জার্মান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পর এসপিডি দল সরকার গঠনের প্রশ্নে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে৷ এই প্রশ্নে সদস্যদের ভোট নেওয়া হবে৷ আগামী সপ্তাহে সম্ভাব্য মহাজোট সরকারের তিন শীর্ষ নেতাকে একসঙ্গে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে নির্বাচন-পরবর্তী অনিশ্চয়তা কাটাতে বৃহস্পতিবারের দিনটি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷ এদিন জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার এসপিডি দলের প্রধান মার্টিন শুলৎসের সঙ্গে নিভৃতে আলোচনা করেন৷ তবে প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি৷ উল্লেখ্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থায়ী সরকার গঠনের চাবিকাঠি এসপিডি দলের হাতে৷ এতদিনের অনমনীয় মনোভাব ছেড়ে এই দল চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবিরের সঙ্গে মহাজোট সরকার গঠন করলে জার্মানির ক্ষমতাকেন্দ্রে অনিশ্চয়তা কাটতে পারে৷
শুলৎস শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন৷ প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে আলাপ-আলোচনার পর এসপিডি দল জানিয়েছে, তারা নীতিগতভাবে অন্য দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত৷ শুক্রবার শুলৎস বলেন, মহাজোট সরকারে অংশ নেবার প্রশ্নে এসপিডি দলের সদস্যদের রায় নেওয়া হবে৷ কিন্তু তিনি আরও বলেন, রায়ের ফলাফল ইতিবাচক হলেই এসপিডি সরকারের শরিক হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
এদিকে স্টাইনমায়ার আগামী সপ্তাহে সম্ভাব্য মহাজোট সরকারের তিন শীর্ষ নেতাকে একসঙ্গে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ সিডিইউ দলের আঙ্গেলা ম্যার্কেল, সিএসইউ দলের হর্স্ট সেহোফার ও এসপিডি দলের মার্টিন শুলৎস একসঙ্গে প্রেসিডেন্টের ডাক পাওয়ায় মহাজোট গঠনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে৷
নির্বাচনে দলের ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের পর এসিপিডি নেতা মার্টিন শুলৎস সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভোটারদের রায় মেনে তাঁর দল বিরোধী আসনে বসবে, এবার আর মহাজোট সরকারের অংশ হবে না৷ জামাইকা জোট গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পরেও তিনি নিজের অবস্থানে অটল ছিলেন৷ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পর দলকে সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে হলো৷ ফলে শুলৎস পদত্যাগ করবেন, এমন গুজব শোনা যাচ্ছিল৷ কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে৷ নিজের মুখরক্ষা করে নতুন পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে সমর্থন আদায় করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে৷
এসপিডি দল অন্য দলগুলির সঙ্গে আলোচনায় রাজি হলেই যে দ্রুত মহাজোট সরকার গঠন করা সম্ভব হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তাও দেখা যাচ্ছে না৷ ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবির শুরু থেকেই এসপিডি দলের জন্য দরজা খোলা রেখেছে৷ এবার তাদেরই প্রথম উদ্যোগ নিতে হবে৷ মহাজোটের পাশাপাশি অন্য একটি বিকল্পের কথাও এসপিডি মহলে শোনা যাচ্ছে৷ ইউনিয়ন শিবিরের দুই দল মিলে মন্ত্রিসভা গঠন করলে এসপিডি সেই সংখ্যালঘু সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দিতে পারে৷ তবে ম্যার্কেল এমন সমাধানসূত্র মেনে নেবেন, তা মনে করা কঠিন৷
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