না, শিরোনাম পড়ে ধরে নেবেন না ব্যাপার আনন্দের৷ ইউরোপ তথা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের জন্য বিষয়টি বেশ চিন্তার৷ গ্রিস যেন এই অবস্থায় পৌঁছাতে না পারে সেজন্য গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে আলোচনা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
কিন্তু দাতাদের সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে গ্রিস এখনও একমত হতে না পারায় বেইলআউট প্যাকেজের শেষ কিস্তির টাকা (৭.৪ বিলিয়ন ইউরো) পায়নি গ্রিস৷ তাই মঙ্গলবার আইএমএফকে ঋণের যে ১.৫ বিলিয়ন ইউরো ফেরত দেয়ার কথা সেটা গ্রিস দিতে পারবে না বলে সোমবারই জানিয়ে দিয়েছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস৷
দাতাদের সবশেষ সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দেশের নাগরিকদের মনোভাব জানতে আগামী রবিবার গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন সিপ্রাস৷ ঐ গণভোটে দাতাদের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ সেটা না হলে নিজে পদত্যাগ করতে পারেন বলেও আভাস দিয়েছেন৷
এদিকে, জার্মান চ্যান্সেলর এবং ফ্রান্স ও ইটালির প্রেসিডেন্ট সহ ইউরোপের নেতারা গণভোট নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, এই ভোট গ্রিসের ইউরোজোনে থাকা না থাকারও একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে৷
গ্রিক প্রধানমন্ত্রীর একসময়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ইউরোপীয় নেতা বলে পরিচিত ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার গণভোট আয়োজনের ঘোষণায় নিজেকে ‘প্রতারিত' মনে করছেন৷ তিনি মনে করছেন, ‘‘গণভোটে ‘না' জয়ী হওয়া মানে গ্রিসের ইউরোপকে না বলা৷''
গ্রিসে অভিবাসীদের চরম দুর্দশা
আর্থিক মন্দার কারণে সামগ্রিকভাবে গ্রিসের অবস্থা অত্যন্ত কাহিল৷ এই কাহিল দশার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সেদেশে অবস্থানরত বৈধ, অবৈধ অভিবাসীরা৷ অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি, জীবন কাটাচ্ছেন রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয় এবং ঘৃণা
‘ভয়ের সভ্যতায় স্বাগতম’ - অভিবাসীদের জন্য গ্রিস ক্রমশ ভয়ের রাজ্যে রূপ নিচ্ছে৷ তাদের নিত্যদিনের জীবন এখন সহিংসতা, বৈষম্য আর দারিদ্র্যের বিস্বাদে ভরা৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কিছুই বাকি নেই
কাগজপত্র ছাড়া দুই অভিবাসীকে একটু আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক এই দুই ব্যক্তি তাকিয়ে আছেন নিয়তির দিকে৷ গ্রিসে বসবাসকারী এরকম অসংখ্য অবৈধ ব্যক্তিকে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারের পর এদেরকে বাসে করে আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ প্রতিদিন অবৈধ অভিবাসী ভর্তি ১০-১৫টি বাস আটক কেন্দ্রে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বাক্সের মধ্যে জীবনযাপন
অর্থনৈতিক মন্দা গ্রিসের বাসিন্দাদের অত্যন্ত শক্তভাবে আঘাত করেছে৷ এর ফলে অনেকে হয়েছেন গৃহহীন, বাস করছেন রাস্তায়৷ ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে সেদেশের রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয়ের মধ্যে বসবাস
আনা টাসাভি একজন সিরীয় শরণার্থী৷ কোন কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে এথেন্সে বাস করেন তিনি৷ তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধুর বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন৷ তার মধ্যে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে, এই বুঝি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবেন কিংবা ডানপন্থী গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হবেন৷ নিজের দেশে ফেরাটাও তার জন্য অনেক বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বহিরাগত
একজন অভিবাসী নারী এবং তার শিশু এথেন্সের আটক কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন৷ অবৈধ হিসেবে আটক হওয়ায় কয়েকমাস কারাভোগ করতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বৈশ্বিক অর্থনীতি
গ্রিসে আর্থিক মন্দার কারণে সেদেশের সরকার এবং বিশ্বায়নে তাদের ভূমিকার উপর গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ব্যাপক ভিড়
এথেন্সের পররাষ্ট্র দপ্তরের সামনে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য অভিবাসী৷ উদ্দেশ্য গ্রিসে বসবাসের একটি বৈধ কাগজ বের করার চেষ্টা করা৷ খুব ভোর থেকে গভীর রাত অবধি অপেক্ষা করেন তারা, কিন্তু এদের মধ্য থেকে খুব কম লোকই সেদেশে ছয়মাস বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পান৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কোন ভবিষ্যত নেই?
‘এমনিতেই এথেন্সে বসবাস অত্যন্ত কঠিন, আর একজন অভিবাসী হিসেবে অসম্ভব৷ আমি এখানে এসেছিলাম একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়, কিন্তু এখানে কোন ভবিষ্যতই নেই’, ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন এক অভিবাসী৷ নিজের নাম প্রকাশে আগ্রহী নন তিনি৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কঠিন বাস্তবতা
ইউরোপে আগমনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রিসে আসেন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ৷ কিন্তু এরপর তারা এক জটিলতা থেকে অন্য জটিলতার মুখোমুখি হন৷ গ্রিসের বাস্তবতা এখন বড় কঠিন৷
ছবি: DW/ A. Stahl
গ্রিক ট্রাজেডি
এথেন্সের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এরকম গ্রাফিটির সংখ্যা অনেক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব গ্রাফিটি গ্রিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়দের মনোভাব ফুটিয়ে তোলে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
যাওয়ার কোন জায়গা নেই
গ্রিসে বসবাসরত অভিবাসীরা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন৷ তাদের জন্য কোন চাকুরি নেই, ভবিষ্যত অন্ধকার৷ অনেক অভিবাসী শেষমেষ বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি আর জীবন কাটান রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
11 ছবি1 | 11
তবে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গণভোটের রায় গ্রিসকে দাতাদের সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় একটি শক্ত ভিত্তি দেবে৷
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় গ্রিসের দুটি শহরে দাতাদের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গ্রিস সরকারের অবস্থানের সমর্থনে মিছিল হয়েছে৷ এত প্রায় ১৩ থেকে ১৭ হাজার মানুষ অংশ নেয় বলে বার্তা সংস্থাগুলো খবর দিয়েছে৷
গ্রিসের বিষয়টি ইউরোপ ছাড়িয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কারণ গ্রিস সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিশ্বের শেয়ার বাজারে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গ্রিস প্রসঙ্গ নিয়ে টেলিফোনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, গ্রিসের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে এখনও আলোচনা হতে পারে৷