1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আগুনের ঝুঁকিতে ঢাকার হাসপাতাল!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ঢাকার ৪৩৩টি হাসপাতালের মধ্যে ৪২২টি হাসপাতাল, শতকরা হিসেবে ৯৭.৫ ভাগ,  আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ৷ কয়েকবার নোটিশ দেয়ার পরও ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে অনেক হাসপাতালের বিরুদ্ধে৷

Indien Großfeuer in Mumbai
ছবি: Reuters/Poonam Burde

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন লাগার পর এই তথ্য প্রকাশ করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর৷ তালিকার ‘সাধারণ ঝুঁকি' ক্যাটাগরিতে ২৪৯টি হাসপাতালের নাম আছে৷ আর ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ' তালিকায় আছে ১৭৩টি হাসপাতাল৷

এই সব হাসপাতালকে তিন দফা নোটিশ দেয়ার পরও তারা ফায়ার ব্যবস্থাপনার কোনো উন্নয়ন করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এছাড়া অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে আছে ত্রুটিপূর্ণ বা অকার্যকর অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, ফায়ার ফাইটিং টিম এবং ফায়ার অ্যালার্ম না থাকা ইত্যাদি৷

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা সরকারি, বেসরকারি সবগুলো হাসপাতাল সার্ভে করেছি৷ শুধু সার্ভে নয়, আমরা ঝুঁকি নিরূপণ করে সুপারিশও করেছি৷ কোনো হাসপাতালে ফায়ার সিস্টেম সঠিক করতে হলে কী করতে হবে তাও আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি৷ হাসপাতালগুলো খুবই ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ আগুন লাগলে বের হওয়ার মতো কোনো জায়গা বা সিঁড়িও নেই অধিকাংশ হাসপাতালে৷ সরকারি হাসপাতালে স্পেস থাকলেও বেসরকারি হাসপাতালে নেই৷ আবার সরকারি হাসপাতালে বাস্তবে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা বলে কিছুই নেই৷ দু-একটি ফায়ার এক্সটিঙ্গুইসার ঝুলিয়ে রেখেছে৷ ফায়ার টিম নেই, কোনো প্রশিক্ষণ নেই৷ কোনো ফায়ার ড্রিল হয়না৷'' 

আগুন লাগলে বের হওয়ার মত কোনো জায়গা বা সিড়ি নেই অধিকাংশ হাসপাতালে: দেবাশীষ বর্ধণ

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘আমরা দুইবার এই সার্ভে করেছি৷ আজ (মঙ্গলবার) থেকে আবারো সার্ভে শুরু হয়েছে৷ আমরা শুধু হাসপাতালগুলোকে নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও তালিকা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি৷ কিন্তু কোনো কাজ হয়নি৷''

ফায়ারা সার্ভিস এই সার্ভে করেছে ঢাকা জেলায়৷ এতে ঢাকা মহানগর ও আশপাশ এলাকার সরকারি, বেসকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নিরাময় এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷

তালিকায় যাদের নাম

তালিকায় ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ' হাসপাতালের মধ্যে আছে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার ইন্সটিটিউট হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ইএনটি, মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টার, হাইটেক মর্ডান সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, এস.পি.আর.সি অ্যান্ড নিউরোলজি হাসপাতাল, ফার্মগেটের আল-রাজী হাসপাতাল, ব্রেইন এন্ড লাইফ কেয়ার হাসপাতাল, তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিপিএইচডি জেনারেল হাসপাতাল, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, গুলশানের প্রত্যয় মেডিকেল ক্লিনিক, প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেড, গুলশান মা ও শিশু ক্লিনিক, আর এ হাসপাতাল ও বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল৷

হাসপাতালগুলো বড় ধরণের অগ্নিঝুঁকির মধ্যে আছে: ডা. এবিএম হারুন

This browser does not support the audio element.

ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার মধ্যে আছে: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, বারডেম হাসপাতাল, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, মাতৃসদন হাসপাতাল, আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, মনোয়ারা হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ, ল্যাবএইড হাসপাতাল, পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেরিস্টোপ বাংলাদেশ, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল, হলি ক্রিসেন্ট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক কমপ্লেক্স, সিকদার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সরকারি ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতাল, ধানমন্ডি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বিএসওএইচ হাসপাতাল, প্যানোরমা হসপিটাল লিমিটেড ও ধানমন্ডি মেডি এইড জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেড৷

শুধু ঢাকা নয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ শুধু ঢাকা নয়, পুরো বাংলাদেশেই হাসপাতালগুলোর অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার নাজুক অবস্থার কথা স্বীকার করেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি ফায়ার সার্ভিসের তালিকা বা প্রতিবেদন দেখিনি৷ তবে এরইমধ্যে আমরা সারাদেশের হাসপাতালগুলোর ফায়ার সিস্টেম পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি৷ কোথায় কী ধরণের ব্যবস্থা আছে, কী ত্রুটি আছে, কী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তার প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে৷ আমরা ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতাও নিচ্ছি৷ হাসপাতালগুলোতে যেসব অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র এখন আছে, তা কার্যকর আছে কিনা, তাও পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে৷ হাসপাতালগুলোতে ফায়ার অ্যালার্ম নেই৷ কেন নেই আমি জানিনা৷ আমরা অটোমেটেড ফায়ার সিস্টেম চালুর কথা ভাবছি৷''

শুধু ঢাকা নয় পুরো বাংলাদেশেই হাসপাতালগুলোর অগ্নি নিরপত্তা ব্যবস্থা নাজুক: ডা. আবুল কালাম আজাদ

This browser does not support the audio element.

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগ থেকে এগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করার কথা থাকলে তা কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘শুধু অধিদপ্তর নয়, এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও উদ্বিগ্ন৷ আমরা এনিয়ে বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করছি, যারা নিয়মিতভাবে এই পরিদর্শনের কাজ করবে৷''

হাসপাতাল মালিকদের প্রতিক্রিয়া

বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিক সমিতির মহাসচিব ডা. এবিএম হারুন শমরিতা হাসপাতালের মালিক৷ এই হাসপাতালটিও আগুনের ঝুঁকির তালিকায় আছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলো বড় ধরণের অগ্নিঝুঁকির মধ্যে আছে৷ তবে যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ভবন হাসপাতাল হিসেবেই তৈরি হয়েছে তাদের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো৷ তবে যেসব হাসপাতাল পরে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবনে করা হয়েছে বা ভাড়া করা ভবনে করা হয়েছে সেগুলোর অবস্থা ভালো নয়৷ সরকারের কাছ থেকে আমাদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ আমরা সেগুলো ফলো করে এখন সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি উন্নয়নের চেষ্টা করছি৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মনিটরিং নেই৷ থাকলেতো অনেক হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার কথা, তাতো হচ্ছেনা৷ আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও এব্যাপারে এখন কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তা করছি৷''

আমি অবসরে তাই বলতে পারি, হাসপাতালের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছাড়াই এখানে কাজ হচ্ছে: ড. কাজী জাহাঙ্গির হোসেন

This browser does not support the audio element.

তিনি অবশ্য দাবি করেন তাঁর শমরিতা হাসপাতালের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো এবং ভবনটি হাসপাতাল ভবন হিসেবেই তৈরি হয়েছে৷

‘বাংলাদেশের ব্যাপারতো, তাই'

সদ্য অবসরে যাওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ড. কাজী জাহাঙ্গির হোসেন হাসপাতালগুলোর ভয়াবহ চিত্রের কথা জানান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি অবসরে গেছি তাই কিছু কথা বলতে পারি৷ আসলে কোনো নীতিমালা ছাড়াই এখানে কাজ হচ্ছে৷ হাসপাতালের নীতিমালা কী হবে, কী থাকতে হবে, তা সুনির্দিষ্ট নয়৷ আবার অনেক সময় কেউ দায়িত্ব পালন করতে চাইলেও পারেন না৷ বাংলাদেশের ব্যাপারতো, তাই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