1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আগে দুইবার করোনা নেগেটিভ, মৃত্যুর পর পজিটিভ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ মে ২০২০

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর পর জানা গেল তিনি করোনা পজিটিভ৷ কিন্তু মৃত্যুর আগে দুইবার টেস্টের ফল নেগেটিভ এসেছিল৷

Bangladesch | Professor Anisuzzaman verstorben
ছবি: bdnews24.com

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান৷

তার চিকিৎসা পরামর্শক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে করোনা সংক্রান্ত এই তথ্য জানা গেছে৷

শেষ পর্যন্ত করোনা পজিটিভ হওয়ায় তাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন মেনে শুক্রবার সকালে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়৷

রেজাল্ট আসার আগেই তিনি মারা যান: আনন্দ

This browser does not support the audio element.

দাফনের আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়৷ জানাজায় পরিবারের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান, ভাই আখতারুজ্জামান ও মেয়ে জামাই আজিমুল হক উপস্থিত ছিলেন৷ সকাল পৌনে ১১ টার দিকে দাফনের কাজ শেষ হয়৷

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘১০ মে একবার বাবার করোনা টেস্ট হয়েছিল সিএমএইচ-এ৷ তখন নেগেটিভ আসে৷ কিন্তু আবারো টেস্ট করা হলে মৃত্যুর পর জানা যায় তার করোনা পজিটিভ৷’’

তিনি জানান, ‘‘শুক্রবার ভোরে জ্বর আসার পর করোনা টেস্টের জন্য স্যাম্পল নেয়া হয়৷ কিন্তু রেজাল্ট আসার আগেই তিনি মারা যান৷ মারা যাওয়ার পরে রাতেই রিপোর্ট আসে করোনা পজিটিভ ৷’’

এমন হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আনন্দ জামান বলেন, ‘‘তার করোনার সেরকম কোনো সিম্পটমও আগে দেখা যায়নি৷ আর সিএমএইচ-এর আগে তিনি ইউনিভার্সেল মেডিকেলে ছিলেন৷ সেখানে তার করোনা পরীক্ষা করা হয়নি৷’’

করোনা প্রসঙ্গে পরিবারের পক্ষ থেকে আর চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি৷ আনন্দ জামান বলেন, ‘‘এখন আর কথা বলে কী হবে! তিনি তো মারাই গেছেন৷’’

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছোটভাই আখতারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আগে কোনো টেস্টেই করোনার কথা জানতে পারিনি৷ তিনি মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল থেকে বলা হলো করোনা টেস্ট করা হবে৷ রেজাল্ট পেতে সাড়ে ছয় ঘণ্টা লাগবে৷ তার আগে লাশ দেয়া যাবে না৷ রেজাল্টে তার করোনা পজিটিভ জানানো হয়৷’’ তবে তিনি আরো জানান, ‘‘তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল৷ চিকিৎসকরা বলছিলেন তার ওপর ওষুধ তেমন কাজ করছে না৷’’

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর৷ ২৭ এপ্রিল এই শিক্ষাবিদকে ঢাকার ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ তাঁর হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, উচ্চ রক্তচাপ, পারকিনসন ডিজিজসহ নানা শারীরিক জটিলতা ছিল৷

তাঁর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল: আখতারুজ্জামান

This browser does not support the audio element.

৯ মে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে তাকে সিএমএইচ-এ স্থানান্তর করা হয়৷ উভয় হাসপাতালেই তার চিকিৎসার ব্যাপারের নিয়মিত পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিএমএইচ-এ নেয়ার পর ৯ মে তার প্রথম করোনা টেস্ট করা হয়৷ এরপর ১০ মে আবার টেস্ট করা হয়৷ দুইবারই করোনা নেগেটিভ আসে৷ তার করোনার সিম্পটমও ছিলোনা৷ তবে মৃত্যুর পর টেস্টে করোনা পজিটিভ আসে৷’’

