আগ্নেয়গিরি আর বরফের দেশ আইসল্যান্ড৷ ২০১০ সালে সেখানকার একটি আগ্নেয়গিরির কারণে প্রায় পুরো ইউরোপেই বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ ঐ আগ্নেয়গিরির ছবি তুলে তখন পরিচিতি পেয়েছিলেন এক ফটোগ্রাফার৷
বিজ্ঞাপন
তাঁর নাম ব়্যাগনার সিগুর্ডসন৷ তিনি বলেন, ‘‘যতটা সম্ভব অগ্ন্যুৎপাতের কাছে গিয়ে ছবি তোলার বিষয়টি বেশ উত্তেজনার৷ তবে এভাবে ছবি তুলতে আপনাকে খুবই সৃজনশীল হতে হবে, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে৷''
কোনো আগ্নেয়গিরির জীবন্ত হয়ে ওঠা পছন্দ করেন ব়্যাগনার৷ যতটা সম্ভব তার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ সেটা গাড়ি নিয়ে হোক, কিংবা ছোট্ট প্লেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি৷ ছুটে আসা লাভার কয়েক সেন্টিমিটারের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম৷ কারণ তখন লাভা খুব ধীরে সামনে এগোচ্ছিল৷ ফলে কাছে যাওয়াটা নিরাপদ মনে করেছিলাম৷ তারপরও অবশ্য ভয় পেয়েছিলাম৷ তাই বেশ জোরে দৌঁড় দিয়েছিলাম৷''
আইসল্যান্ডের সবচেয়ে বিখ্যাত এইয়াফিয়াদলা আগ্নেয়গিরির ছবি তুলে প্রথম পরিচিতি পান ব়্যাগনার৷ ২০১০ সালে ঐ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় ইউরোপে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছিল৷ অনেক ধৈর্য নিয়ে ঐ আগ্নেয়গিরির প্রায় দশ হাজার ছবি তুলেছিলেন ব়্যাগনার৷ সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সিগুর্ডসন বলেন, ‘‘অপেক্ষা, অপেক্ষা, একটা কিছু ঘটবে তার জন্য অপেক্ষা৷ অগ্ন্যুৎপাত দেখার জন্য কয়েকদিন প্রতি মহূর্তেই অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল৷ কারণ আগ্নেয়গিরির মুখটি ছিল ১,৪০০ মিটার উঁচুতে, আর মেঘ ছিল এক হাজার মিটার উঁচুতে৷ তাছাড়া চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল৷''
আইসল্যান্ডে ঘুরতে যাওয়ার ৯ কারণ
সাম্প্রতিক সময়ে আইসল্যান্ডের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা৷ কারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সেখানে দেখার আছে অনেক কিছু৷
পুরো দেশের এক চতুর্থাংশ জায়গা জুড়ে আছে আগ্নেয়গিরি, ১২ শতাংশ এলাকায় আছে গ্লেসিয়ার, মানে হিমবাহ৷ আছে ফিয়র্ড, আছে ভ্যালি৷ প্রায় এক শতাংশ জায়গায় গাছেরও দেখা পাওয়া যায়৷ এক দেশে এত কিছুর দেখা সাধারণত আর কোথাও পাওয়া যায় না৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Irlmeier
সক্রিয় আগ্নেয়গিরি
২০১০ সালে ছবির এই আগ্নেয়গিরির নাম বিশ্ব গণমাধ্যমের নজর কেড়েছিল৷ কারণ এর অগ্নুৎপাতের কারণে সেই সময় ইউরোপজুড়ে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছিল৷ আগ্নেয়গিরিটির নাম এইয়াফিয়াদলা বা এইয়াফিয়াদলাইয়োক্যুডল৷ আইসল্যান্ডে প্রায় ১৩০টির মতো আগ্নেয়গিরি আছে, যার মধ্যে ৩০টির মতো এখনও সক্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/bt3/ZUMApress
১২’শ ফুটবল মাঠের সমান
এটি আইসল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হিমবাহ৷ নাম ভাতনাইয়োক্যুডল৷ আকার প্রায় ১২’শটি ফুটবল মাঠের সমান৷ পর্যটকরা সেখানে যেতে পারেন৷ তবে অবশ্যই গাইড নিয়ে৷ কেননা যখন তখন বরফে ফাটল ধরে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/S. Ziese
জলপ্রপাত
হিমবাহের বরফ গলা পানি উপকূলের দিকে যাওয়ার সময় কোথাও কোথাও জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে৷ ছবিতে ‘গুডলফস’ জলপ্রপাত দেখতে পাচ্ছেন, ইংরেজিতে যেটা ‘গোল্ডেন ওয়াটারফল’ নামে পরিচিত৷ কত বড়? তাহলে একটু খেয়াল করে ছবিটি দেখুন৷ বাম পাশে উপরের দিকে পর্যটকদের দেখতে পাচ্ছেন?
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Irlmeier
উষ্ণপ্রস্রবণ
প্রায় ৩০ মিটার উঁচু পানির এই স্তম্ভ স্থায়ী কিছু নয়৷ কয়েক মিনিট পরপর ভূমির নীচ থেকে এভাবে গরম পানি তেড়ে উপরে উঠে আসে৷ ছবির উষ্ণপ্রস্রবণটির নাম ‘স্ট্রকুর গিজার’৷ অবশ্য এররকম উষ্ণপ্রস্রবণ দেশটির অনেক জায়গাতেই আছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/M. Lohmann
হট স্প্রিং
‘ব্লু-লেগুন’ নামের এই জিওথার্মাল স্পা’য় গা ভেজালে নাকি কিছু ত্বক সমস্যা দূর হয়ে যায়৷ তাই পর্যটকদের সেখানে ভিড় লেগেই থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Holschneider
রাজধানী শহর
বিশ্বের অন্যান্য শহরের মতো আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকইয়াভিকে গেলেও রেস্তোরাঁ, বার, নাইটক্লাব এ সবের দেখা পাওয়া যাবে৷ পুরো দেশের জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখ ২০ হাজার৷ এর মধ্যে প্রায় দুই লক্ষ নাগরিকেরই বাস রেইকইয়াভিক ও তার আশেপাশের এলাকায়৷
ছবি: picture-alliance/U. Bernhart
পৌরাণিক জন্তু
ছবির এই পাথরটি দেখতে কি দৈত্যের মতো মনে হচ্ছে? আইসল্যান্ড জুড়ে যেমন এমন দৈত্যের দেখা পাওয়া যায়, তেমনি আছে পরী, আছে ক্ষুদ্রাকৃতির মানব৷ কোথায় তাদের দেখতে পাওয়া যাবে তার জন্য রীতিমতো ডিরেক্টরিও আছে৷
ছবি: DW/E. Yorck von Wartenburg
উদীচী উষা দেখা
ইংরেজিতে নর্দার্ন লাইটস আর বাংলায় মেরুজ্যোতি বা সুমেরু প্রভা নামেও ডাকা হয়৷ এটি আসলে রাতের আকাশে আলোর এক ধরনের খেলা৷ অক্টোবরের শুরু থেকে মার্চের শেষ সময়ের মধ্যে আইসল্যান্ডে গেলে অপরূপ এই দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়৷ গ্রীষ্মের সময় আইসল্যান্ডে কখনও পুরোপুরি অন্ধকার নামে না৷ আর শীতের সময় কখনও পুরোপুরি আলোর দেখা পাওয়া যায় না৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/W. Pattyn
9 ছবি1 | 9
৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব়্যাগনার প্রকৃতির ছবি তুলছেন৷ গ্রিনল্যান্ড থেকে শুরু করে নরওয়ে, উত্তর মেরু – এ সব এলাকায় ছবি তোলেন তিনি৷
তবে আগুন আর বরফের দেশ বলে পরিচিত তাঁর মাতৃভূমি আইসল্যান্ডের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্যান্য এলাকায় খুব কমই আছে৷ ১৩০টির মতো আগ্নেয়গিরি ও উষ্ণ প্রসবণ আছে আইসল্যান্ডে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা অনেকটা নেশার মতো৷ আমার মনে হয় আইসল্যান্ডের আমরা সবাই অগ্ন্যুৎপাত পছন্দ করি৷ তবে কখনও কখনও এটা বিপজ্জনক হতে পারে, প্রাণনাশকও হতে পারে৷ অবশ্য ভাগ্য ভালো যে, গত কয়েক দশকে আমাদের এখানে শুধু হালকা অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে, যা পর্যটকরা পছন্দ করে৷''
ছবি তুলতে সবসময় নতুন প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করেন ব়্যাগনার৷ যেমন এখন ড্রোন দিয়ে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করছেন৷ তিনি বলেন, সবসময় ‘কিলার শট'-এর খোঁজে থাকেন তিনি৷
ব়্যাগনার সিগুর্ডসন সবসময় তাঁর প্রিয় কাজের অপেক্ষায় থাকেন৷ আইসল্যান্ডে পরবর্তী অগ্ন্যুৎপাত নিশ্চয় ঘটবে – হতে পারে সেটি মাত্র কয়েক মিনিটের নোটিশে৷