প্রায় ৬০ বছর ধরে কিউবার ক্ষমতায় ছিলেন দুই কাস্ত্রো৷ আজ সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে৷ কিন্তু যিনি আসছেন তিনি কিউবায় খুব কমই পরিবর্তন আনবেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন৷
বিজ্ঞাপন
১৯৫৯ সালে বিপ্লবের মাধ্যমে মার্কিন সমর্থিত কিউবার একনায়ক ফুলখেনসিও বাতিস্তাকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো৷ তারপর অসুস্থতার কারণে ২০০৮ সালে ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা দিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি৷ আর আজ রাউলও সরে দাঁড়াচ্ছেন৷ তাঁর জায়গায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিচ্ছেন তাঁরই আস্থাভাজন মিগেল ডিয়াস-কানেল, যিনি এতদিন ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ প্রকৌশলে ডিগ্রিধারী ডিয়াস-কানেলের জন্ম ১৯৬০ সালে, অর্থাৎ বিপ্লবের একবছর পর৷
তবে ডিয়াস-কানেলের কিউবায় খুব বেশি পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা৷ অ্যামেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে কিউবার রাজনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম লেওগ্রান্দে বলছেন, ‘‘ডিয়াস-কানেলের কারণে আমাদের কিউবায় নাটকীয় পরিবর্তন আশা করা উচিত নয়৷ কারণ তিনি যদি রাউল কাস্ত্রোর নীতির সঙ্গে একমত না হতেন তাহলে তাঁকে ক্ষমতায় আনা হতো না৷''
কিউবায় ওয়াই-ফাই মানে পরিবার
কিউবায় সাধারণ মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ অনেক কম৷ ফলে সেখানে যে হটস্পটগুলো চালু আছে, সেখানে গিয়ে বিদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বাসিন্দারা৷
ছবি: Reuters/A.Meneghini
অনুমতি নিয়ে সংযোগ
শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকের মতো কিছু পেশার মানুষ সরকারের অনুমতি নিয়ে তাঁদের বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েছেন৷ এছাড়া ২০১৬ সালে এক পাইলট প্রকল্পের আওতায় হাভানার কয়েকশত বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ দেয় সরকারি টেলিকম সংস্থা৷ সম্প্রতি সারা দেশে ইন্টারনেট সুবিধা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তারা৷
ছবি: DW/F. Kroker
ভরসা কম
সরকারি টেলিকম সংস্থার কথায় ভরসা নেই কিউবাবাসীদের৷ কারণ, এ রকম পরিকল্পনার কথা তাঁরা আগেও শুনেছেন, কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি৷ তবে সরকার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ ব্যববহুল হয়ে উঠেছে৷ তাই পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও দেরি হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A.Meneghini
হটস্পটেই আশা
কিউবায় ইন্টারনেট পরিস্থিতির এমন করুণ অবস্থার কারণে ওয়াই-ফাই হটস্পটগুলোতে ভিড় জমায় মানুষ৷ দিনে তীব্র গরম থাকায় সন্ধ্যার পরই সেখানে বেশি জমায়েত দেখা যায়৷ ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে মানুষ সাধারণত বিদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ এছাড়া কেউ দেখেন মেইল, কেউ পড়েন সংবাদ৷
ছবি: DW/F. Kroker
রাতভর লাইন
ছবিতে ৫৪ বছর বয়সি মারিবেল সোসাকে তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷ ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ সোসা জানান, আগে কয়েক মিনিট কথা বলার জন্য সারারাত টেলিফোন বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো৷ তবে এখন নিজের বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা চেয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A.Meneghini
নানান সমস্যা
হটস্পটগুলোতে মানুষের ভিড়ের কারণে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয় না৷ তাছাড়া আছে মশা, মাছির কামড়৷ আবার যখন একই সময়ে অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তখন সংযোগও ধীর হয়ে যায়৷
ছবি: Imago/Zuma Pres
শুরুর কথা
কিউবার বিভিন্ন স্থানে প্রায় দুই বছর আগে হটস্পট তৈরি শুরু করে সরকার৷ গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এমন স্পটের সংখ্যা ছিল ৪৩২টি৷ ২০১৬ সালে ১১ মিলিয়ন অধিবাসীর প্রায় অর্ধেক অন্তত একবার হলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন৷
ছবি: Reuters/A.Meneghini
ব্যয়বহুল
এক ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ প্রায় দেড় ডলার৷ সেখানকার মানুষের মাসিক গড় আয় ৩০ ডলার৷ অর্থাৎ এক ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আয়ের প্রায় পাঁচ শতাংশ ব্যয় করতে হয়৷
ছবি: Reuters/A.Meneghini
7 ছবি1 | 7
ফ্লরিডা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাতিন অ্যামেরিকার রাজনীতির অধ্যাপক এদুয়ার্দো গামারা বলেন, ডিয়াস-কানেল প্রগতিশীল কিংবা উদারপন্থি রাজনীতিবিদ নন৷ ফলে কিউবায় উদারপন্থি শাসন ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা তিনি করবেন, বলে মনে করেন না গামারা৷
৮৬ বছর বয়সি রাউল কাস্ত্রো প্রেসিডেন্ট হিসেবে সরে দাঁড়ালেও ২০২১ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হিসেবে থেকে যাবেন৷ ফলে কিউবার নীতিতে তাঁর একটি প্রভাব থাকবে৷ অবশ্য এটি ডিয়াস-কানেলের জন্য ভালোও হতে পারে বলে মনে করছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউবা বিশেষজ্ঞ খর্গে ডমিনগেজ৷ তিনি বলছেন, ‘‘ডিয়াস-কানেল যদি কঠিন, অথচ ভালো একটি সিদ্ধান্ত নেন, রাউল হয়ত বলতে পারেন, ‘আমি তাঁকে সমর্থন করছি', তাহলে ডিয়াস-কানেলের জন্য বিষয়টি বাস্তবায়ন সহজ হতে পারে৷''
বিপ্লবের মহানায়ক ও ‘বাংলাদেশের বন্ধু’ ফিদেল কাস্ত্রো
কিউবা বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা ফিদোল কাস্ত্রো আর নেই৷ ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ‘বাংলাদেশে বন্ধু’ কাস্ত্রো৷ ছবিঘরে তাঁরই কিছু কথা ও ছবি...
