প্যালেটিনেট যে বিশ্বে রিজলিং গোত্রীয় আঙুর চাষের বৃহত্তম এলাকা, তা কি জানতেন? অথবা চার’শ বছরের পুরনো আঙুরগাছ থেকে যে আঙুর, এমনকি ওয়াইন হতে পারে, সে-কথা জানতেন?
বিজ্ঞাপন
জার্মান ভাইনস্ট্রাসে, মানে আঙুরচাষের এলাকা – যেখানে ওয়াইন তৈরি হয়, সেখানকারই একটি বসতি হামবাখ৷ প্যালেটিনেটের বিক্ষুব্ধ ইতিহাস এখানে যেভাবে উপলব্ধি করা যায়, অন্য কোথাও তেমন নয়৷ গ্রামের ওপরে হামবাখ দুর্গ৷ দুর্গটি তৈরি হয় একাদশ শতাব্দীতে; কখনো ছিল বাভারিয়ার অংশ, কখনো ছিল ফ্রান্সের দখলে৷ বার বার ভাঙা হয়েছে, নতুন করে গড়া হয়েছে৷ আজ সেখানে রয়েছে একটি মিউজিয়াম, যেখানে জার্মানির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নথিবদ্ধ করা আছে৷ ১৮৩২ সালে ৩০ হাজার মানুষ সংবিধান, স্বাধীনতা ও শান্তির দাবিতে আন্দোলন করেন৷ সেই সংবিধান আসে শেষমেষ ১৯৪৯ সালে৷ বন-এর সংসদীয় পরিষদ জার্মান ফেডারাল প্রজাতন্ত্রের জন্য আট মাসব্যাপী আলাপ-আলোচনার পর গৃহীত সংবিধানটি অনুমোদন করে৷
জার্মান আঙুরচাষের পথ ধরে আরো দক্ষিণে যাওয়া যাক৷ এই আঙুরগাছগুলোর বিশেষত্ব হলো – এগুলো চার’শ বছরের বেশি পুরনো, কিন্তু এগুলো থেকে আজও আঙুর পাওয়া যায় এবং সেই আঙুর থেকে ওয়াইন তৈরি হয়৷ আঙুরখেতটি রিটবুর্গের রোট পৌর এলাকার অংশ৷ প্যালেটিনেটের অধিকাংশ গ্রাম সপ্তদশ শতাব্দীতে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যুদ্ধে লণ্ডভণ্ড হয়৷ রোট কিন্তু অক্ষত ছিল৷ কাজেই এই ছোট্ট ওয়াইন তৈরির জায়গাটি আজও অক্ষত রয়েছে৷
আঙুর স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো কেন?
সারা বিশ্বে যত রকম গাছের চাষ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে আঙুর সবচেয়ে পুরনো৷ শুধু তাই নয়, আঙুর ফলের রয়েছে অনেক গুণ৷ আঙুর খান, সুন্দর থাকুন৷
ছবি: DW/Najibullah Musafer
দেবতার রক্ত
সম্ভবত আঙুর প্রথম এসেছে কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল থেকে৷ তবে আজকাল বেশিরভাগ আঙুর আসে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে৷ প্রাচীন গ্রিকদের কাছে পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে আঙুরের তৈরি ওয়াইনকে ‘দেবতার রক্ত’ বলা হতো, যা আজও প্রতীকি চিহ্ন বহন করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আঙুরের বাগান
জার্মানিতে প্রচুর আঙুরের বাগান রয়েছে৷ সারা বিশ্বে যত রকম গাছের চাষ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে আঙুর সবচেয়ে পুরনো৷
ছবি: picture-alliance/AFP Creative
সুন্দর ফল আঙুর
আঙুর শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, খেতেও সুস্বাদু ফল৷ তবে হালকা সবুজ রংয়ের আঙুর থেকে লাল বা গাঢ় সবুজ রংয়ের আঙুরে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে৷ আঙুরে ভিটামিন সি তেমন না থাকলেও আঙুর ইনফেকশন থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে৷ গরমকালে যথেষ্ট আঙুর খেলে শীতকালেও সুস্থ থাকা যায় – এমনটাও শোনা যায়৷
