1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে নষ্ট হচ্ছে করোনার টিকা

হারুন উর রশীদ স্বপন
১ আগস্ট ২০২২

দেশে মজুত করোনা টিকার মেয়াদ আগামী অক্টোবরে শেষ হবে। এরপর প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া যাবে না বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল হক ।

বাংলাদেশে টিকাকেন্দ্র
ছবি: Mortuza Rashed

সরকার চেষ্টা করছে যারা টিকা নেননি এই সময়ের মধ্যে  তাদের টিকা নিতে আগ্রহী করতে। টিকার জন্য সারা দেশে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আরো একটি বড় ক্যাম্পেইন করা হবে বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এপর্যন্ত সরকার মোট ৩০ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ করেছে। এখনও মজুত আছে এক কোটি ৪৮ লাখ ডোজ।

সরকারের লক্ষ্য ছিলো ১৩ কোটি ২৯ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ককে টিকা দেয়ার। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১২ কোটি ৯৭ লাখ মানুষ। ৩২ লাখ মানুষ এখনো প্রথম ডোজ নেননি। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১২ কোটি মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ  নেননি ৯৭  লাখ মানুষ। সব মিলিয়ে এক কোটি ২৬ লাখ মানুষ  প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকার বাইরে আছেন। আর ছয় কোটিরও বেশি মানুষের বুস্টার ডোজের সময় হলেও তারা নিচ্ছেন না।

এই হিসাব ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক কোটি ৭৩ লাখ প্রথম ডোজ নিয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে এক কোটি ৬১ লাখ শিক্ষার্থী। সরকার চলতি মাসে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শুরু করবে। টিকা পাবে চার কোটি ২০ লাখ শিশু।

ঢাকায় কয়েকটি করোনা টিকাদান কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এখন মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ তেমন নেই। এমনটি বুস্টার ডোজেও আগ্রহ নেই।

ঢাকার  শ্যামালিতে বিশেষায়িত যক্ষা হাসপাতাল করোনার টিকার একটি বড় সেন্টার। এই হাসপাতালে টিকার দায়িত্বে আছেন সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার। তিনি বলেন,"আগে তো টিকার জন্য লম্বা লাইন পড়ে যেত। এখন আর তেমন কেউ টিকা নিতে আসেন না। বুস্টার ডোজেও আগ্রহ নেই। আমরা সম্প্রতি সাত দিনের ক্যাম্পেইন করেছি। তাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু মানুষ টিকা নিয়েছেন। এখন আবার ভাটা পড়েছে। ”

তিনি জানান," প্রত্যেক ভ্যাকসিনের একটি মেয়াদ থাকে। আমরা আমাদের চাহিদা মত ভ্যাকসিন আনার পর যা আমাদের কাছে থাকে তা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অন্য কোনো কেন্দ্রে প্রয়োজন হলে পাঠিয়ে দেই। আমরা প্রতি সপ্তাহে ভিডিও কনফারেন্স করি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কোনো কেন্দ্রই তারা বরাদ্দের টিকা শেষ করতে পারছে না। তবে আমাদের কোনা টিকা এখনো নষ্ট হয়নি। অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হবে বলে ইপিআই থেকে আমাদের জানানো হয়েছে।”

মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম কেনজানতে চাইলে তিনি বলেন,"কেউ কেউ মনে করছেন হয়তো এগুলোর এখন আর দরকার নেই।”

এরইমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তারা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা সবাইকে দিতে চাইছেন । ডা. মো. শামসুল হক বলেন,"সরকার নাগরিকদের জন্য প্রতিটি টিকা পাঁচ ডলার খরচ করে কিনেছে। এখন সেই টিকা পচে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরের পর কেউ এসে কান্নাকাটি করলেও আমরা টিকা দিতে পারব না। মাথা ঘুরে পড়ে গেলেও না। নতুন ক্যাম্পেইনের সাথে বুস্টার ডোজও দেয়া হবে। আর  যার যখন বুস্টার ডোজের সময় হবে তখন পাবেন। কিন্তু তাতেও তো তো  আগ্রহ দেখছি না।”

সেপ্টেম্বরের পর কেউ এসে কান্নাকাটি করলেও আমরা টিকা দিতে পারব না

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন," আমরা গণমাধ্যমে বার বার বলছি তারপরও মানুষ টিকা নিচ্ছে না। আমরা কী করব? সরকারের দায়িত্ব ছিলো টিকা আনার। সরকার এনেছে। এখন আপনার দায়িত্ব টিকা নেয়ার আপনি নিন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অচিরেই  প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া কবে বন্ধ হবে তারা ঘোষণা দেবেন।”

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন." টিকার ক্যাম্পেইনে শুরু থেকেই ত্রুটি ছিলো। আর যে ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে তাতে নতুনত্ব নেই। ফলে মানুষের কাছে একঘেয়ে মনে হয়েছে। মানুষ যখন দেখলো টিকা নেয়ার পরও করোনা হয়, বুস্টার ডোজ নেয়ার পরও করোনা হয় তখন কেউ কেউ মনে করল , টিকা নিয়ে কী হবে। কিন্তু টিকা দেয়া থাকলে যে সংক্রমণের তীব্রতা কম হয় সেটা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হলো না। আবার জনপ্রতিনিধিদের এই টিকায় কেন জানি সম্পৃক্ত করা হলো না। সেটা করা হলে আরো বেশি মানুষ টিকা নিত।”

করোনার টিকা কোথায় পাবো?

46:07

This browser does not support the video element.

তিনি মনে করেন,"টিকা কেন্দ্রগুলো কোথায় এখনো অনেক সাধারণ মানুষ জানেন না। আমি পথ চলতে অনেক রিকশাচালক, শ্রমজীবী মানুষের কাছে টিকা নিয়ে জানতে চেয়েছি। তারাই আমাকে উল্টো জিজ্ঞেস করেছেন, টিকা কোথায় দেয়? এখন সরকারেরই এক ধরনের উদাসীনতা আছে। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।”

তার বিবেচনায়,"সরকারের যে হিসাব তার চেয়ে আরো অনেক  বেশি মানুষ টিকার বাইরে আছেন। কারণ সরকার ২০১১ সালের জনশুমারির ভিত্তিতে টিকার হিসাব করেছে। কিন্তু নতুন জনশুমারিতে তো লোকসংখ্যা বেড়ে গেছে।”

টিকার ক্যাম্পেইনে শুরু থেকেই ত্রুটি ছিলো

This browser does not support the audio element.

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে এপর্যন্ত বাংলাদেশে ২৯ হাজার ২৯২ জন করোনায় মারা গেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন একজন। এপর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ পাঁচ হাজার ৬০৬ জন। ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৯ জন। শনাক্তের হার ৫.৮৬ ভাগ।

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতা এখন অনেকটা কমে এলেও আবার যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসবে না তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। ফলে করোনার টিকার প্রতি দেশের মানুষের এই অনাগ্রহ বিপজ্জনক বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

হারুন উর রশীদ স্বপন(ঢাকা)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