আর্মেনিয়ার রাজধানীর কাছে পৌঁছে গেল আজারবাইজানের ড্রোন। গুলি করে তা নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আর্মেনিয়া।
বিজ্ঞাপন
আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল হলো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ গোটা বিশ্ব যুদ্ধ বন্ধের আবেদন করলেও প্রতিদিন পরিস্থিতি আরও কঠিন হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আর্মেনিয়ার সরকার বিবৃতি জারি করে বলেছে, রাজধানীর অদূরে চারটি ড্রোন নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। ওই ড্রোনে আজারবাইজান বোমা পাঠিয়েছিল বলে তাদের অভিযোগ।
আজারবাইজান, আর্মেনিয়ার মধ্যে সংঘাতের কারণ কী?
২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছে৷ এর কারণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Armenian Defense Ministry/Reuters
সংঘাতের কারণ
২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছে৷ এর কারণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল৷
ছবি: Defence Ministry of Azerbaijan/Reuters
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল কোথায়?
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ৷ পাহাড় ও বন ঘেরা দুর্গম এই অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাস করেন৷ তাদের বেশিরভাগই আজারবাইজানের শাসনের বিরোধী আর্মেনীয়৷ অঞ্চলটির আয়তন প্রায় চার হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার৷
প্রথম সংঘাত
গত শতকের আশির দশকের শেষদিকে যখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার প্রক্রিয়া চলছে, তখন থেকেই নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাতের শুরু৷ ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে এই সংঘাত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাণ হারান প্রায় ৩০ হাজার মানুষ৷ সংঘাতের কারণে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আর্মেনীয়দের হাতে৷
ছবি: Reuters/Photolure/V. Baghdasaryan
আর্মেনিয়ার সহায়তা
১৯৯৪ সালের পর থেকে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে আর্মেনিয়া৷ এছাড়া সারা বিশ্বে থাকা আর্মেনীয়রাও ঐ অঞ্চলের জন্য দান করে থাকেন৷ ছবিতে কারাবাখের সবচেয়ে বড় শহর স্টেপানাকিয়ার্ট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Zuma/imago images
মাঝেমধ্যেই সংঘাত
যুদ্ধবিরতি চললেও নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সৈন্যদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ ২০১৬ সালে এক সংঘাতে (ছবি) প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারান৷ এছাড়া গত জুলাইতেও মোটামুটি বড় আকারের সংঘাত হয়েছিল৷ রবিবার শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন৷ নিহতদের অন্তত ১১ জন বেসামরিক নাগরিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Baghdasaryan
আবার কেন সংঘাত?
জুলাইয়ের সংঘাতের সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার সমাধানে ততটা আগ্রহ দেখায়নি৷ অতীতে রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ঐ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে মধ্যস্থতা করলেও বর্তমানে করোনা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, বেলারুশ, লেবানন পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া যায়নি৷ তাই রবিবার থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷
ছবি: Armenian Defense Ministry/Reuters
এবারের সংঘাত কতটা বড়?
‘জর্জিয়ান স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিসিস সেন্টার’-এর সিনিয়র ফেলো গেলা ভাসাদজে বলছেন, ১৯৯০ দশকের পর এই ‘প্রথম’ আর্মেনিয়া ও কারাবাখ ঐ অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক যান জড়ো করছে৷ আজারবাইজানও সামরিক আইন জারি করেছে৷ এছাড়া আকাশ থেকে হামলা চালানোর সিস্টেম, ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি সবকিছুর ব্যবস্থা করছে দেশটি৷
খ্রিস্টানপ্রধান আর্মেনিয়ার সবচেয়ে বড় বন্ধু রাশিয়া৷ তাদের সঙ্গে সামরিক চুক্তিও আছে দেশটির৷ আর মুসলমানপ্রধান দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি আছে তুরস্কের৷ তবে বিশ্লেষক গেলা ভাসাদজে বলছেন, রাশিয়া ও তুরস্ক হয়ত সরাসরি এই সংঘাতে যুক্ত হবে না, কারণ, এতে যুক্ত হয়ে খুব বেশি লাভ নেই৷ বরং এর ফলে তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷
ছবি: Armenian Defense Ministry/AP/picture alliance
রাশিয়ার সুযোগ
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে সমর্থন জানিয়ে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের বিরোধী নাভালনিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ সমালোচনার মুখে আছে রাশিয়া৷ এই অবস্থায় রাশিয়া যদি আলোচনার মাধ্যমে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে বিশ্বমঞ্চে রাশিয়া প্রশংসিত হতে পারে৷ পুটিন ইতিমধ্যে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look/Belarus 24 TV
9 ছবি1 | 9
ককেশাস পর্বতে বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখের দখল নিয়ে গত রোববার থেকে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুই দেশই সীমান্তের দুই পার থেকে যথেষ্ট গোলাগুলি চালাচ্ছে। নাগর্নো-কারাবাখেও ঢুকে পড়েছে দুই দেশের সৈন্য। চলছে তুমুল লড়াই। বেসরকারি সূত্র জানাচ্ছে, এখনো পর্যন্ত যুদ্ধে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত অসংখ্য। তার মধ্যে দুইজন ফরাসি সাংবাদিক আছেন।
মঙ্গলবার থেকে আর্মেনিয়া অভিযোগ করতে শুরু করেছে, তুরস্ক আজারবাইজানকে সাহায্য করছে এবং যুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার তুরস্ক আর্মেনিয়ার একটি যুদ্ধ বিমান ধ্বংস করেছিল বলে অভিযোগ। বুধবার তুরস্কের যুদ্ধবিমান আর্মেনিয়ার আকাশে ঢুকে পড়েছিল বিপজ্জনক ভাবে। আর বৃহস্পতিবার আর্মেনিয়ার রাজধানীর খুব কাছে পৌঁছে গেল আজারবাইজানের চারটি ড্রোন। আর্মেনিয়া জানিয়েছে, প্রতিটি ড্রোনকেই অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল দিয়ে মাটিতে নামানো হয়েছে। অভিযোগ, আজারবাইজান ড্রোন ব্যবহার করে রাজধানীতে বোমা মারার চেষ্টা করছিল।
ড্রোনের বিষয়ে আজারবাইজান এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি। আর্মেনিয়ার বক্তব্য, যুদ্ধে আজারবাইজানকে সবরকম সাহায্য করছে তুরস্ক। যুদ্ধবিমান দিয়ে তারা সাহায্য করছে। এ ছাড়াও সিরিয়ার বহু যোদ্ধাকে বিতর্কিত অঞ্চলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে তুরস্ক। তুরস্ক অবশ্য এই সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার ফের তারা জানিয়েছে, প্রয়োজনে আজারবাইজানকে সব রকম সাহায্য করা হবে।
এ দিকে জার্মানি সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আবেদন জানিয়েছে। ফ্রান্স, অ্যামেরিকা এবং রাশিয়া একটি যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ একই আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু যুযুধান দুইপক্ষ কোনও আবেদনেই সাড়া দেয়নি। আজারবাইজান জানিয়েছে, আর্মেনিয়া বিতর্কিত অঞ্চল থেকে না সরলে যুদ্ধ বন্ধের প্রশ্নই ওঠে না। আর্মেনিয়াও আজারবাইজানকে যোগ্য জবাব দেওয়ার কথা বলেছে।