ছয় বছর আগে ১ জুলাই রাতেই হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা৷ ভয়ঙ্কর সেই রাত বহু মানুষের জীবন বদলে দেয়, বাংলাদেশও বদলে যায় অনেকখানি৷
বিজ্ঞাপন
গুলশান-২ নম্বর এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হোলি আর্টিজান বেকারির সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়৷ রোজার ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে যে সন্ধ্যায় সেখানে জঙ্গি হামলা হয়, সেদিন ছিল শুক্রবার৷
পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে পাঁচ তরুণ রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে শুরু করে নৃশংসতা৷ গোলাগুলির খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান গুলশান থানা পুলিশের সদস্যরা৷ ‘আল্লাহু আকবর' ধ্বনি দিয়ে রেস্তোরাঁর ভেতরে এলোপাতাড়ি গুলির খবর মুহূর্তে পুলিশের ওয়্যারলেসে ছড়িয়ে পড়ে৷
জবাই করে এবং গুলি চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে উগ্রবাদী সেই তরুণের দল৷ হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা৷ ভয়ঙ্কর সেই রাতের শেষে কমান্ডো অভিযানে জঙ্গিদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হোলি আর্টিজান সংকটের অবসান হয়৷
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার কূটনৈতিকপাড়া গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন ওই জঙ্গি হামলা বাংলাদেশকে বদলে দেয় অনেকখানি৷ ছয় বছর পেরিয়ে এসে পুলিশের দায়িত্বশীলরা বলছেন, সেই বদলটা হয়েছে ‘ইতিবাচক', সে কারণে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকেও এখন বাংলাদেশের অবস্থান ‘অনেক ভালো'৷
হোলি আর্টিজানের ওই হামলা সাধারণ মানুষের মত চমকে দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও৷ সন্ত্রাস, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতির মতো ঘটনা মোকাবেলা করে অভ্যস্ত পুলিশ-র্যাবকে জঙ্গিদের সরাসরি মোকাবেলার বড় পরীক্ষায় নামতে হয়৷
ওই ঘটনার মাত্র চার মাস আগে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে গঠন করা হয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তারাও ওই হামলা সম্পর্কে প্রথমে বুঝতেই পারেনি৷
সেই রাতের অভিজ্ঞতা বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তার চিত্রকেও৷ এখন যে কোন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের আগেই নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এলাকা ঘিরে নিরাপত্তা মহড়া দেয়। বোমা অপসারণ ইউনিটের সদস্যরা খুঁজে পেতে দেখেন ঝুঁকিপূর্ণ কিছু রয়েছে কি না৷ নিরাপত্তার জন্য র্যাব, সিটিটিসিসহ পুলিশের একাধিক ইউনিট প্রশিক্ষিত কুকুর এনে ‘ক্যানাইন' গঠন করেছে৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আগে এখন সেসব কুকুরকেও মাঠে দেখা যায়৷
গ্রেপ্তারপৌনেতিনহাজার
হোলি আর্টিজান হামলার পর প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি৷ সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের নেতৃত্বে অপারেশন ‘থান্ডারবোল্ট' এর মধ্য দিয়ে হোলি আর্টিজানের জিম্মিদের মুক্ত করা হয়৷ সেই অভিযানেই নিহত হয় হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণ৷
এর ২৫ দিন পরেই রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজ বাড়ি বলে পরিচিত একটি ভবনে গড়ে তোলা জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় সিটিটিসি৷ সেখানে নয়জন জঙ্গি নিহত হয়৷
এরপর একে একে পরিচালিত হয় নারায়ণগঞ্জে অপারেশন হিট স্টর্ম-২৭, গাজীপুরের পাতারটেকে অপারেশন স্পেড-৮, সিলেটে অপারেশন টোয়াইলাইটসহ অনেকগুলো অভিযান৷
সিটিটিসি জানাচ্ছে, হলি আর্টিজানের ঘটার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান' পরিচালনা করেছে তারা৷ এসব অভিযানে নিহত হয়েছেন ৬৩ জন৷ এর মধ্যে হোলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীও রয়েছেন৷
গত ছয় বছরে সিটিটিসি মোট ৫৫৯ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷ এছাড়া অনলাইনে উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে আরো ৪৭২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এ ইউনিটটি৷