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Garcia Mederos
এই তো সেদিন...
গত ১৩ আগস্টই তাঁর জন্মদিন উদযাপন করেছিল কিউবা৷ তাই হাভানার রাস্তার ধারের দোকানটির এই জানালাতেও ছিল তাঁর জন্য শুভকামনা, সেখানে লেখা, ‘ফিদেলের ৯০ এবং আরো অনেক দিন...৷’’ কিন্তু অনেকদিন নয়, মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই চিরবিদায় নিলেন কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল আলেসান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ৷ কিউবার সময় অনুযায়ী শুক্রবার রাতে রাজধানী হাভানায় প্রয়াণ হয়েছে তাঁর৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Lage
কিউবার অন্য নাম ‘কাস্ত্রোর দেশ’
১৯৫৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কাস্ত্রো৷ তারপর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন প্রেসিডেন্ট৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই, সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশে৷ কিন্তু পুঁজিবাদী বিশ্বের শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের পাশেই তাঁর নেতৃত্বে কিউবা এখনো অটল৷ ২০০৮ সালে রাষ্ট্র শাসনের ভার ভাই রাউল কাস্ত্রোকে দিয়ে অবসর জীবনই যাপন করছিলেন কাস্ত্রো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Ernesto
যুক্তরাষ্ট্রের ‘বন্ধু’ ছিলেন না
তাঁর নেতৃত্বে পথ চলতে শুরু করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে কখনো বন্ধুরাষ্ট্রের ভূমিকায় পায়নি কিউবা৷ ১৯৬১ সালে সম্পর্ক ছিন্ন করে কিউবার ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে বৈরিতা৷ ওবামা দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে সম্পর্কোন্নয়নে উদ্যোগ নেন৷ তারই ফলশ্রুতিতে গত মার্চে কিউবা সফর করেন ওবামা৷ওপরের ছবিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট রৌহানির সঙ্গে কাস্ত্রো৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Castro
যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক নিয়ে তাঁর অমর বাণী
ওবামার কিউবা সফরের আগে থেকেই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক নিয়ে প্রায় চল্লিশ বছর আগে কাস্ত্রোর করা এক মন্তব্য নিয়ে চলছিল ব্যাপক আলোচনা৷ কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এলে এবং লাতিন আমেরিকার কেউ পোপ হলে যুক্তরাষ্ট্র ঠিকই কিউবার সঙ্গে আলোচনার জন্য এগিয়ে আসবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Ernesto
ক্রীড়াপ্রেমী এবং মারাদোনার বন্ধু
খেলাধুলায় বেশি ঝোঁক থাকার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় কখনো বেশি মনযোগী হতে পারেননি ফিদেল কাস্ত্রো৷ পরে সাম্যবাদ কায়েমের স্বপ্ন তো আইন বিষয় নিয়ে লেখাপড়াও শেষ করতে দেয়নি৷ ফুটবল ভালোবাসতেন৷ সেই সুবাদে দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে গড়ে ওঠে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক৷ একবার মারাদোনা ভয়ঙ্কর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য তাঁকে কিউবায় ডেকে নেন কাস্ত্রো৷ সুস্থ হয়েই দেশে ফিলেছিলেন মারাদোনা৷
ছবি: AP
বাংলাদেশের বন্ধু
একাত্তরে মুক্তিকামী বাঙালিদের পাশে ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো৷ তার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেয়৷ কাস্ত্রোর মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শোক বার্তায় বলেছেন, ‘‘ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যু বিশ্ব রাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি৷ শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার সংগ্রামের কথা বিশ্ববাসী আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Garcia Mederos
কাস্ত্রোর হিমালয় ‘বঙ্গবন্ধু’
১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর৷ বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে কাস্ত্রো সেদিন বলেছিলেন, ‘‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি৷ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় এই মানুষটি হিমালয়ের মতো৷ আজ যেন আমার কাছ থেকে হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা হলো৷’’