আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুদান
৫ এপ্রিল ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত অনুদান দেবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার সকালে নগরীর খিলগাঁও এলাকায় ‘গোড়ান খেলার মাঠ' নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ তথ্য জানান মেয়র তাপস৷ তিনি বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে পর্যাপ্ত অনুদান দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
তিনি বলেন, ‘কোনো দুর্যোগ হলে প্রথম কাজ হলো উদ্ধার তৎপরতা৷ সেটি মঙ্গলবার সম্পন্ন হয়েছে৷ এখন আমরা মানবিক দিকগুলো বিবেচনা করে পরিপূর্ণভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকব৷ আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আজ সকালে কথা হয়েছে৷ উনি বলেছেন, তালিকা করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার পর সকল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্তভাবে অনুদান দেওয়া হবে যাতে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে৷ তারা যেন আবার এই ব্যবসায় নামতে পারে৷ এই অনুদানকে তাদের পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করতে পারে৷ সেই দিকটাই এখন আমাদের সকলের অগ্রাধিকার৷'
বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও মামলার কারণে তা করা যায়নি উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, ‘আমাদের সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল৷ মামলার কারণে সেটা বাস্তবায়ন হয়নি৷ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখন বিপর্যয়ের মধ্যে আছে৷ কিছুদিন সময় দিতে হবে৷ মানবিক দিক নির্ণয় করে তারা যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে- তাদের অনুদান দিয়ে আমরা সেটা নিশ্চিত করব৷ তারপর তারা যাতে সেখানে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে সেজন্য আমরা নতুন একটি পরিকল্পনা নিয়ে তাদের সঙ্গে বসব৷ সেটা নিশ্চিত করার পরই আমরা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করব৷'
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এটি একটি দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে৷ তারপরও এটি কোথা থেকে শুরু হয়েছে এবং কীভাবে শুরু হয়েছে তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে৷
আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবাজারে নতুন করে পাইকারি মার্কেট নির্মাণ করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, আমরা তাদের নিয়ে বসব৷ তারা কীভাবে চান তা জানবো৷ প্রধানমন্ত্রীকেও আমরা ভবনের নকশাটি দেখাব৷ এটা পাইকারি বাজার৷ আমরা এটাকে পাইকারি মার্কেট হিসেবেই তৈরি করব৷ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নতুন ভবনে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, তাদেরই আগে পুনর্বাসিত করা হবে৷
বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে
দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগে৷ এর প্রায় সাত ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আগুনের সূত্রপাত
দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে আগুন লাগে৷ কীভাবে আগুন লাগলো সেটা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা অথবা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি৷
ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP/picture-alliance
অতীতেও ভয়াবহ আগুন
এর আগে ১৯৯৫ সালে গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে দোকানপাট পুড়ে যাওয়ার পর নতুন করে আবার দোকান বসানো হয়৷ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এ মার্কেটে চারটি ইউনিট মিলে প্রায় আড়াই হাজার দোকান ছিল বলে জানা যায়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মালামাল নিয়ে রাস্তায়
আগুন লাগার পর যে যেভাবে পেরেছেন দোকানের মালপত্র সরিয়েছেন৷ বঙ্গবাজার এলাকার আশেপাশের সড়কগুলো কাপড়ের বস্তায় ভরে গেছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সমস্যা বাতাস
ঢাকার গুলিস্তান বঙ্গবাজারে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়েছে বারবার৷ সেখানে কিছুক্ষণ পরপর বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগুন নেভানোর পরেও সে জায়গায় আবারও আগুনের সূত্রপাত হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সকল বাহিনীর সমন্বিত কার্যক্রম
ঢাকার গুলিস্তানের আগুন নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করছেন বিজিবি, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একাধিক দল৷ সকালে বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারের সাহায্যে পানি ছিটানোর কাজ করে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
চোখের সামনে সব পুড়ে শেষ
বঙ্গবাজারের পাশের গলিতেই আহাজারি করতে দেখা যায় শাড়ির ব্যবসায়ী মোঃ সাব্বির আহমেদকে৷ তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার নতুন শাড়ি তুলেছিলেন তিনি৷ চোখের সামনেই আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জনতার ভিড়
বঙ্গবাজারের আশেপাশের এলাকায় হাজার হাজার জনতা ভিড় করে৷ যার ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আগুন পুরোপুরি নেভার আগেই ভবনে প্রবেশ
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা অভিযোগ করেন, আশেপাশের যে সকল ভবনে আগুন লেগেছে, সেসব ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই ব্যবসায়ীরা মালামাল বের করতে ভিতরে প্রবেশ করেছেন৷ এতে যে কোনো সময়ে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
টাকার সিন্দুক উদ্ধার
বঙ্গবাজারের সাদমান গার্মেন্টস-এর স্বত্বাধিকারী মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, তার দোকানের একটি লকার উদ্ধার করা গেছে, এতে ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা ছিল৷ তবে টাকাগুলো অক্ষত আছে কিনা, সেটা তালা ভাঙার আগে বোঝা যাচ্ছে না৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অক্ষত মালামাল উদ্ধারে চেষ্টা
গুলিস্তানের বঙ্গবাজার মার্কেটের নিচতলায় দেখা যায়, সেখানে আগুন নেভানোর সাথে সাথে দোকানের মালিক-কর্মচারী মিলে দোকানের শাটার ভেঙে মালপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছেন৷ তবে সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় কেউই অক্ষত কিছু উদ্ধার করতে পারেননি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন
আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি দোকানের মালিক, কর্মচারী, এলাকাবাসী সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন৷ যে যেভাবে পেরেছেন নিজেদের উদ্যোগে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অভিযোগ
গুলিস্তান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশেই বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগে৷ ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র জানান, খবর পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান৷ তবে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিস যদি ঠিকমতো কাজ করতো তাহলে এত দোকান পুড়ে ছাই হত না৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ক্ষতিগ্রস্ত আশেপাশের ভবনও
গুলিস্তানের বঙ্গবাজার দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের মার্কেট৷ তার উপর সামনে ঈদ-উল-ফিতর হওয়ায় সেখানে কাপড়ের সরবরাহ অনেক বেশি ছিল৷ বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পাশের অ্যানেক্স ভবনসহ অন্যান্য ভবনেও আগুন লেগে যায়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পানির উৎসের অভাব
ফায়ার সার্ভিসের অর্ধশতাধিক গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নিলেও আশেপাশে বড় কোনো পানির উৎস না থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম বারবার ব্যাহত হচ্ছিল৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা ২০১৯ সালে এই ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলাম এবং ব্যানারও লাগিয়েছিলাম৷ এরপর ১০ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল৷ আমার করণীয় যা যা ছিল তা করেছি৷ এরপরেও এখানে ব্যবসা চলছিল৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস
বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতি নিরূপণ করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান৷ তিনি বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যববসায়ীদের ক্ষতি নির্ধারণ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে৷” মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী৷
ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP/picture-alliance
আহত
ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যসহ ৮ জন আহত ও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷
ছবি: Abdul Goni/AFP via Getty Images
17 ছবি1 | 17
পরে মেয়র গোড়ান খেলার মাঠ সংলগ্ন এলাকায় নর্দমা পরিষ্কার কার্যক্রম, পান্থপথ বক্স কালভার্ট এবং আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলে চলমান উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন৷ এ সময় অন্যদের মধ্যে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সোয়ে মেন জো, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম, কাউন্সিলরদের মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মাহবুবুল আলম, ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আনিসুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের ফারজানা ইয়াসমিন বিপ্লবী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷
উল্লেখ্য, ২৫.৬২ কাঠা জমির উপর এই খেলার মাঠের উন্নয়ন কার্যক্রম ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে৷ ৬ কোটি ছত্রিশ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে এই মাঠের উন্নয়ন কার্যক্রমে চারটি প্রবেশ গেট, একতলা একটি বিল্ডিং, একটি ফুটবল খেলার মাঠ, একটি ক্রিকেট নেট পিস, একটি মাল্টিপারপাস কোর্ট, একটি বাস্কেটবল কোর্ট, দুটি গ্যালারি, বাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠ একটি, একটি ব্যায়ামাগার এবং মহিলাদের জন্য বসার স্থান ইত্যাদি সুবিধা সংযোজন করা হবে৷
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৬টায় রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড ঘটে৷ অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা কাজ করেছেন৷ বিমানবাহিনীর দুটি বেল-২১২ ও দুটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার পর্যবেক্ষণ মিশনও আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়৷ এ ছাড়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার সেখানে দায়িত্ব পালন করে৷ প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে৷
আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে৷ এখন পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ নিয়ে কোনো সংস্থা স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেনি৷
বঙ্গবাজারে সব মিলিয়ে আটটি মার্কেটের পাঁচ হাজারের বেশি দোকান ও গুদাম পুড়ে যায়৷