আগামী মাসে বাজেট ঘোষণা করা হবে৷ এরইমধ্যে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে৷ বাজেটের আকার হতে পারে ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭৪ হাজার তিন কোটি টাকা বেশি৷
বিজ্ঞাপন
করোনা, ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশে দুর্নীতি- এই তিনটি বিষয় সরাসরি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চেপে ধরেছে৷ মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জিডিপির ভালো প্রবৃদ্ধি সাধারণ নাগরিকদের স্বস্তি দিচ্ছে না৷ কিন্তু কেন?
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেটকে এক বছরের সাধারণ আয়-ব্যয়ের হিসাব হিসেবে দেখলে চলবে না৷ বাজেট বাস্তবায়ন নীতি স্পষ্ট থাকা দরকার, আর দরকার দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থপাচার রোধ এবং প্রবৃদ্ধির সুফল যেন সবাই পায় তার জন্য নীতি নির্ধারণ৷
ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকনোমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘প্রবৃদ্ধি হলে, মানুষের আয় বাড়লে ট্যাক্স আদায়ও তো বাড়বে৷ সেটা তো বাড়ছে না৷ তাহলে যাদের আয় সত্যিকার অর্থেই বাড়ছে তারা কি ট্যাক্স দিচ্ছেন? তারা যদি ট্যাক্স দিতেন তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য সরকার তা কাজে লাগাতে পারত৷''
তার কথা, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষকে অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷ এটা বৈশ্বিক প্রভাব ছাড়াও অভ্যন্তরীণ মনিটরিং ব্যবস্থার অভাবের কারণে প্রকট হয়েছে৷ আর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গরিব মানুষের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেটা কি তারা ঠিকমত পাচ্ছেন?''
এবারের বাজেটে রাজস্ব আয় চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হতে পারে৷ ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা৷ বাজেটে ভর্তুকি এবং প্রণোদনা বাড়তে পারে৷ এই দুই খাতে বরাদ্দ থাকতে পারে ৭২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ১৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বেশি৷
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ, সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ঘাটতি বাজেটে অর্থের সংস্থানই এবারের বাজেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন৷ তিনি আরো যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বলেন তার মধ্যে রয়েছে:
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘বেসরকারি খাতে এখন যা অবস্থা তাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে চাইবেন না৷ আর সেটা যদি হয় তাহলে কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হবে৷ করোনায় অনেকে কাজ হারিয়েছেন, অনেকের আয় কমে গেছে তাই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকার নিজেই এখন খরচ কমানোর কথা বলছে৷ এটা করতে হলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে৷ বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে৷ কম গুরুত্বপূর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিতে হবে৷ গত বাজেটে দেখেছি ৩২টি প্রকল্প আছে যার প্রতিটির জন্য বরাদ্দ মাত্র এক লাখ টাকা করে৷ এই ধরনের প্রকল্প নেয়াই হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়৷ রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো প্রকল্প নেয়া যাবে না৷''
‘‘সরকারের পরিচালন ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হবে৷ অর্থপাচার বন্ধ করতে পারলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে৷ সামনে নির্বাচন৷ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক প্রকল্প নেয়া হয়৷ এখন দেখা যাক সরকার সেটাকে কীভাবে লাগাম টেনে ধরে,'' বলেন এই অর্থনীতিবিদ৷ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যে চরম সংকটে আছে তা থেকে তাদের মুক্তি দিতে না পারলে আরো সংকট তৈরি হবে৷ তাই বাজার মনিটরিং-এ সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এটা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারকে টিসিবির কার্যক্রম জোরদার করতে হবে৷ টিসিবির মাধ্যমে তেলসহ আরো অনেক ভোগ্যপণ্য আমদানি করা যেতে পারে৷ বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে৷ আর সরকারকে সামাজিক নিরাপত্তায় আরো বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে না, এটা যারা প্রাপ্য তারা যেন পায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷''
বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
তার কথা, ‘‘ইনফ্লেশন কমানো একটা কৌশলগত ব্যাপার৷ এটা কমালে আবার সুদের হার বাড়বে৷ তখন উৎপাদন ও কর্মস্থানে প্রভাব পড়ে৷ এই দুইটির একটা ভারসাম্য তৈরি করতে হবে৷ আমদানি ব্যয় কমাতে হবে৷ আর স্বল্প মেয়াদে হলেও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘করোনার সময় রিজার্ভ বেড়েছিল৷ কিন্তু এখন রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে৷ কোভিডের সময় রেমিটেন্স ভালোই এসেছে৷ আবার আমদানি কম হয়েছে৷ কিন্তু এখন তো আমদানি বেড়ে গেছে৷ আমরা তখনই বলেছিলাম যে এই অবস্থা থাকবে না৷ এখন কোভিড রিকভারির সময়৷ তাই চাপ পড়ছে৷ বাজেটে এই চাপ থেকে বের হওয়ার একটা কৌশল থাকতে হবে৷''
আর বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় এখন দুর্নীতি বন্ধ ও রাজস্ব আদায়ে জিরো টলারেন্সে যেতে হবে৷ শুধু টার্গেট দিয়ে লাভ হবে না৷ কিন্তু এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারকরা পলিসি নির্ধারণে কতটা আন্তরিক হবেন তা নিয়ে ড. নাজনীন আহমেদ সন্দেহ পোষণ করেছেন৷
