আগুন নিয়ে গুজব, রেললাইনে যাত্রীরা, পিষে দিলো ট্রেন, মৃত ১২
২৩ জানুয়ারি ২০২৫
ট্রেনে আগুন লেগেছে এই গুজবের জেরে প্রাণ বাঁচাতে পাশের লাইনে নামলেন ট্রেনের যাত্রীরা। অন্য ট্রেন পিষে দিলো তাদের।
বিজ্ঞাপন
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের জলগাঁওতে। বুধবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ পারধানে ও মায়েজি স্টেশনের মধ্যে চেইন টানার ফলে থেমে যায় পুস্পক এক্সপ্রেস। এই চেইন টানা হয়েছিল আগুনের গুজব শুনে। একটি কামরায় কেউ 'আগুন লেগেছে, আগুন লেগেছে' বলে চিৎকার করে ওঠে। চেইন টানার পর ট্রেন থামতেই হুড়মুড় করে কিছু যাত্রী প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে পাশের লাইনে গিয়ে দাঁড়ান। এমন সময় উল্টোদিক থেকে দ্রুতগতিতে আসে কর্ণাটক এক্সপ্রেস। তারপর সেই যাত্রীর অনেককে পিষে দেয় কর্ণাটক এক্সপ্রেস। এর ফলে ১২ জন মারা গেছেন।
যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে তা একটি বাঁকের মুখে। তাই কর্ণাটক এক্সপ্রেসের চালক আগে থেকে লাইনে নেমে দাঁড়ানো যাত্রীদের দেখতে পাননি। দেখার পর তিনি এমার্জেন্সি ব্রেক লাগিয়েছিলেন, হর্ম বাজিয়েছিলেন। কিন্তু তখন দেরি হয়ে গিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যারা রেললাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা প্রাণ বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। কয়েকজন পেরেছেন, ১২ জন পারেননি।
প্রত্যক্ষদর্শী যা বলেছেন
পুষ্পক এক্সপ্রেসে ছিলেন বিশাল যাদব। তিনি বলেছেন, ট্রেনটি ব্রেক কষার পর কিছু যাত্রী আগুনের ফুলকি দেখতে পেয়েছিল। তারপরই আগুন লেগেছে ভেবে অনেক যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। তিনিও নামতে যাচ্ছিলেন। সেসময় দেখেন অন্য লাইনে ট্রেন আসছে। তখন তিনি আবার ট্রেনে উঠতে যান। এটা করতে গিয়ে হাঁটুতে চোট পেয়েছেন বিশাল।
ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনার ভয়াবহ ছবি
একসঙ্গে দুর্ঘটনায় তিনটি ট্রেন। দুইটি যাত্রীবাহী ও একটি মালগাড়ি। ভারতের ওড়িশায় এই ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একে অন্যের উপরে
কলকাতার শালিমার থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। আর বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়া আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথমে সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস লাইনচ্যূত হয়। তারপর করমণ্ডল এক্সপ্রেসেরও একই দশা হয়। তারপর একটা মালগাড়ি ধাক্কা মারে। ট্রেনের কামরা, ইঞ্জিন একে অন্যের উপর উঠে যায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘটনাস্থলের চেহারা
একের পর এক কামরা উল্টে পড়ে আছে। কোনওটা পুরো উল্টে গেছে। লাইনের পাশে নয়ানজুলিতে পড়েছে কয়েকটি কামরা। সবমিলিয়ে ভয়ংকর অবস্থা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কামরার হাল
দুর্ঘটনার পর ট্রেনের কামরাগুলির এরকম অবস্থা হয়। কামরায় থাকা অনেক যাত্রী প্রাণ হারান। প্রচুর মানুষ আহত। অনেকের আঘাত গুরুতর।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শুধু মৃত্যুর ছবি
একের পর এক কামরা থেকে বের করা হচ্ছে মৃতদেহ। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৬১ জন মারা গেছেন। আহত ৬৫০ জন। অনেকেই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী করে হলো?
