1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আগের মতোই চলছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড?

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানের বসিলা ৪০ ফুট এলাকায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত হয়েছে দুইজন। মানবাধিকার কর্মী নূর খান মনে করেন, “আগের মতোই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে।”

৫ আগস্টের পর থেকেই সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী মাঠে তৎপর আছে।
বাংলাদেশে চলছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ (ফাইল ফটো)ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP/picture alliance

বুধবার দিবাগত রাত একটার  দিকে ‘বন্দুক যুদ্ধে' দুজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, জুম্মন (২৬) ও মিরাজ হোসেন (২৫)। মিরাজ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মো. শাহজাহান আলীর ছেলে। জুম্মন শরিয়তপুরের গোসাইরহাট থানার আব্দুল সাত্তারের ছেলে। তারা দুজনই ঢাকার মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় ভাড়া থাকতেন।

‘একইভাবে আগের মতোই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে’

This browser does not support the audio element.

বৃহস্পবিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকার মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকায় ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে যৌথবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা একটি গলির দুই পাশে ঘেরাও করলে সন্ত্রাসীরা একটি একতলা ভবনের ছাদ থেকে অভিযান পরিচালনাকারী দলটির ওপর অতর্কিতে গুলি চালায়। দলটি আত্মরক্ষার্থে তৎক্ষণাৎ পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ৫ জন সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করতে সক্ষম হয়। 

পরবর্তীতে, বাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে ছাদের ওপর থেকে দুই জনের মৃতদেহ উদ্ধার করার কথাও বলা হয় বিবৃতিতে। আরো বলা হয়, আটককৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি এবং একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও আইএসপিআরের বিবৃতিতে জানানো হয়৷

২০২৪ সালের ১২ মাসে ২১ জন, ২০২৫-এর পাঁচ মাসেই ২০ জন

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুযায়ী, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত পাঁচ মাস ২০  দিনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে সারা দেশে অন্তত ১৮ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে যৌথ বাহিনীর হেফাজতে মারা যান ১২ জন। হেফাজাতে যারা মারা গেছেন তারা ক্রস ফায়ার বা নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন। এই পাঁচ মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ১৮ জন মারা গেলেও ২০২৪ সালে ১২ মাসে মারা গিয়েছিলেন ২১ জন।

পাঁচ মাস ২০ দিনে যারা হেফাজতে মারা গেছেন তার হলেন: গোপালগঞ্জের ইলাহি শিকদার , নারায়ণগঞ্জর সৈয়দ নুরুল কবির, গাইবন্ধার শফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহের সহিদুল ইসলাম, সাভারের কাওসার হোসেন ও চম্পা খাতুন,  চট্টগ্রামের মো. শরীফ, কিশোরগঞ্জের হৃদয় রবি দাস, যশোরের আতিক হাসান সরদার, কক্সবাজারের মোসলেম উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের ইয়াসিন মিয়া, নোয়াখালীর আব্দুর রহমান, শরিয়তপুরের মিলন বেপারী, কুমিল্লার তৌহিদুল ইসলাম, জামালপুরের আনোয়ার হোসেন৷ তাদের পর বুধবার যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ঢাকায় মৃত্যু হলো জুম্মন ও মিরাজ হোসেনের। 

বাংলাদেশ: নির্যাতনকারীরা যেভাবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী

20:31

This browser does not support the video element.

আসক-এর হিসেব অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজাতে এবং অভিযানে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে মারা গেছেন তিন জন, জানুয়ারি মাসে পাঁচ জন, ডিসেম্বরে তিন জন,  নভেম্বরে এক জন, অক্টোবরে তিন জন এবং সেপ্টেম্বরে পাঁচ জন।

নিহতদের মধ্যে গত ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনা নিয়েই শুধু ব্যাপক সমালোচনা-সমালোচনা হয়। বাকিগুলো তেমন আলোচনায় আসেনি। ওই ঘটনায় সেনাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার ও সেনা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয় তখন। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তখন এক বিবৃতিতে বলা হয়, "অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে যে-কোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দা জানায়। জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, যেখানে দেশের শীর্ষ মানবাধিকার কর্মীরা সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন।”

তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, "কুমিল্লার যুবদল নেতার প্রতি এই নির্মমতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলকেই মনে করিয়ে দেয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার হলো গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে জাতিকে মুক্তি দেওয়া,  রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ভয়-ভীতি থেকে দেশবাসীকে নিরাপদ রাখা। কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে আবারও দেশে নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে আসবে। মানুষ এক অজানা আশঙ্কায় দিনাতিপাত করবে।”

কিন্তু সেনা আইনে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস এবং প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও বিএনপি মহাসচিবের বিবৃতি সত্ত্বেও কার্যত তেমন কিছুই হয়নি বলে দাবি নিহত যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের ভাই আবুল কালামের৷ বৃহস্পতিবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা পাঁচজনের নামসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার বা কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা থানায় যোগাযোগ করলে বলা হয়- তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।” 

‘বিচার বহির্ভূত এইসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনাকাঙ্খিত’

This browser does not support the audio element.

‘আগের মতোই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে'

মানবাধিকার কর্মী এবং গুম কমিশনের সদস্য নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা আবার ক্রস ফয়ারের বা বন্দুক যুদ্ধের সেই পুরনো গল্প শুনতে পাচ্ছি। একইভাবে আগের মতোই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে। গত পাঁচ- সাড়ে পাঁচ মাসের যে চিত্র, তা মেনে নেয়া যায় না। এই অন্তর্বর্তী সরকারের  সময় এটা আমরা আশা করিনি। সরকার বলছে যে, তারা বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে, কিন্তু এর বিরুদ্ধে তারা এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি।”

"প্রতিটি ঘটনায়ই দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সেই চিহ্নিত করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার একটিতেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা সরকারকে নিতে দেখিনি।”

৫ আগস্টের পর থেকেই সেনবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী মাঠে তৎপর আছে। এরপর তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয়। এখন চলছে অপারেশন ডেভিল হান্ট। ডেভিল হান্ট শুরুর সময় স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি দাবি করেছিলেন, মানবাধিকার রক্ষা করেই এই অভিযান চলছে।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান বলেন, "বিচার বহির্ভূত এইসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনাকাঙ্খিত। এটা চলতে পারে না। আমরা প্রতিটি ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

"আমরা অপারেশন ডেভিল হান্টও পর্যবেক্ষণ করছি। ডেভিল হান্টের মধ্যেই দুইজন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হলেন। আমরা চাই এর দ্রুত তদন্ত ও বিচার। পুলিশ বা যৌথ বাহিনীর যে-কেনো ধরনের অভিযান মানবাধিবার রক্ষা করেই করতে হবে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