এই দুই অর্থনীতিবিদের মতে, অর্থনীতির এখন নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে৷ তাই পরিকল্পনা অনেক সুচিন্তিত হওয়া প্রয়োজন৷ মাথায় থাকতে হবে সাধারণ মানুষের স্বস্তি৷ তাদের জীবনযাত্রার খরচ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে৷ কারণ সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি৷ তাদের যদি স্বস্তি দেয়া যায় তাহলেই বাজেট সফল হবে বলে মনে করেন তারা৷
দুদকের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান
২০০৪ সালে দুদক যাত্রা শুরু করে৷ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ড. ইফতেখারুজ্জামানের দাবি, দুদক চুনোপুঁটিদের ধরে, রাঘব বোয়ালদের ধরে না৷ তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলমের দাবি, বিএনপিপন্থিরা এসব কথা বলেন৷
ছবি: bdnews24.com
দুদকের মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে করা দুদকের মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার জজ আদালত৷ এরপর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়৷ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
সাংসদ বদিকে কারাগারে প্রেরণ
২০০৮ ও ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা সম্পদের বিবরণে মিথ্যা তথ্য দেয়া ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কক্সবাজারের সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে মামলা করে দুদক৷ এই মামলায় আত্মসমর্পণের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল৷ তিন সপ্তাহ জেলে থাকার পর জামিন পান বদি৷ এরপর বিচার শেষে ২০১৬ সালে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়৷ সেবারও কদিন জেলে থেকে জামিন পান তিনি৷
ছবি: bdnews24
সচিবদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল
২০১৪ সালে দুদকের তদন্তে চার সচিব ও এক যুগ্ম-সচিবের ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়৷ এরপর তাদের সনদ বাতিল করা হয়৷ তারা হলেন নিয়াজ উদ্দিন মিয়া (স্বাস্থ্য সচিব), এ কে এম আমির হোসেন (পিএসসির সচিব), মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান (বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান) এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দুই ওএসডি কর্মকর্তা মাসুদ সিদ্দিকী (সাবেক সচিব) ও আবুল কাসেম তালুকদার (সাবেক যুগ্ম সচিব)৷
ছবি: bdnews24.com
ফাঁদ মামলা
ঘুসখোর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হাতেনাতে ধরতে দুদক ফাঁদ পেতে থাকে৷ এভাবে ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর করোনার কারণে এমন অভিযান বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০১৯ সালে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ড. এস এম নাজমুল হককে (ছবি) ঘুস নেওয়ার সময় দুদক হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল৷ এছাড়া সাব রেজিস্ট্রার, ভূমি কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশনের উপ-কর কর্মকর্তা পর্যায়ের কর্মকর্তারাও এভাবে গ্রেপ্তার হন৷
ছবি: bdnews24
পুলিশ ও দুদকের সাবেক কর্মকর্তার জেল
এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগে ২০১৯ সালে পুলিশের তৎকালীন ডিআইজি মিজানুর রহমানকে (ডানে) বরখাস্ত করা হয়৷ এর চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক৷ সেই দায়িত্ব পেয়েছিলেন দুদকের তৎকালীন পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির৷ অনুসন্ধান চলার মধ্যেই মিজান দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন বাছির৷ বুধবার মিজানের তিন বছরের কারাদণ্ড হয়৷ আর দুটি মামলার বাছিরের আট বছরের জেল হয়৷
কারাগারে ডেসটিনির এমডি
সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ার অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে ২০২০ সালে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের নামে ২০ লাখের বেশি মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১২ সালে মামলা করেছিল দুদক৷ পরে ওই বছরের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রফিকুল আমীনসহ কোম্পানির অধিকাংশ শীর্ষ কর্মকর্তা৷
ছবি: bdnews24.com
বেসিক ব্যাংকের বাচ্চুর দুর্নীতি পায়নি দুদক
জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ শেখ আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল৷ পরে চাপের মুখে ২০১৪ সালে তিনি পদত্যাগ করেন৷ অনুসন্ধানের পর ২০১৫ সালে ব্যাংকের ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক৷ কিন্তু এর মধ্যে বাচ্চুর নাম ছিল না৷ অথচ ২০১৬ সালে অর্থমন্ত্রী আব্দুল মুহিত দুটি সংস্থার প্রতিবেদনে অভিযোগের সঙ্গে বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ২,৬০০ কোটি টাকা সরায় বলে অভিযোগ ওঠে৷ গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক৷ তারা ৩৮টি মামলা করে৷ বিচার প্রক্রিয়া এখনো চলছে৷ হল -মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, এমডি তানভীর মাহমুদ এখন আটক আছেন৷ এর মধ্যে ২০১৮ সালে দুদকে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় জেসমিন ইসলামের তিন বছরের জেল হয়েছে৷
ছবি: DW
সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডির কারাদণ্ড
