জ্যুলট৷ হামবুর্গের আলটোনা থেকে আরই৬ ট্রেনে চেপে চার ঘণ্টারও কম সময়ে সরাসরি জ্যুলটে চলে যাওয়া যায়৷
ছবি: Axel Heimken/dpa/picture alliance
ড্রেসডেন-ডিয়েচিন, চেক প্রজাতন্ত্র
ড্রেসডেন থেকে শুরু করে যেতে পারেন বাড শান্ডাও পর্যন্ত৷ বেশিরভাগ পথই এলবে নদীর ধার ঘেঁষে চলে গেছে৷ এছাড়া দেখতে পাবেন অদ্ভুত গঠনের স্যান্ডস্টোনের পাহাড়৷ স্যাক্সোন সুইজারল্যান্ড জাতীয় পার্কের জার্মান অংশে হাইকিংয়ের জন্য হাইকাররা বাড শান্ডাও থেকে যাত্রা শুরু করেন৷ চাইলে বাড শান্ডাও থেকে চেক প্রজাতন্ত্রের ডিয়েচিন পর্যন্ত চলে যাওয়া যাবে৷ সেখানে আছে জাতীয় পার্কের চেক অংশ- বোহেমিয়ান সুইজারল্যান্ড৷
ছবি: Michal Fludra/NurPhoto/picture alliance
গেরা-শেব, চেক প্রজাতন্ত্র
ইটের তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেতু গ্যোলচ্স ভায়াডাক্ট দেখতে চাইলে গেরা থেকে আরবি৪ বা আরবি২-তে চড়তে পারেন৷ ট্রেন আপনাকে নিয়ে যাবে চেক প্রজাতন্ত্রের শেব পর্যন্ত৷
ছবি: Wolfgang Thieme/dpa/picture-alliance
মিউনিখ-টেগানজে লেক
আল্পসে ঘেরা জার্মানির অন্যতম যাদুময় স্থান টেগানজে লেক৷ মিউনিখ থেকে সেখানে ট্রেনে করে পৌঁছানো যাবে৷ লেকের পাড়ে অবস্থিত দুটি সুন্দর শহর হচ্ছে গুমুন্ট ও টেগানজে৷
ছবি: Matthias Balk/dpa/picture alliance
বার্লিন-বাল্টিক সাগর
বার্লিনবাসী গ্রীষ্মে বাল্টিক সাগরপাড়ের বিভিন্ন শহরে যেতে পছন্দ করেন৷ ছবিতে তেমনই একটি শহর দেখতে পাচ্ছেন, নাম স্ট্রালসুন্ড৷ তবে ডয়চে বান বলছে আগস্ট মাসে ট্রেনে ভিড়ের কারণে সাইকেল হয়ত নাও নেয়া যেতে পারে৷ তাই গন্তব্যে পৌঁছে সাইকেল ভাড়া নেয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন৷