আর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের এখানে স্যার ২৭ এপ্রিল থেকে ৯ মে সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন৷ তখন আমরা তার কোনো করোনা টেস্ট করিনি৷ কারণ, তার মধ্যে আমরা করোনার উপসর্গ দেখিনি৷’’

‘মৃত্যুর মূল কারণ হার্ট অ্যাটাক'

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘ইউনিভার্সেল মেডিকেল এবং সিএমএইচে চিকিৎসকরা তার চিকিৎসার ব্যাপারে আমার সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করেছেন৷ তিনি নানা ধরণের জটিল রোগে ভুগছিলেন৷ হার্ট, ব্রেইন স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, প্রেসার, কিডনি সমস্যা ছিল৷ তার পিঠের কাছে কয়েকটা হাড়ও ভাঙা ছিল৷’’

দুইবার নেগেটিভ আসার পর পজিটিভ আসার কারণ কীহতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা স্যাম্পল কালেকশনের ওপর নির্ভর করে৷ অথবা তার করোনা সংক্রমণ পরেও হতে পারে, আগে হয়তো ছিল না৷ সিএমএইচ-এ তো অনেক করোনা রোগী আছে৷ তবে তার মৃত্যুর মূল কারণ হার্ট অ্যাটাক৷’’

বিষয়টি নিয়ে সিএমএইচ-এর সঙ্গে কথা বলা যায়নি৷ আইএসপিআর জানিয়েছে, ‘তার পরিবার যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে সেটাই৷ সিএমএইচ আলাদা কোনো স্টেটমেন্ট দেবে না৷’’

‘আগে নেগেটিভ, পরে পজিটিভ হতে পারে'

করোনা সংক্রমণ পরেও হতে পারে: আবদুল্লাহ

This browser does not support the audio element.

 আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘‘করোনা নেগেটিভ আসা মানে এই নয় যে, তিনি করোনামুক্ত৷ উপসর্গ ডেভেলপ করার আগে টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট আসার সম্ভাবনা অনেক কম৷ সর্বোাচ্চ দুইদিন আগে পজিটিভ আসতে পারে৷ যখন পরীক্ষা করা হয়েছে তখন ধরা না পড়লেও পরে ধরা পরতে পারে৷ আর তিনি হাসপাতালে ছিলেন, তার কাছে আত্মীয়-স্বজন গেছেন, চিকিৎসায় নানা ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে৷ যে কোনো সূত্র থেকে তিনি ইনফেকটেড হতে পারেন৷ হাসপতালে করোনা সংক্রমণের নানা সূত্র থাকতে পরে৷ যেদিন তিনি মারা গেছেন. সেদিন সকাল থেকে তার জ¦র ছিল৷ তখন সিম্পটম দেখা গেছে৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘করোনা পরীক্ষার স্যাম্পলেও ত্রুটি থাকতে পারে৷ স্যাম্পল কালেকশন, সংরক্ষণ বা পরিবহণে কোনো ত্রুটি থাকলেও সঠিক ফল না-ও আসতে পারে৷ যেমন গলা বা নাকের ঠিক যে জায়গা থেকে স্যাম্পল নেয়ার কথা সেখান থেকে যদি না নেয়া হয়৷ এটা অনুমান করে বলছি৷ কিন্তু সিএমএইচে এটা হওয়ার কথা নয়৷ কারণ, সেখানে প্রশিক্ষিত লোকজন কাজ করেন৷’’

তার মতে, ‘‘ যারা এটা নিয়ে কাজ করেছেন. তারা, ভাইরোলেজিস্টদের সাথে মিলে রিপোর্ট অ্যানালাইসিস করে হয়তো সঠিক তথ্য দিতে পারেন৷’’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের পরিবার৷ তাঁর ছোটভাই আখতারুজ্জামান জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিকভাবে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছেন৷ যা করা প্রয়োজন, সব উদ্যোগ নিয়েছেন৷ আমরা তাঁর কাছে ঋণী৷ শুধু দুঃখ একটাই করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে তার দাফন করতে পারলাম না৷ সবাই মিলে তাকে শেষ বিদায় জানাতে পারলাম না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