1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আঙ্গেলা ম্যার্কেল

জিনেট সাইফার্ট/আরবি১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩

প্রথম দিকে আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে দেখে কারুরই মনে হয়নি, এক সময় ক্ষমতার শিখরে উঠে আসবেন তিনি৷ ফ্যাকাশে চেহারা, পুরানো স্টাইলের চুলের ছাঁট, পোশাক-আশাকও আহামরি নয়৷ অথচ তিনিই এখন তৃতীয়বারের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর হতে চলেছেন৷

Bundeskanzlerin Angela Merkel (CDU) und der CDU-Spitzenkandidat der Landtagswahlen in Sachsen-Anhalt geben am Montag (21.03.2011) in Berlin eine gemeinsame Pressekonferenz. Die CDU diskutierte am Montag die Wahlergebnisse der Landtagswahlen in Sachsen-Anhalt vom Vorabend. Foto: Herbert Knosowski dpa
ছবি: picture-alliance/dpa

সর্বশেষ একটি জরিপের ফলাফল অনুযায়ী আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জয় প্রায় নিশ্চিত৷ তবে সম্প্রতি বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আঙ্গেলা ম্যার্কেল বেশ বিপাকে পড়েন৷

‘মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি' নিজের দেশের তো বটেই, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মানুষজনের ওপর নজরদারি করেছে বলে প্রকাশ পায়৷ অন্যদিকে এই তথ্যও জানা যায় যে, জার্মানির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা অনেক বছর ধরেই মার্কিনিদের গোয়েন্দাগিরির কথা জানতো, এমনকি সহযোগিতাও করে আসছিল তারা৷ বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদল ও মিডিয়া সোচ্চার হয়ে ওঠে৷ সমালোচনার সম্মুখীন হন ম্যার্কেলও৷

প্রথমে অপেক্ষা করা

চ্যান্সেলর ম্যার্কেল যথারীতি কিছুদিন নিশ্চুপ ছিলেন৷ অপেক্ষা করেছেন৷ অবশেষে জার্মান টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন গোয়েন্দাদের কার্যকলাপ হয়ত জার্মান আইনকে লঙ্ঘন করেছে৷ ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে বলে আশা করছি৷''

স্বামীর সঙ্গে ছুটি কাটানোর সময়ছবি: picture-alliance/dpa

আসলে এটাই হচ্ছে ম্যার্কেলের পদ্ধতি৷ সমস্যা হলে প্রথমে পরিস্থিতিটা কোন দিকে যাচ্ছে সেটা বোঝার চেষ্টা করেন তিনি৷ তারপর অধিকাংশের মতামতের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন৷ বলা বাহুল্য, তাঁর এই রাজনীতির জন্য প্রশংসিত ও সমালোচিত – দুটোই হতে হয়েছে তাঁকে৷

ম্যার্কেলকে বারবার তাঁর শক্তির পরীক্ষা দিতে হয়েছে, বিশেষ করে ইউরোপের রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ ২০০৮ সাল থেকে ইউরো সংকট তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে৷ সুকৌশলে এই সংকট উত্তরণের চেষ্টা করেছেন ম্যার্কেল৷ ম্যার্কেলের ‘ব্যয় সংকোচন নীতি' ভুক্তভোগী দেশগুলিতে ভালো চোখে দেখা হয়নি৷ তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিতে নেওয়া হয়েছে ম্যার্কেলের এই ‘ইউরো-রাজনীতি'৷

সুকৌশলে ম্যানেজ করা

লেখক ও সাংবাদিক রাল্ফ বোলমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সমগ্র বিষয়টি তিনি সুকৌশলে ম্যানেজ করেছেন৷ জার্মানির ‘ইউরো-সংশয়বাদী'-দের তিনি সন্তুষ্ট করেছেন বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে৷ অন্যদিকে, ‘ইউরোপ-বান্ধব'-দেরও তিনি খুশি করেছেন দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ সত্ত্বেও সংস্কার উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করে৷''

১৯৪৫ সালের পর জার্মানির ইতিহাসে আর কোনো রাজনীতিবিদকে এত ছোট করে দেখা হয়নি, যেমনটি করা হয়েছে সাবেক পূর্ব জার্মানির ছোট এক শহরের যাজক-কন্যা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ক্ষেত্রে৷ ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের আমলে৷

২০০০ সাল থেকে সিডিইউ-এর প্রধান হয়ে দলের হাল ধরে আছেন ম্যার্কেলছবি: picture-alliance/dpa