২০১১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা থেকে ডিএন স্পোর্টসের নামে ঋণ নিয়ে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে৷ এই ঘটনার তদন্ত করে ২০১৪ সালে ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়৷ এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন এমডি হুমায়ুন কবীরও ছিলেন৷ গত ডিসেম্বরে কবীরসহ ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়৷ হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে দায়ের করা দুদকের বিভিন্ন মামলাতেও আসামি হুমায়ুন কবীর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nabil
ব্যাংক কর্মকর্তার যাবজ্জীবন
ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের দুই কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালে মামলা করে দুদক৷ বিচার শেষে ২০১৬ সালে ব্যাংকের এক কর্মকর্তাসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত৷ শাস্তিপ্রাপ্তরা হলেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেডের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন ও পরিচালক সাইফুল ইসলাম৷ রায়ের সময় সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পলাতক ছিলেন৷
ছবি: Felix Kästle/dpa/picture-alliance
বিনা দোষে জেল
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের এক মামলায় ২০১৬ সালে পাটকল শ্রমিক জাহালমকে (বামে) গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ মামলায় অভিযুক্তের নামের সাথে মিল না থাকলেও তাকে সাজা দেয়া হয়েছিল৷ ঐ ঘটনা গণমাধ্যমে আসার পর তিন বছর জেল খাটার পর হাইকোর্টের নির্দেশে জাহালম মুক্তি পেয়েছিলেন৷ এছাড়া দুদকের ভুল তদন্তের কারণে ১৫ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া নিরপরাধ মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের সাজা গতবছর জানুয়ারিতে বাতিল করে দিয়েছিল হাইকোর্ট৷
ছবি: dnews24.com
বিসমিল্লাহ গ্রুপ
একাধিক ব্যাংক থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি, মুদ্রা পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৩ সালে বিসমিল্লাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান নওরিন হাসিব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলায়মান চৌধুরীসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা করেছিল দুদক৷ এর মধ্যে এক মামলায় ২০১৮ সালে খাজা সোলেমান চৌধুরী, নওরিন হাসিবসহ নয়জনকে দশ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত৷
ছবি: YAY Images/imago images
অর্থ পাচার বিষয়ে দুদকের ভূমিকায় আদালতের অসন্তোষ
২০২০ সালে অর্থ পাচার সংক্রান্ত দুদকের এক প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল৷ জ্যেষ্ঠ বিচারক নজরুল ইসলাম তালুকদার সেইসময় বলেছিলেন, ‘‘বিদেশে এত লোক টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে৷ ক্যানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কারা নিয়ে যাচ্ছে, তাদের একজনের নামও পাননি! উই ওয়ান্ট টু সি দুদক কয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ আপনারা অন্ততপক্ষে এটা দেখান যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷’’
ছবি: bdnews24.com
এ ব্যাপারে দুদক আইনজীবীর বক্তব্য
বাংলাদেশের কে কত টাকা পাচার করেছে- হাইকোর্ট জানতে চাওয়ার নয় মাস পর গত ডিসেম্বরে কর ফাঁকি সংক্রান্ত পানামা ও প্যারাডাইস কেলেঙ্কারিতে উঠে আসা বাংলাদেশের ৪৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা দিয়েছিল দুদক৷ সেই সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন হওয়ায় কেবল ঘুস ও দুর্নীতি থেকে উদ্ভূত (সরকারি কর্মচারীসংশ্লিষ্ট) অর্থ পাচারের অভিযোগ দুদক কর্তৃক অনুসন্ধানযোগ্য৷
ছবি: DW
কোকোর টাকা ফিরিয়ে আনা?
২০১২ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিদেশে পাচার করা অর্থ থেকে প্রায় সাড়ে ২১ কোটি টাকা দেশে ফেরতে আনার কথা জানিয়েছিল দুদক৷ সেই সময় বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, কোকো ও বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই কথিত পাচার করা অর্থ ফেরত আনার কথা বলা হচ্ছে৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০০৪-এ বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ও হাইতি যৌথভাবে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলে বিবেচিত হয়েছিল৷ আর ২০২২ সালের সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে ১৪৭ নম্বরে৷ ২০২১ সালেও একই অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ৷
ছবি: DW
রাঘব বোয়ালদের ধরা হচ্ছে না?
সম্প্রতি রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে চাকরি হারিয়েছেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন (ছবি)৷ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ‘‘রাঘব বোয়ালদের ধরতে গেলে চাকরি হারাতে হয়, যা দুদক গঠনের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত৷’’ তিনি বলেন, ‘‘দুদক যে উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল তা সফল হয়নি৷’’ তবে দুদকের আইনজীবী আ্যাডভোকেট খুরশীদ আলমের দাবি, ‘‘এসব কথা বলছেন বিএনপিপন্থিরা৷’’
ছবি: Privat
সাজার হার কেমন?
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ দাবি করেন, ‘‘আমাদের মামলায় শাস্তি পাওয়ার হার শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ৷ ভবিষ্যতে এটা আরো বাড়বে৷ কারণ দুদকের তদন্তে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে৷ ফরেনসিক ল্যাব করা হচ্ছে৷ ফলে তদন্তে দক্ষতার যে ঘাটতি আছে, তা অনেকটা দূর হবে৷’’