র্যাব জানাচ্ছে, হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর তাদের পরিচালিত ৭৭৯টি উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে ১ হাজার ৬৭৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে৷ এ সময়ে তারা ৫৪টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছেন৷ র্যাবের অভিযানেও হলি আর্টিজানের অন্যতম পরিকল্পনাকারী সারোয়ার জাহানসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়৷
‘ডি-র্যাডিক্যালাইজেশন'
সেদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে পরে জঙ্গি দমনে বিশেষ সেল গঠন করার পাশপাশি ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর সারা দেশের জন্য পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট নামে পৃথক একটি ইউনিট গঠন করা হয়৷ র্যাবেও রয়েছে জঙ্গি নিয়ে কাজ করার পৃথক সেল৷
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে এর মধ্যে বিদেশে প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন শতাধিক কর্মকর্তা৷ এসেছে নতুন অস্ত্র, সরঞ্জাম ও গাড়ি৷ পেতে রাখা বোমা অপসারণে ঢাকার সিটিটিসি এখন জার্মানি থেকে আনা দুটি অত্যাধুনিক রোবটের সাহায্য নিচ্ছে৷
আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদবিরোধী প্রচার বন্ধেও গুরুত্ব দিয়েছে সরকার৷ সেজন্য বিশেষ প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসির প্রধান (অতিরিক্ত কমিশনার) আসাদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ‘সন্ত্রাস দমন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ' প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো হচ্ছে৷ এ পর্যন্ত ৪৮টি জেলায় এ ধরনের কর্মসূচি হয়েছে৷
‘‘একটা ছেলে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হলে কী ধরনের লক্ষণ দেখা যাবে, এটা যদি কেউ না জানেন, তবে তিনি নিজের সন্তানকে রক্ষা করতে পারবেন না৷ এ বিষয়গুলোই আমরা প্রচার করেছি৷’’
আসাদুজ্জামান দাবি করে, তাদের এই প্রচারের কারণে তরুণ প্রজন্মকে আগের মতো অনলাইনে আর ‘উদ্বুদ্ধ করতে পারছে না' উগ্রবাদীরা৷
হোলি আর্টিজান হামলার টাইমলাইন
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাঁচ জঙ্গিসহ ২৯ জন নিহত হয়৷ হামলায় জড়িত থাকার দায়ে সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
হামলা শুরু
২০১৬ সালের ১ জুলাই শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে ঢাকার গুলশান দুই-এর ৭৯ নম্বর সড়কের পাঁচ নম্বর বাড়ির হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
হামলাকারী
সরাসরি হামলায় অংশ নেন পাঁচজন৷ তারা হলেন: রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ৷ শনিবার সকালে সেনা কমান্ডো অভিযানে তারা সবাই নিহত হন৷ ছবিতে হামলাকারী নিবরাস ইসলামকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/Courtesy SITE Intel Group
নিহত
মোট ২৯ জন প্রাণ হারান৷ এর মধ্যে পাঁচ জঙ্গিসহ এক রেস্তোরাঁ কর্মী ও একজন শেফ কমান্ডো অভিযানে নিহত হন৷ বাকি ২২ জনের মধ্যে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারান দুই পুলিশ৷ তাঁরা হলেন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানীর ওসি মো. সালাহউদ্দিন খান৷ বাকি ২০ জনের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি, নয়জন ইটালীয়, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয়৷ নিহত বাংলাদেশিরা হলেন ইশরাত আকন্দ, ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও অবিন্তা কবীর৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
কমান্ডো অভিযান
২ জুলাই শনিবার সকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা অভিযান চালান৷ এতে পাঁচ জঙ্গিসহ সাতজন নিহত হন৷ অভিযান শেষে নারী-শিশুসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মামলা দায়ের
২০১৬ সালের ২ জুলাই সন্ত্রাস দমন আইনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস৷
ছবি: Reuters/M. Hossain Opu
চার্জশিট
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আটজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়৷ তদন্তে হামলায় ২১ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে ১৩ জন কমান্ডো অভিযান ও পরবর্তীতে জঙ্গিবিরোধী বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন৷ সে কারণে ওই ১৩ জনকে বাদ দিয়ে আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/abaca
যাদের আসামি করা হয়নি
জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হাসনাত রেজাউল করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে (ছবি) গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও পরে আসামি করা হয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Asad
জঙ্গিবিরোধী অভিযান
বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত আটজন হলেন: তামিম চৌধুরী, সরোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান, তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ, নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকোলেট, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ও রায়হান কবির ওরফে তারেক৷
ছবি: DW/ISPR
বিচারকাজ শুরু
চাজশিট দেয়ার প্রায় চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শুরু করে৷ আদালত ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে ২৭ নভেম্বর রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেন৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
রায়
বিচার শুরুর এক বছরের মাথায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আট আসামির মধ্যে সাত জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত৷ তারা হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগান, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালিদ৷ মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয়া হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
স্বীকারোক্তি
ছয় আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷ মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মামুনুর রশিদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালিদ জবানবন্দি দেননি৷
ছবি: bdnews24.com
11 ছবি1 | 11
‘‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করতে শিখে গেছে৷ তারা উগ্রবাদীদের সেইসব আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না৷ এখন জঙ্গিদের অনলাইন র্যাডিক্যালাইজেশন কার্যক্রমও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে৷”
আর এরমধ্যেই যারা উগ্রবাদের দীক্ষা নিয়েছেন, তাদের জন্য ‘ডি-র্যাডিক্যালাইজেশন' কর্মসূচিও শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানান সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান৷
তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের ‘সন্ত্রাস দমন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ' প্রকল্পের আওতায় কারাগারে থাকা জঙ্গিদের ডি র্যাডিক্যালাইজেশনের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে৷ সেজন্য প্রথমত দরকার সাইকোলজিস্ট, তারপরে ইসলামের যে ভুল ব্যখ্যা দিয়ে তাদের বিপথে নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়গুলো তাদের বুঝিয়ে বলার জন্য ইসলামিক ক্লারিকস বা আলেম৷ তাদের নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে৷’’
জঙ্গিবাদবিরোধী এতসব পদক্ষেপের কারণে আন্তর্জাতিক গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্সে বাংলাদেশ এখন ৪০তম অবস্থানে রয়েছে বলে জানান আসাদুজ্জামান৷
তিনি বলেন, ‘‘অনেক উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের চেয়ে আমাদের অবস্থান ভালো৷ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সবচেয়ে নিরাপদ দেশ৷’’
সিডনি ভিত্তিক সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস' আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সূচক গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স প্রকাশ করে প্রতিবছর৷
গত মার্চে সংস্থাটি ২০২২ সালের যে সূচক প্রকাশ করে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০ নম্বরে৷ সবচেয়ে সন্ত্রাসপ্রবণ দেশে হিসেবে প্রথম অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান৷ পাকিস্তানের অবস্থান ১০ নম্বরে, ভারত ১২ নম্বরে, শ্রীলঙ্কা ২৫ নম্বরে আর নেপাল আছে ৩৪ নম্বরে৷
মানুষতথ্যদিচ্ছে
হোলি আর্টিজানে হামলার পর সেই রাতে যে পুলিশ কর্মকর্তারা সবার আগে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন, ছানোয়ার হোসেন তাদের একজন৷ এখন পুলিশের বিশেষায়িত শাখা- অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) অপারেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার তিনি৷
