আগ্নেয়গিরি বলতেই অধিকাংশ মানুষের চোখে ভেসে ওঠে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি৷ অথচ জিওফিজিসিস্টরা জানেন, এই ভলক্যানিজম-এর ফলেই ভূত্বকের ‘রিসাইক্লিং’ চলে৷
বিজ্ঞাপন
ভলক্যানিজম বা আগ্নেয়গিরি সংক্রান্ত গতিবিধির ফলে ভূত্বকের পরিবর্তন ঘটে; বিভিন্ন মহাদেশের আকার বদলে যায় ও পৃথিবীর উত্তপ্ত অভ্যন্তরের সম্প্রসারণ ঘটে৷ বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে ভলক্যানিজমের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শিখেছেন৷
আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে ভারি পদার্থ পৃথিবীর ‘ইনার কোর'-এর দিকে নেমে যায় এবং অপেক্ষাকৃত হালকা পদার্থ উপরে উঠে আসে বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস৷ জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিও-সায়েন্সেস-এর ডক্টর ব্রিগার ল্যুয়র বলেন, ‘‘পৃথিবীর ‘ইনার কোর' বা মর্মবস্তু বেড়ে চলেছে, ভূগোলকের ঘূর্ণনের উপর যার প্রভাব পড়ছে৷ একদিকে পৃথিবীর আবর্তনের উপর চন্দ্রসূর্যের প্রভাব – জোয়ারভাটার মতো৷ ‘ইনার কোর'-এর গঠন পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ বৃদ্ধি করছে; অপরদিকে চন্দ্রসূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সেই গতিবেগ রুখছে৷''
কী নেই ভিরুঙ্গা পার্কে!
আফ্রিকার দেশ ডিআর কঙ্গোর ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে কী নেই? সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন, সাভানা আর বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালা, গোরিলা, বিভিন্ন জাতের পাখি, উদ্ভিদ – আছে সবই৷ কিন্তু তারপরও যেন কী নেই?
ছবি: WWF/Brent Stirton
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ
সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন, সাভানা আর বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালা সমৃদ্ধ আফ্রিকার দেশ ডিআর কঙ্গোর ‘ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক’৷ তাই ইউনেস্কো ১৯৭৯ সালে এই পার্কের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে৷ এর আগে ১৯২৫ সালে তৎকালীন ঔপনিবেশিক শাসক বেলজিয়াম ভিরুঙ্গাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছিল৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
বিভিন্ন জাতের পাখি ও উদ্ভিদ
ভিরুঙ্গা পার্কে প্রায় ৭০০ প্রজাতির পাখি ও দুই হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে৷ পাশের গোমা শহরের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতি বছর পার্কের বনাঞ্চলের একটা বড় অংশ হারিয়ে যাচ্ছে৷ জঙ্গিরাও এই বনের কাঠ কেটে বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে অস্ত্র কিনে থাকে৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
গোরিলার বাস
ভিরুঙ্গা পার্কের অন্যতম বাসিন্দা প্রায় ২০০ গোরিলা৷ ইউনেস্কোর এই পার্ককে স্বীকৃতি দেয়ার পেছনে বিলুপ্ত হতে থাকা এই প্রাণীর অবস্থানও একটা কারণ৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
তেল অনুসন্ধান নয়
লন্ডন-ভিত্তিক একটি কোম্পানি ‘সোকো ইন্টারন্যাশনাল’ ভিরুঙ্গা পার্কে তেল অনুসন্ধান করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ বা ডাব্লিউডাব্লিউএফ এর প্রতিবাদ জানালে সেই পরিকল্পনা বাদ হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অনুসন্ধানে যে বিপদ হতে পারতো
