বিদেশি টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে৷ এমন উদ্যোগ এতদিন কেন নেয়া হয়নি? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন একাত্তর টিভির অন্যতম স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল বাবু৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে সরকার তো ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তাতে আপনারা কি সন্তুষ্ট?
মোজাম্মেল বাবু: সরকার তো প্রথমে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে৷ বিদেশি কোনো চ্যানেল বিজ্ঞাপনক্যারি করতে পারবে না৷ এটা শুধু বাংলাদেশের না, পৃথিবীর আইন৷ আমরা যখন লন্ডনে ৭১ টিভি চালাই সেখানে আমাদের অ্যাড ফেলে দিতে হয়৷ এই আইন কোনোদিন অনুশীলন করা হয়নি৷ তথ্যমন্ত্রী ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যে দুর্দিন যাচ্ছে সে ব্যাপারে সংবেদনশীল৷ এসব চ্যানেলে বাংলাদেশি অ্যাডও পাচার হচ্ছে৷ হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে৷ ৩০ জুন পর্যন্ত ডিস্ট্রিবিউটররা টাইম চেয়েছিল, সেই সময় শেষ হয়েছে৷ এক্ষেত্রে সরকারের কাছে এর থেকে বেশি কিছু আমাদের চাওয়ার নেই৷
এতদিন কেন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি?
এটাই তো দুঃখ৷ কেন এতদিন এই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি? সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনু সাহেব এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেননি৷ আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি, সে অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রী কাজ করছেন৷ এক্ষেত্রে সাধুবাদ দিতে আমাদের দ্বিধা নেই৷ বর্তমান তথ্যমন্ত্রী আইন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী৷
‘এটা শুধু বাংলাদেশের না, পৃথিবীর আইন'
এখন তো ভ্রাম্যমান আদালত চালানোর কথা বলা হচ্ছে?
ভ্রাম্যমান আদালত চালানোর পাশাপাশি আমরা আশা করব, এই ডিস্ট্রিবিউটররা তো বাংলাদেশের মানুষ, তারা যদি আইন না মানে, তাদেরও আইনের আওতায় আনার সুযোগ আছে৷
দেশি টিভি চ্যানেলের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মালিকরা কি ভূমিকা রাখছেন?
মালিকরা আসলে কী ভূমিকা রাখবেন? তারা তো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ কেবল অপারেটররা বিদেশি চ্যানেল আগে দিয়ে আমাদের পরের দিকে দিতো৷ গ্রামগঞ্জে বহু টিভি আছে যেখানে, ২০-৩০টির বেশি চ্যানেল দেখা যায় না৷ এখন তথ্যমন্ত্রী জন্মের ক্রম অনুযায়ী চ্যানেল সাজানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ প্রথম চারটি সরকারি টিভি চ্যানেল৷ যেমন ৭১ টিভি ক্রম অনুযায়ী ১৯ নম্বর চ্যানেল৷ আগে সরকারি চারটি দেওয়াতে আমাদের চ্যানেল ২৩ নম্বরে দেখা যেতে শুরু করেছে৷
আপনারা কেন এতদিন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি?
এখানে আমাদের চাপ সৃষ্টির বিষয় না৷ সরকার নিজের আইন বাস্তবায়ন করবে৷ আমরা হয়ত বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রী ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল, তার হাত দিয়েই তো এই টিভি চ্যানেলগুলো লাইসেন্স পেয়েছে৷ অতীতে তথ্যমন্ত্রীকে কোনোভাবে উদ্যোগী করা যাইনি৷
বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া প্রতিষ্ঠান
বিজ্ঞাপন, সম্প্রচার, নেটওয়ার্কিং, রেকর্ডিং, চলচ্চিত্র আর সংবাদ- সবকিছুর সমন্বয় মিডিয়া৷ ব্যক্তি থেকে শুরু করে বড় প্রতিষ্ঠানে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত৷ আয়ের দিক থেকে শীর্ষ মিডিয়াগুলোর তালিকা করেছে ফোর্বস এবং ইনভেস্টোপেডিয়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
ওয়াল্ট ডিজনি
মার্কেট পুঁজির দিক থেকে মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে আছে ওয়াল্ট ডিজনি৷ যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে আছে ইএসপিএন, ডিজনি চ্যানেল, এবিসি নেটওয়ার্ক, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের মতো প্রতিষ্ঠান৷ ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত তাদের মার্কেট ভ্যালু ২৪২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ইউএস ডলার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
এটিঅ্যান্ডটি
মার্কেট পুঁজির দিক থেকে মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এটিঅ্যান্ডটি৷ ২০১৮ সালে টাইম ওয়ার্নার অধিগ্রহণ করেছে এটি৷ এইচবিও, সিএনএন, কার্টুন নেটওয়ার্ক প্রভৃতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায়৷ চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়ার্নার ব্রোসের পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং ব্যবসাও রয়েছে এটিঅ্যান্ডটি-র৷ ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট ভ্যালু পুঁজি ১৮৮ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
কমকাস্ট