ছানোয়ার বলেন, হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর মানুষ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি হয়েছে৷ সচেতন হওয়ার কারণে মানুষ এখন উগ্রবাদীদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিচ্ছে৷ বিগত সময়ে তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন বলে জানান ছানোয়ার৷
সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তথ্য পেতে র্যাব বানিয়েছে ‘রিপোর্ট টু র্যাব' নামে একটি মোবাইল অ্যাপলিকেশন৷ সিটিটিসির রয়েছে ‘হ্যালো সিটি' নামের পৃথক অ্যাপ৷
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের রয়েছে ‘ইনফর্ম এটিইউ' নামে আরেকটি অ্যাপ৷ গুগল প্লে-স্টোর থেকে সিটিটিসি ও এটিইউর অ্যাপ দুটি ১০ হাজারের বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে বলে তথ্য দেখাচ্ছে৷ এছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমেও পুলিশ এখন তথ্য পাচ্ছে৷
মানুষ সচেতন হলেই দেশ থেকে জঙ্গিবাদের ‘মূলোৎপাটন' সম্ভব বলে মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
এশিয়া, অ্যামেরিকা কিংবা আফ্রিকা, বিয়েবাড়ি, অফিস বা হাসপাতাল, কোথাও নিরাপদ নয় সাধারণ মানুষ৷ জঙ্গি হামলায় প্রতি বছরই বাড়ছে মৃত্যু৷ ইতিহাসের কিছু ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা পড়ুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abdiwahab
ইস্টার সানডে হামলা (শ্রীলঙ্কা, ২০১৯)
২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডে পালন করছিলেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের মোট আটটি গির্জা ও হোটেলে একই সময়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়৷ সরকারের দেয়া সবশেষ তথ্য অনুসারে এ হামলায় নিহত হন ২৫৩ জন৷ ২০০৯ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর এটিকেই দেশটির সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা বলে মনে করা হয়৷ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বৈরুত ব্যারাক হামলা (লেবানন, ১৯৮৩)
১৯৮৩ সালের ২৩ অক্টোবর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আত্মঘাতী ট্রাক হামলা চালানো হয়৷ তখন লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছিল৷ ভবনগুলোতে মার্কিন ও ফরাসি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছিলেন৷ দুই বিস্ফোরক বোঝাই ট্রাক ভবনে ঢুকে গেলে নিহত হন ৩০৭ জন৷ এদের মধ্যে দুই হামলাকারী ছাড়াও ২৪১ জন মার্কিন সেনা, ৫৮ ফরাসি সেনা ও ছয় জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন৷ ‘ইসলামিক জিহাদ’ নামের একটি গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সিনাই মসজিদ হামলা (মিশর, ২০১৭)
মিশরের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করা হয় এটিকে৷ ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর জুম্মার নামাজ চলাকালীন ৪০ বন্দুকধারী আল-রাওদা মসজিদে হামলা চালায়৷ আল-রাওদা দেশটির অন্যতম সুফি মসজিদ৷ হামলায় নিহত হন ৩১১ জন৷ কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম হামলার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সম্পৃক্ততা খুঁজলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি কেউ৷
ছবি: Getty Images/AFP
এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ (ক্যানাডা, ১৯৮৫)
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩১ হাজার ফুট উঁচুতে আয়ারল্যান্ডের আকাশসীমায় বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার টরন্টো-দিল্লি ফ্লাইট৷ বিমানটিতে আগে থেকে বোমা রাখা ছিল, যা নিরাপত্তাকর্মীদের নজর এড়িয়ে যায়৷ ক্যানাডা পুলিশের দাবি, ভারতের অমৃতসরে শিখদের পবিত্র উপাসনালয় গোল্ডেন টেম্পলে সেনা অভিযানের প্রতিবাদে শিখ জঙ্গিদের সংগঠন বাবর খালসা এই বোমা হামলা করে৷ প্লেনে থাকা ৩২৯ জন যাত্রী, পাইলট, ক্রুর সবাই নিহত হন৷
ছবি: Reuters
গামবোরু এনগালা হামলা (নাইজেরিয়া, ২০১৪)
নাইজেরিয়ার পাশাপাশি দুই শহর গামবোরু ও এনগালাতে ২০১৪ সালের ৫ মে রাতে হামলা শুরু করে বোকো হারাম জঙ্গিরা৷ একে-৪৭ ও আরপিজি দিয়ে এ হামলা চালানো হয় টানা ১২ ঘণ্টা ধরে৷ হামলায় নিহত হন শহর দুটির ৩৩৬ জন বাসিন্দা৷ চিবোক শহর থেকে অপহৃত মেয়েদের খুঁজে পাওয়া গেছে– এমন গুজব ছড়িয়ে হামলার ঠিক আগে আগেই শহর দুটি থেকে মোতায়েন সেনাসদস্যদের অন্যদিকে সরিয়ে দিতে সফল হয় জঙ্গিরা৷ এরপরই ঘটে হামলার ঘটনা৷
ছবি: AMINU ABUBAKAR/AFP/Getty Images
কারাডা হামলা (ইরাক, ২০১৬)
২০১৬ সালের ৩ জুলাই স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে দুটি হামলা চালানো হয়৷ শিয়া অধ্যুষিত কারাডায় রমজান মাসে ব্যস্ত এক বাজারে আত্মঘাতী ট্রাকহামলা চালানো হয়৷ একই সময়ে শা’ব এলাকায় রাস্তার পাশে রাখা আরো একটি বোমাও বিস্ফোরিত হয়৷ দুই হামলায় নিহত হন ৩৪২ জন৷ হামলার দায় স্বীকার করে আইএস৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Al-Rubaye
ত্রুয়িলো হত্যাকাণ্ড (কলম্বিয়া, ১৯৮৮-১৯৯৪)
কলম্বিয়ার ত্রুয়িলো শহরে ছয় বছর ধরে চলেছে এই হত্যাকাণ্ড৷ এজন্য দায়ী করা হয় অঞ্চলটিতে সক্রিয় বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী ও দুর্ধর্ষ মাদক চোরাচালানকারী পাবলো এসকোবারের অধীনের ড্রাগ কার্টেলকে৷ এই মাদক চোরাচালান সংগঠনগুলোর সদস্যরা সামরিক বাহিনী ও পুলিশেও সক্রিয় ছিলেন৷ ধারণা করা হয়, ছয় বছরে অন্তত ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা৷ হত্যার পর মরদেহ ফেলে দেয়া হতো পাশ দিয়ে বয়ে চলা কাউকা নদীতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Ismar
মোগাদিসু হামলা (সোমালিয়া, ২০১৭)
সোমালিয়া তো বটেই, পুরো আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা মনে করা হয় এটিকে৷ নিরাপত্তাকর্মীরা একটি বোমাভর্তি ট্রাককে মোগাদিসুর ব্যস্ততম সড়কে তল্লাশির জন্য আটকালে চালক এটির বিস্ফোরণ ঘটান৷ হামলায় অন্তত ৫৮৭ জনের মৃত্যু হয়৷ আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ দায় স্বীকার না করলেও পুলিশের ধারণা, হামলার জন্য দায়ী জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব৷
ছবি: Reuters/F. Omar
পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা (শ্রীলঙ্কা, ১৯৯০)
১৯৯০ সালের ১১ জুন শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন প্রভিন্সে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায় তামিল টাইগাররা৷ কয়েকটি থানায় হামলা চালিয়ে দখল করা হয়৷ নিহতের সংখ্যা অন্তত ৬০০ থেকে ৭৭৪ জন হতে পারে বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
ইয়াজিদি হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০০৭)
আগস্টের ১৪ তারিখ ইরাকের মোসুল লগরীর পাশে ইয়াজিদি সম্প্রদায় অধ্যুষিত তিল এজের এবং সিবা শেখ খিদির শহরে চারটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ হামলায় অন্তত ৭৯৬ জন নিহত হন৷ কোনো জঙ্গি গোষ্ঠি হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি এ হামলার জন্য সুন্নি সন্ত্রাসীদের দায়ী করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ক্রিসমাস হত্যাকাণ্ড (ডি আর কঙ্গো, ২০০৮)
২০০৮ সালের ২৪ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর হাউত-উয়েলে জেলার কয়েকটি গ্রামে আক্রমণ চালায় উগান্ডার বিদ্রোহী গ্রুপ লর্ডস রেজিসট্যান্স আর্মি (এলআরএ)৷ উগান্ডা ও প্রতিবেশী অপর তিন দেশের সেনাবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের পালটা ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্ত পেরিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায় এলআরএ৷ নিহত হন অন্তত ৬২০ জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Kay
ক্যাম্প স্পাইশার হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০১৪)
২০১৪ সালের ১২ জুন ইরাকের তিকরিতে ক্যাম্প স্পাইশারে হামলা চালিয়ে শিয়া ইরাকি বিমান বাহিনীর ১,৫৬৬ ক্যাডেটকে হত্যা করে আইএস৷ হামলার সময় ক্যাম্পটিতে কয়েক হাজার নিরস্ত্র ক্যাডেট অবস্থান করছিলেন৷ তাঁদের মধ্য থেকে বেছে বেছে শিয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের আলাদা করা হয়৷ তারপর গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Al-Rubaye
৯/১১ হামলা (যু্ক্তরাষ্ট্র, ২০০১)
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারসহ যুক্তরাষ্ট্রের চারটি স্থাপনায় যুগপৎ হামলা চালায় আল কায়েদা জঙ্গি গোষ্ঠী৷ বিমান ছিনতাই করে সেটি নিয়েই টুইন টাওয়ারে আঘাত হানে ছিনতাইকারীরা৷ সরকারি তথ্যমতে, এ হামলায় মোট ২,৯৯৬ জন প্রাণ হারান৷ নিহতদের মধ্যে ১৯ জন ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে গোয়েন্দারা৷ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ হামলায়৷