কোলের মানসকন্যা

‘‘অনেকেই এই ‘মেয়েটি'-কে নিয়ে হাসাহাসি করেছেন৷ যিনি অন্যান্য রাজনীতিকদের তুলনায় ছিলেন ভিন্নরকম৷'' এইভাবে ম্যার্কেলের কথা স্মরণ করে বলেন সাংবাদিক জাকুলিন বয়সেন৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের জীবনী লিখেছেন এই সাংবাদিক৷ এখন কিন্তু নিজের দলের বাইরেও ম্যার্কেলের শাসন পদ্ধতিকে অনেকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন৷

আঙ্গেলা ম্যার্কেল বাস্তবধর্মী এক রাজনীতিক৷ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন দ্রুত৷ প্রয়োজন হলে নিজের মতামত সংশোধন করতে অসুবিধা হয়না তাঁর৷ ফুকুশিমায় আণবিক বিপর্যয়ের পর পারমাণবিক শক্তি উত্পাদনকেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি তাৎক্ষণিকভাবে৷ অথচ একসময় আণবিক শক্তি উত্পাদন কর্মসূচির জোরালো সমর্থক ছিলেন তিনি৷

‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা' – এই হলো মার্কেলের রাজনীতি৷ তবে এতে কিন্তু তাঁর ‘ইমেজ'-এ মোটেও আঁচড় পড়েনি৷ বরং উল্টোটাই দেখা যায়৷ নিজের দল ও সরকার এখন যেন তাঁর হাতের মুঠোয়৷

হয়ত সাবেক পূর্ব জার্মানির পরিবেশ ও শিক্ষা-দীক্ষায় এইরকম মনমানসিকতা গড়ে উঠেছে তাঁর৷ ম্যার্কেলের জীবনী লেখক বয়েস-এর মতে, ‘‘তিনি এমন এক সিস্টেমে বড় হয়ে উঠেছেন, যেখানে যা চেয়েছেন তা পাননি৷ আর এই না পাওয়ার আকাঙ্খা ছাপ ফেলেছে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে৷''

সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের মানসকন্যা ম্যার্কেলছবি: AP

অল্প বয়সেই তাঁকে শিখতে হয়েছে, যতদূর সম্ভব খাপ খাইয়ে ও সতর্কতার সঙ্গে চলতে৷ তাই সেই সময় থেকেই ‘শুনতে' অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি৷

যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষতা

সমসাময়িকদের কাছে জানা যায়, যোগাযোগের ক্ষেত্রে তাঁর ছিল অসামান্য দক্ষতা, যা আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে৷ সাম্প্রতিক নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যক্তিগত জীবনের কথাও তুলে ধরেন ম্যার্কেল৷ যেমন তিনি কেক তৈরি করতে ভালোবাসেন৷ আর তা মনমত না হলে স্বামীর অনুযোগও শুনতে হয় তাঁকে, ইত্যাদি ইত্যাদি৷ এই প্রসঙ্গে মার্কেল বলেন, ‘‘আমি একজন ভদ্র মানুষ৷ আমাকে যা প্রশ্ন করা হয় তার উত্তর দেই৷ কিন্তু ব্যক্তিগত কথা বললে অভিযোগ করা হয়, আমি রাজনীতি সম্পর্কে বলছি না৷ রাজনীতি সম্পর্কে কথা বললে সমালোচনা করা হয়, শুধু রাজনীতিতেই আমার আগ্রহ৷''

রাজনৈতিক জগতে কিছুটা দেরিতে এবং হঠাৎ করে পরিকল্পনা ছাড়াই চলে আসেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির শেষ প্রধানমন্ত্রী লোটার ডি মেজিয়ের ৩৫ বছর বয়সি ম্যার্কেলকে ডেপুটি প্রেস অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেন৷ চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের আমলে তাঁকে পরিবেশমন্ত্রী করা হয়৷ পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী বিজ্ঞানীর জন্য উপযোগী এক মন্ত্রণালয়৷ ১৯৯৮ সালে নির্বাচনে হেরে গেলে সিডিইউ বেশ ভেঙে পড়ে৷ কিন্তু ম্যার্কেল তখন নিজের অবস্থানকে শক্ত করায় মনযোগ দেন৷ চ্যান্সেলর কোল চাঁদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লে তাঁর পতনকে ত্বরান্বিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি৷

২০০০ সাল থেকে সিডিইউ-এর প্রধান হয়ে দলের হাল ধরে আছেন তিনি৷ ২০০৫ সাল থেকে জার্মান চ্যান্সেলর হিসাবে দক্ষতার সাথে সরকার পরিচালনা করছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ দলের অভ্যন্তরে প্রতিপক্ষকে উঠে আসতে দেননি, থেকেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