রেল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলে তবেই বোঝা যাবে কেন এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার আগে কারণ বলা সম্ভব নয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
উল্টে গেছে কামরা
কিছু কামরা এভাবেই উল্টে গেছে। দুর্ঘটনাস্থলের ছবি ভয়ংকর। এখনো অনেকে ভিতরে আটকে আছেন বলে স্থানীয় মানুষ মনে করছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিরল ঘটনা
তিনটি ট্রেনের এভাবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা বিরল। সাধারণত একটি বা দুইটি ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। তিনটি ট্রেন কীভাবে দুর্ঘটনায় পড়লো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে রেল মন্ত্রণালয় এখন এই সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
উদ্ধারে সাধারণ মানুষ
আশপাশের সাধারণ মানুষই দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে হাত লাগান। তবে কামরাগুলির অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, তারা অনেক ক্ষেত্রে কিছু করতে পারেননি। তবে তারা বেশ কিছু আহতকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এনডিআরএফ নামে
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা ট্রেনের কামরা কেটে ভিতরে ঢোকে। ভিতর থেকে আহতদের বের করে আনে। বের করে আনে একের পর এক মৃতদেহ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যাত্রী রবীন্দ্র সিং যা বললেন
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী রবীন্দ্র সিং ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''ট্রেন ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার বেগে চলছিল। সন্ধ্যা প্রায় সাতটা নাগাদ মনে হলো, চালক এমার্জেন্সি ব্রেক ব্যবহার করেছেন। প্রচণ্ড শব্দ। যাত্রীরা সিট ও বার্থ থেকে ছিটকে পড়লেন। ট্রেন ঘষটে ঘষটে কিছুটা দূরে গেল। কোনোমতে বেরিয়ে দেখি বিশাল দুর্ঘটনা হয়েছে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যাত্রী অর্পিতার অভিজ্ঞতা
নবম শ্রেণির ছাত্রী অর্পিতা কলকাতায় ছুটি কাটাতে আত্মীয়ের বাড়ি এসেছিলেন। ফিরে যাচ্ছিলেন চেন্নাই। ডয়চে ভেলেকে বললেন, ''হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা লাগলো। আমাদের কামরা লাইনের বাইরে চলে গেছিল। আমার গুরুতর আঘাত লাগেনি। বাইরে আসার পর স্থানীয় মানুষ আমাদের একটা বাড়িতে নিয়ে আসেন। সারা রাত বড় উদ্বেগে ও দুঃস্বপ্নে কাটিয়েছি।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যাচ্ছেন মোদী, শাহ, মমতা
বালেশ্বর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে আছেন অমিত শাহ। তারাপ্রথমে দুর্ঘটনাস্থলে যাবেন। তারপর দেখা করবেন আহতদের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দুর্ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। হাওড়ার ডুমুরজলা থেকে হেলিকপ্টারে করে তিনি রওনা হয়েছেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক ঘটনাস্থলে আছেন।
ছবি: Dibyangshu SARKAR/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
রেলের বক্তব্য
বার্তাসংস্থা পিটিআই-কে রেল মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, কামরায় কোনো আগুনের ফুলকি দেখতে পেয়েছিলেন যাত্রীরা। সম্ভবত এটা 'হট অ্যাক্সেল' বা 'ব্রেক বাইন্ডিং' থেকে হয়েছিল। তাকেই আগুন ভেবে ভুল করেছিলেন তারা।
রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর্ণাটক এক্সপ্রেসের চালক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দুর্ঘটনা এড়াতে পারেননি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক জানাচ্ছি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস এখন দাভোসে। তিনি জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দেয়া হবে।
ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা
২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ভারতে ৪০টি ট্রেন দুর্ঘটনায় ৩০৩ জন মারা গেছেন বলে রেল মন্ত্রণালয়ের হিসাব।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট বলছে, ২০২৪-২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ১৫টি রেল দুর্ঘটনা হয়েছে। মূলত যাত্রী ও মালগাড়ি লাইনচ্যূত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে দুইশটি বড় ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে, তার মধ্যে ১৪৫টিই ট্রেন লাইনচ্যূত হয়ে।