আরব বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে বলে ১৩ আগস্ট জানানো হয়েছিল৷ আজ সোমবার দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এই ফ্লাইটে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিইর বেন শাবাত ছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা ও জামাতা জারেড কুশনার ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও'ব্রায়ান আছেন৷ তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সইয়ের একটি দিন ঠিক করবেন৷ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সেটা হতে পারে, কারণ একে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হবে৷
ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাওয়া এই ফ্লাইটের নম্বর দেয়া হয়েছে এল আল ৯৭১৷ এল আল ইসরায়েলের জাতীয় বিমানসংস্থা৷ আর ৯৭১ আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক ডায়াল কোড৷ ফিরতি ফ্লাইটের নম্বর এল আল ৯৭২৷ ৯৭২ ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক ডায়াল কোড৷ মঙ্গলবার সকালে ফিরতি ফ্লাইটটি রওয়ানা হওয়ার কথা৷
ইরান নিয়ে উদ্বিগ্ন অন্যান্য সুন্নি আরব রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকানোর চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তবে এসব রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সৌদি আরব বলেছে, তারা এর জন্য এখনও প্রস্তুত নয়৷
অবশ্য ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইটকে সৌদি আরবের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তবে এল আল বিমানসংস্থার কর্মকর্তা ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এই খবর নিশ্চিত করেনি৷
এল আল ৯৭১ ফ্লাইটের ককপিটে আরবি, ইংরেজি ও হিব্রু ভাষায় ‘শান্তি’ শব্দটি লেখা হয়েছে৷
১৩ আগস্ট আরব আমিরাত-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকের ঘোষণা দেয়ার পর দুই দেশের মন্ত্রীদের মধ্যে টেলিফোন আলোচনা হয়েছে৷ এছাড়া শনিবার ইসরায়েলকে বয়কট করা ১৯৭২ সালের আইন বাতিল করেছে আরব আমিরাত৷
আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত মিশর ও জর্ডান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে৷ এই তালিকায় আরব আমিরাতের নাম যুক্ত হতে যাওয়ায় অন্য আরব দেশও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে বলে আশা করছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷
জেডএইচ/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