কেবল নেটওয়ার্কিংয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণ আর টেলিভিশন ব্যবসা রয়েছে কমকাস্টের৷ এনবিসির মতো বিখ্যাত মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের মালিক কমকাস্টের ম্যার্কেট ভ্যালু ১৯৪ দশমিক ৩০৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার৷ ২০১৮ সালে ৩৯ বিলিয়ন ইউএস ডলারে ব্রিটেনের ‘স্কাই’ কিনেছে কমকাস্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Rourke
ফক্স
টেলিভিশন সম্প্রচার আর চলচ্চিত্র নির্মাণ ‘টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স’-এর প্রধান ব্যবসা৷ কেবল নেটওয়ার্কিংয়ের ব্যবসাও রয়েছে ফক্সের৷ ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত তাদের মার্কেট ভ্যালু ৬৮ দশমিক ৬৫৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার৷
থমসন রয়টার্স
২০০৮ সালের ক্যানাডার থমসন কর্পোরেশন আর রয়টার্স গ্রুপ এক হয়ে বৃহৎ মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের রূপ লাভ করে৷ মিডিয়া ব্যবসার পাশাপাশি আইন এবং ট্যাক্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিংয়ের সেবা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির৷ তাদের মার্কেট পুঁজি ৩০ দশমিক ৯৬৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
সিবিএস কর্পোরেশন
বিশ্বব্যাপী বহুবিধ মাধ্যমে গণমাধ্যম ব্যবসা করে থাকে সিবিএস কর্পোরেশন৷ ক্যানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির টেলিভিশন, রেডিও ও পত্রিকার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন নির্মাণের ব্যবসাও রয়েছে৷ ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত তাদের মার্কেট ক্যাপিটাল ১৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার৷
ছবি: cbsnwes
ডাব্লিউপিপি
বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান লন্ডনভিত্তিক ডাব্লিউপিপি৷ বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি জনসংযোগের ব্যবসাও রয়েছে তাদের৷ মিডিয়াকম, ওয়েবমেকার, গ্রে, জেডাব্লিউটি, ওগিলবি অ্যান্ড ম্যাদার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে আছে এর অধীনে৷ ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত ডাব্লিউপিপি-র মার্কেট ক্যাপিটাল ১৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার৷ ছবিতে প্রতিষ্ঠানের সিইও স্যার মার্টিন সোরেল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Lennihan
ডিশ নেটওয়ার্ক কর্পোরেশন
সরাসরি স্যাটেলাইট সম্প্রচার, ব্রডব্যান্ড, সিনেমা ও গেমসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় রয়েছে ডিশ নেটওয়ার্ক কর্পোরেশনের৷ ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে তাদের মার্কেট ভ্যালু ১৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার৷
ছবি: Reuters
ভায়াকম
চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ডিজিটাল কনটেন্টের ব্যবসা রয়েছে ভায়াকমের৷ প্যারামাউন্ট পিকচার, এমটিভি ফিল্মসের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে এর মালিকানায়৷ ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে তাদের মার্কেট ভ্যালু ১২ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউএস ডলার৷
নিউজ কর্পোরেশন
ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, টাইমস, নিউইয়র্ক পোস্ট, দ্য টাইমস, সানডে টাইমস প্রভৃতি রয়েছে নিউজ কর্পোরেশনের মালিকানায়৷ ফোর্বসের হিসাবে মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডকের প্রতিষ্ঠানের মার্কেট ভ্যাল্যু সাত দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার৷
10 ছবি1 | 10
বিজ্ঞাপন কেন বিদেশি চ্যানেলে যায়?
কারণ, কিছু না, বিদেশি চ্যানেল তো বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য বিজনেসকে তৈরি করেনি, তারা বাংলাদেশের জন্য আলাদা ফিড বানিয়ে নূন্যতম টাকায় বিজ্ঞাপনপ্রচার করছে৷ এই বাড়তি টাকাই তাদের লাভ৷
বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর চেয়ে কি ওই টিভি চ্যানেলগুলো বেশি জনপ্রিয়?
কিছু কিছু দর্শকের জন্য কিছু প্রোগ্রামের হয়ত জনপ্রিয়তা আছে৷ টেলিভিশন তো একটা ইন্ডাষ্ট্রি৷ বাংলাদেশের সিমেন্টের চেয়ে তো অনেক দেশের সিমেন্টই ভালো হতে পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশের সিমেন্ট ইন্ডাষ্ট্রিকে প্রটেকশন দিতে ওই সিমেন্ট আনতে গেলে ট্যাক্স দিতে হয়৷ লন্ডনে স্কাই টিভির চেয়ে আমাদের টিভি জনপ্রিয়৷ তারপরও তো বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হয়৷ কারণ, আমাদের বিজ্ঞাপন তো ওই দেশের সেন্সর থেকে অনুমোদন নিয়ে তৈরি হয়নি৷
এতে কি বিদেশি চ্যানেলের আধিপত্য কমবে বলে আপনি মনে করেন?
কারো আধিপত্য বাড়ানো-কমানো কিন্তু এই আইনের উদ্দেশ্য না৷ এগুলো তো পে-চ্যানেল৷ যারা দেখছে, পয়সা দিয়ে দেখছে৷ আইন প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়৷ তবে আমাদের কনটেন্ট উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরো কাজ করতে হবে৷ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই৷