ছবি: DW/Najibullah Musafer
আঙুর খেয়ে ওজন কমান
সপ্তাহ দুয়েক প্রতিদিন বিচি ও খোসাসহ ২ কেজি আঙুর আর সাথে যথেষ্ট পরিমাণে পানি বা গ্রিন চা পান করলে কয়েক কেজি ওজন কমানো সম্ভব৷ তবে সে আঙুর হতে হবে অবশ্যই কোনো রকম কেমিকেল ছাড়া পুরোপুরি অর্গানিক উপায়ে চাষ করা৷ আঙুরের বড় গুণ – শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের দেয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
আঙুরে রয়েছে প্রচুর ফাইবার
আঙুরের খোসা এবং বিচিতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, যা মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে৷ আঙুরে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় যা শরীরের বাড়তি পানি কমিয়ে প্রয়োজনীয় পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে ভূমিকা পালন করে৷
ছবি: Fotolia/tenjedendzien.pl
আঙুর থেকে তৈরি ‘রেড ওয়াইন’
আমাদের সংস্কৃতিতে মদ খাওয়ার প্রচলন নেই, মদ শুনলেই অনেকে আঁতকে ওঠেন৷ এদেশে ডাক্তার বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, সামান্য পরিমাণে রেড ওয়াইন খাওয়া খুবই ভালো৷ অর্থাৎ প্রতিদিন রাতে আধাগ্লাস থেকে একগ্লাস রেড ওয়াইন খেলে তা হার্ট ভালো রাখতে এবং শরীরের রক্ত চলাচলও ঠিক রাখতে সাহায্য করে৷ বলা বাহুল্য, রেড ওয়াইন তৈরি করা হয় আঙুর থেকেই৷
ছবি: Fotolia/Nick Freund
অ্যান্টি এজিং
শুধু গ্রিন টি বা সবুজ চা নয়, আঙুরও তারুণ্য ধরে রাখতে এবং রূপ লাবণ্য বাড়তে সাহায্য করে৷ শুধু তাই নয় আঙুর ক্যানসার সেলগুলোর বৃদ্ধি কমাতেও সাহায্য করে থাকে৷ আঙুর খান, সুন্দর থাকুন৷
ছবি: DW/Najibullah Musafer
7 ছবি1 | 7
কাছেই ভিলা লুডভিগসহ্যোয়ে৷ প্যালেটিনেট যখন বাভারিয়ার হাতে ছিল, তখন রাজা প্রথম লুডভিশ এখানে একটি গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ গড়েছিলেন৷ আজও সেই প্রাসাদ পাহাড়ের ঢালে আঙুরখেতগুলোর উপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেন ইটালির টাসকানি অঞ্চল৷ রাজা লুডভিশ ঠিক যেমন চেয়েছিলেন৷
ওয়াইন হলো এ অঞ্চলের প্রাণ – অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ৷ বিশ্বে রিজলিং গোত্রীয় আঙুর চাষের বৃহত্তম এলাকা হলো এই প্যালেটিনেট৷ ওয়াইন প্রস্তুতকারক বরিস ক্রানৎস বলেন, ‘‘আমি চাইব যে, আমাদের এই এলাকাটি ওয়াইন তৈরির মূল্যবান এলাকা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাক৷
আমার ইচ্ছে যে, বহু ওয়াইন প্রস্তুতকারক যোগ দিন, যাতে আমরা আমাদের এলাকার সম্ভাবনা আগের মতোই বাড়িয়ে যেতে পারি, ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে পারি৷''
জার্মান ভাইনস্ট্রাসে বা আঙুরের পথ ধরে আমাদের যাত্রা সেখানেই শেষ, যেখানে তার শুরু হয়েছিল: জার্মান ওয়াইন তোরণে৷ টুরিস্টদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন!