করোনা ভাইরাসের সৃষ্ট এই বৈশ্বিক মহামারির কালে একটি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কতটা অপ্রয়োজনীয় এবং অজ্ঞান হতে পারেন তার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷
বিজ্ঞাপন
এই সময়ে করণীয় নির্ধারণে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, পদাধিকারবলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার চেয়ারম্যানও বটেন, কিন্তু এই কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো যে তিনি জানেন না এবং জানতে আগ্রহী, এই তথ্যটুকু জানাতে তাকে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের বৈঠককে বেছে নিতে হয়েছে! বিচিত্র বলতে হলেও বোধহয় পরিস্থিতি আরেকটু স্বাভাবিক হতে হয়!
এক নজর দেখে নেওয়া যাক সোমবার কী বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷ ওই বৈঠকে জনাব মালেক বলেন, করোনা নিয়ে গঠিত জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত তাকে জানানো হচ্ছে না, যদিও পদাধিকার বলে তিনি সেই কমিটির চেয়ারম্যান৷ মানে, কমিটি যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যেমন, কারখানাগুলো কবে খোলা হবে বা খোলা হবে কিনা, মসজিদে নামাজ কিভাবে হবে এবং কখন রাস্তা খুলে দেওয়া হবে, তা তিনি জানতে পারেন না৷ স্বাস্থ্য বিষয় বাদে অন্য কোনো ধরনের বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয় না৷ তিনি যেহেতু কমিটির প্রধান তাই বিষয়টি তার জন্য বিরক্তিকর৷ নিরুপায় হয়ে তিনি সচিব সাহেবকে বলেছেন, তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত না নিলেও অন্তত পরামর্শ যেন করে সে বিষয়ে আলোচনা করতে৷ অন্য অসুবিধার জন্য নয়, দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়ার জন্য তার এ বিষয়টা জানা জরুরি৷
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের প্রশ্ন, একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাজ কী? মহামারির ঝুঁকিতে গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্যরা যে তার চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানানোরও প্রয়োজন মনে করছেন না, তার নিশ্চয়ই উপযুক্ত কারণ রয়েছে৷ মানে, এইসব সিদ্ধান্ত তাকে জানানো না জানানোতে কিছুই যায় আসে না৷ এরকম একজনকে চেয়ারে রাখার কারণ আমরা জানতে চাই৷
আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে না জানানোর মানে যদি হয় সমন্বয়হীনতা, তবে কি আমরা চিন্তা করতে পারছি যে, কী অসাধারণ সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি? ঘটনা যেরকমই হোক, আমরা এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ দাবি করি৷ আমরা মনে করি, অনুপযুক্ত কাউকে গুরুভার দেওয়ার নিরীক্ষা এই মুহূর্তে বন্ধ হওয়া দরকার৷
করোনা সংকটে পপুলিস্ট নেতারা কোণঠাসা
পপুলিজম বা জটিল সমস্যার চটজলদি সমাধান বাতলে দেবার প্রবণতা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু পপুলিস্ট নেতারা করোনা সংকটের সামনে অসহায় হয়ে পড়ছেন৷
ছবি: Imago Images/Media Punch/O. Contreras
ডনাল্ড ট্রাম্পের দুশ্চিন্তা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে সাফল্যের আশায় ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ প্রথমে করোনা সংকট লঘু করে দেখিয়ে চাপের মুখে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি৷তবে বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞদের অবজ্ঞা করে ইস্টারের আগেই পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ করে তুলতে চান ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
বরিস জনসনের উভয় সংকট
সবে ব্রেক্সিট কার্যকর করে জনপ্রিয়তা উপভোগ করছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ করোনা সংকট তাঁর ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে৷ প্রথমদিকে পরস্পরবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর অবস্থান নেবার পর জনসনও কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবকাঠামো পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে জনসনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/I. Vogler
নরেন্দ্র মোদীর বিড়ম্বনা
ভারতে করোনা সংকট এখনো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি৷ কিন্তু সমালোচকরা সরকারের অনেক ‘লোক দেখানো’ পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন৷ তাঁদের মতে, লকডাউন ঘোষণা ও জনমোহিনী ভাষণ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংক্রমণ কমাতে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব ভারতকে সংকটে ফেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
বেপরোয়া বোলসোনারো
অন্যান্য পপুলিস্ট বিশ্বনেতার মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো করোনা সংকট যতটা সম্ভব উপেক্ষা করে চলার চেষ্টা করছেন৷ তিনি বিষয়টিকে নিয়ে ‘অকারণ ত্রাস’ সৃষ্টির সমালোচনা করে থাকেন৷ এমনকি অবিলম্বে দেশে সব বাধানিষেধ তুলে নেবার ডাক দিচ্ছেন তিনি৷ বয়স্কদের ভিত্তিহীন আশ্বাস দিয়ে বলছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/A. Borges
সীমান্ত বন্ধ রাখতে চান ল্য পেন
ইউরোপের পপুলিস্ট নেতারা ভাঙলেও মচকাতে প্রস্তুত নন৷ ফ্রান্সের জাতীয় ফ্রন্ট নেত্রী মারিন ল্য পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের ‘সীমন্তহীনতার ধর্ম’-কে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন৷ তাঁর মতে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই সীমান্ত মানুষকে সুরক্ষা দেয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করার কোনো পরামর্শ যে দেয়নি, ল্য পেনের অনুগামীরা সেই খবর রাখেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
বিশেষজ্ঞদের পছন্দ নয়
ট্রাম্প, জনসন, বোলসোনারোর মতো নেতারা কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রাহ্য করতে চান না৷ বিশেষজ্ঞরাই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠুন, সেটাও তারা চান না৷ নিজেদের ভিত্তিহীন ধারণাকে জনমোহিনী মোড়কে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তাঁরা যথেষ্ট সফল হয়েছেন৷ ফলে করোনা সংকটের সময় সাধারণ মানুষের বিপদের আশঙ্কা আরো যাচ্ছে৷