ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল বাড়িতে কেন আগুন লাগলো, তা এখনো পুলিশ বা দমকল কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি।
আগুন লাগার কারণ জানতে তদন্ত করছে অগ্নিনর্বাপণ ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাছবি: Munir Uz Zaman/AFP
বিজ্ঞাপন
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের(সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া রাত পৌনে তিনটা নাগাদ ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিচতলা থেকেই আগুন লাগে।
প্রথম আলো জানিয়েছে, মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছেন, ''শর্ট সার্কিট নাকি গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে বা গ্যাস লিক করার ফলে আগুন লেগেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা জিনিসের কেমিক্যাল পরীক্ষা হবে। তারপর আগুন লাগার আসল কারণ জানা যাবে।''
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকার বেইলি রোডের বহুতল ভবনটিতে আগুন লাগেছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
সিআইডি প্রধান বলেছেন, ''মরদেহ শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তদন্ত করে যদি দেখা যায়, কারো দায়িত্বে অবহেলার জন্য এই ঘটনা ঘটেছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।''
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মঈন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ''ভবনের প্রতিটি তলায় গ্যাস সিলিন্ডার ছিল।'' তার ধারণা, চুলা থেকে বা গ্যাস লিক করে আগুন লাগতে পারে।
র্যাব-৩ এর এএসপি কামরুল হাসান বিডিনিউজ২৪ডটকমকে বলেছেন, ''প্রাথমিক অনুসন্ধান ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, নিচতলা থেকে আগুন উপরের দিকে উঠেছে।''
ভবনের ভেতর থেকে তাদের কর্মীরা ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না বলে ফারায় সার্ভিসের তরফে জানানো হয়েছে।
তারা বলেছেন, ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি ছিল এবং আগুন লাগলে বা কোনো জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরোবার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এছাড়া ভবনটিতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত ছিল না।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেছেন, 'এই ধরনের বাণিজ্যিক ভবনে শুধু একটিমাত্র সিঁড়ি থাকা একেবারেই মেনে নেয়া যায় না।। এটি অগ্নি নিরাপত্তা প্রোটোকলের একটি বড় ত্রুটি।'
রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এই বহুতল ভবনে অনেকগুলি রেস্তোরাঁ ছিল এবং সিঁড়ির পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। তাই আগুন লাগার পর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ও ভয়াবহ রূপ নেয়।
জিএইচ/এসজি(দ্য ডেইলি স্টার, এএফপি, রয়টার্স)
আগুন নেভানোর চমকপ্রদ সব আবিষ্কার
প্রাকৃতিক অগ্নিকাণ্ড সভ্যতার শুরু থেকেই বিপদজনক ঘটনা হলেও শিল্পায়নের এই যুগে মানবসৃষ্ট কারণে এর সংখ্যা বেড়েছে৷ তাই নিত্য গবেষণাও চলে একে মোকাবেলার৷ ছবিঘরে জানুন আগুন নেভানোর কয়েকটি চমকপ্রদ আবিষ্কারের কথা৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
ফায়ারফাইটিং ড্রোন
ড্রোনের সুবিধা হলো এটি নীচে দাঁড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ কয়েকটি কোম্পানি এরই মধ্যে ফায়ারফাইটিং ড্রোন বাজারে ছেড়েছে৷ যেখানে এখন পর্যন্ত ক্রেন দিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ মিটারের কিছু বেশি উচ্চতায় পৌঁছানো যায়, সেখানে অ্যারোনেস কোম্পানির ড্রোনগুলো ৩শ’ থেকে ৪শ’ মিটার উচ্চতায় যেতে পারে এবং এগুলো মিনিটে ১০০ লিটার গতিতে পানি ছিটাতে পারে৷ শুধু তাই নয় ১৪৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজনের কোনো ব্যক্তিকেও এটি তুলে আনতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Tivony
সাউন্ডওয়েভ ফায়ার এক্সটিনগুইশার
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির দুই প্রকৌশল ছাত্র ট্র্যান ও রবার্টসন ২০১৭ সালে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন৷ যদিও আগুন নেভানোর জন্য শব্দের ব্যবহারের আইডিয়া আগে আলোচিত বা পরীক্ষা করা হয়েছে, একে বাস্তব যন্ত্রে রূপান্তর করেছেন এই দু’জন৷ যন্ত্রটি দিয়ে ১০০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তৈরি করে আগুনে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়৷ আর ম্যাজিকের মতো মুহূর্তেই আগুন নিভে যায়৷
ছবি: Youtube
বম্বার্ডিয়ার সিএল ৪১৫
এয়ারক্রাফট ফায়ারফাইটার হলো বিরাট আগুন (যেমন, ওয়াইল্ড ফায়ার) নেভানোর কাজে ব্যবহারযোগ্য বিমান৷ এর মধ্যে বম্বার্ডিয়ার সিএল ৪১৫ ক্যানাডায় তৈরি একটি বোমারু বিমান, যেটি আগুনের মধ্যে বোমার মতো পানি ফেলে অল্প সময়েই নিভিয়ে ফেলে৷ মাত্র ১২ সেকেন্ডে এটি ৬ হাজার ১শ’ ৪০ লিটার পানি ছড়াতে পারে৷ এটি উভচর৷
ছবি: picture-alliance/CTK/J. Sulc
স্কাইক্রেন
স্কাইক্রেনও এয়ারক্রাফট ফায়ারফাইটার৷ এটি একটি মার্কিন হেলিকপ্টার৷ এটিও অনেক দ্রুতগতিতে আগুনে পানি ছিটাতে পারে৷ মাত্র ৪৫ সেকেন্ডে ১০ হাজার লিটার পানি ছিটাতে পারে এই স্কাইক্রেনটি৷ এটি একটি মিলিটারি মডেলের হেলিকপ্টার৷ বিখ্যাত অ্যানিমেশন মুভি ‘দি ইনক্রেডিবল হাল্ক’-এ এই মডেলটি ব্যবহার করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ফায়ারফাইটিং রোবট
ছোট ট্যাঙ্কের মতো এই ফায়ারফাইটিং রোবটগুলো অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি৷ এগুলো আগুনের খুব কাছে পৌঁছে যেতে পারে৷ এগুলো ৮৫ মিটার বা একটি ফুটবল মাঠের দূরত্বে পানি ছেটাতে পারে৷ এগুলো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারে, বাধা অতিক্রম করতে পারে৷ ছোট হলেও সামনে ভারী বস্তু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে পারে৷ দুইজনকে বহন করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/Kalashnikov
ফায়ার এক্সটিনগুইশার বল
এটা বেশ মজার একটি যন্ত্র৷ বলটিতে থাকে আগুন নেভানোর রাসায়নিক পদার্থ ও দাহ্য পদার্থ৷ তাই আগুনের সংস্পর্শে আসলে মাত্র তিন সেকেন্ডের মধ্যে এটি বিস্ফোরিত হয় এবং সেই পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে৷ আগুন নিভে যায়৷ এগুলো বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷
ছবি: Youtube
স্কাই সেভার
ফারুক রূপায়ন টাওয়ার থেকে বাঁচতে অনেকেই অনেক ওপর থেকে লাফ দিয়েছিলেন৷ স্কাই সেভার থাকলে তাঁরা একে একে নিরাপদে নামতে পারতেন৷ এটি শুধু জ্যাকেটের মতো পরে কোনো একটি হুক বা কিছু সঙ্গে ওপরের নবটি আটকে লাফিয়ে পড়তে হয়৷ স্কাই সেভার বডির ওজন অনুযায়ী ব্যক্তিকে অল্পসময়ে আস্তে আস্তে নীচে নামিয়ে নিয়ে আসে৷
ছবি: Youtube
এলইউএফ ৬০
এলইউএফ ৬০ একটি চলনশীল ওয়্যারলেস রিমোট কন্ট্রোল যন্ত্র৷ এটি ১ হাজার ফুট পর্যন্ত সামনের আগুন নিভিয়ে পথ পরিষ্কার করে দেয়৷ এছাড়া মিনিটে ১ হাজার ৮শ’ লিটার পানি ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ছুড়তে পারে৷ বিদ্যুৎ চলে গেলে এতে ম্যানুয়েল কন্ট্রোলও আছে৷ বিশেষ করে ওয়্যারহাউস বা আন্ডারগ্রাউন্ডে আগুন নেভানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সহজেই এর মাধ্যমে করা যায়৷
ছবি: Imago Images/imagebroker/strussfoto
হাই ফগ
কোনো অফিস ঘর বা হোটেল রুমে যেসব সাধারণ স্প্রিঙ্কলারগুলো রয়েছে, তাতে আগুন নেভাতে নেভাতে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়৷ হাই ফগ এর চেয়ে দশগুণ বেশি গতিতে কাজ করে৷ এর বিশেষত্ব হলো এটি প্রচণ্ড বেগে কুয়াশার মতো পানি ছোড়ে, যা শুধু আগুনই নেভায় না, পরিবেশের তাপমাত্রা কমায় ও আগুনে অক্সিজেনের সরবরাহে বাধা দেয়৷ তাতে আগুন খুব দ্রুত নিভে যায়৷
ছবি: Youtube
অটো ফায়ারম্যান
গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা সচরাচর না ঘটলেও এটি খুব বিপদজনক৷ এই বিপদ এড়াবার জন্য রয়েছে অটো ফায়ারম্যান৷ গাড়ির ইঞ্জিনে একজোড়া অটো ফায়ারম্যান লাগিয়ে রাখলে তা তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বা আগুন লেগে গেলে গ্যাসের মতো করে কেমিক্যাল রেজিন ছড়াতে থাকে৷ তাতে আগুন নিভে যায়৷
ছবি: Youtube
স্মার্ট ডিটেকটরস
কোথাও আগুনের সূত্রপাত ঘটলে তা ছড়িয়ে পড়ার আগে জানা গেলে তা নেভানো সহজ৷ স্মার্ট ডিটেকটর বিভিন্ন ধরনের ধোঁয়াকে আলাদা করতে পারে৷ যেমন, কোনটা চুলার রান্নার ধোঁয়া, কোনটা সত্যি আগুনের ধোঁয়া ইত্যাদি৷ এটি আপনার ফোনে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ধোঁয়ার রিডিং দিতে থাকে৷ যদি কোনো আগুন বা ধোঁয়া বিপদজনক মাত্রায় পৌঁছাতে শুরু করে তখনই এটি আপনাকে এবং ফায়ার সার্ভিস বিভাগকে জানিয়ে দেবে৷