তেল অনুসন্ধানের অনুমতি দিলে ভিরুঙ্গা পার্কের এডওয়ার্ড লেকের পানি দূষিত হয়ে পড়তো৷ এতে ঐ লেকের ধারে বাস করা প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের সমস্যা হতো৷ কারণ তাঁরা পানি পান ও রান্নার কাজের প্রয়োজনীয় পানি ঐ লেক থেকেই সংগ্রহ করে থাকেন৷ এছাড়া লেকে থাকা মাছগুলোও মরে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল৷ এই মাছ ঐ পরিবারগুলোর আয়ের একটা বড় উৎস৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে
মহিলারা পার্কের একটি স্থানীয় বাজারে শুঁটকি বিক্রি করছেন৷ ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী সক্রিয় থাকায় ভয়ে সেখান থেকে অনেক মানুষ পালিয়ে এই পার্কে অবস্থান নিয়েছে৷ অবশ্য এই পার্কেরও একটা অংশে এক সময় অনেক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
লোকদের বোঝাতে হবে
পার্কের ডিরেক্টর ইমানুয়েল দ্য মেরোড বলেন, ‘‘ভিরুঙ্গাকে বাঁচাতে হলে আমাদের মানুষদের বোঝাতে হবে যে বন সংরক্ষণের একটা আর্থিক দিক রয়েছে৷’’
ছবি: Getty Images
সংরক্ষণের আর্থিক দিক
ডাব্লিউডাব্লিউএফ বলছে ভিরুঙ্গা পার্ককে ঘিরে প্রায় ৪৫ হাজার চাকরি সৃষ্টি করা যেতে পারে৷ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মৎস্য উৎপাদন, ইকো ট্যুরিজম, গবেষণা, শিক্ষা – এ সব খাতে এই চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব৷ ঠিকমতো পরিকল্পনা করলে এই পার্ক থেকে বছরে প্রায় দশ লক্ষ ইউরো আয় করা সম্ভব৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
8 ছবি1 | 8
পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র
৫,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস-এর বেশি তাপমাত্রায় পৃথিবীর অভ্যন্তরে সব কিছু গলে যায়, যার ফলে একটি ডায়নামো এফেক্ট সৃষ্টি হয়৷ এই এফেক্ট পৃথিবীর চারপাশে ম্যাগনেটিক ফিল্ড সৃষ্টি করে বিশ্বকে সূর্যের বিকিরণ থেকে বাঁচিয়ে রাখে৷ কালে কালে এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলি পারস্পরিকভাবে দিক পরিবর্তন করে৷ বর্তমানে উত্তরমেরু বছরে পঞ্চাশ কিলোমিটার গতিতে দক্ষিণ দিকে চলেছে৷
পটসডাম-এর জিএফজেড-এর প্রফেসর ডক্টর হ্যারমান ল্যুয়র বলেন, ‘‘আমরা আজও ঠিক বুঝতে পারি না, এই ডায়নামো কী ভাবে কাজ করছে৷ অতীতে আমরা দেখেছি, কখনো-সখনো ম্যাগনেটিক ফিল্ডের পরিবর্তন ঘটেছে: উত্তর মেরু দক্ষিণে চলে গেছে, দক্ষিণ মেরু উত্তরে এসেছে৷ কিন্তু পৃথিবীর চৌম্বক মেরু শেষবার এইভাবে বদলেছে আজ থেকে ৭৮০ বছর আগে৷ কাজেই সেটা আবার ঘটার সময় বস্তুত পার হয়ে গেছে৷''
গোল নয়, গোলালু
চ্যাম্প এবং সোয়ার্ম, এই দু'টি সর্বাধুনিক স্যাটেলাইট দেখিয়েছে যে, আমাদের গ্রহটি আকারে ঠিক গোলাকৃতি নয়, বরং একটা আলুর মতো৷ আবার তার আকারও বদলায় প্রতিদিন৷ কিন্তু কেন? জিএফজেড, পটসডাম-এর ড. ক্রিস্টফ ফ্যোয়রস্টে বলেন, ‘‘ভূত্বক, অর্থাৎ পৃথিবীর মাটি প্রতিদিন চল্লিশ সেন্টিমিটার ওঠে-নামে, তাও আবার দিনে দু'বার৷ এটা হল চন্দ্রসূর্যের মাধ্যাকর্ষণগত প্রভাবের ফলে, যেমন জোয়ারভাটা৷''
আধুনিক বিজ্ঞান ও যন্ত্রপাতি আমাদের দৃষ্টি খুলে দিয়েছে৷ স্যাটেলাইটের কল্যাণে আমরা আজ জানি, এই সব বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরি আছে বলেই পৃথিবীতে জীবনও আছে৷