আজ মহান স্বাধীনতা দিবস৷ দীর্ঘ ন’মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহিদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বিজয় - স্বাধীনতা৷
বিজ্ঞাপন
আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামে সামনে থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদেরই একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল চিত্ত রঞ্জন দত্ত বীর উত্তম৷ সবাই তাঁকে সি আর দত্ত নামেই চেনেন৷ সিলেট-হবিগঞ্জে চার নম্বর সেক্টরের প্রধান ছিলেন তিনি৷ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামেরও অন্যতম নেতা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ ৪১ তম স্বাধীনতা দিবসের আগে বলছিলেন সেই সংগ্রামের দিনগুলোর কথা৷
প্রশিক্ষিত সৈন্য ছাড়াই যুদ্ধ করেছেন এই সেক্টর কমান্ডার৷ তারপরও পাক হানাদার বাহিনীকে হারিয়ে বীরপর্পে সামনে এগিয়ে গেছেন৷ কিভাবে সমর্থ হলেন এই অসাধ্য সাধনে? উত্তরে বললেন, মনের ভেতরের শক্তির কারণেই তিনি পেরেছেন৷
পাক বাহিনীর আত্মসমর্পনের খবর শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি৷ এসেছে কাঙ্খিত সেই স্বাধীনতা৷ তিনি বলেন, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছি৷ আমাদের মধ্যে তো কোন পার্থক্য নেই৷ সবাই আমরা এক দেশের নাগরিক৷
সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করা এই সাহসী যোদ্ধা সম্প্রতি স্ত্রীকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ- জীবন যাপন করছেন৷ দেড় বছর আগে তাঁর স্ত্রী এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন৷ স্ত্রীকে ছাড়া জীবন যে কত কষ্টের বলছিলেন তিনি৷
‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’
১৬ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশের বিজয় দিবস৷ ন’মাসের মুক্তিযুদ্ধ আর চরম আত্মত্যাগে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে৷ জাতি তাই আজ স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য আন্দোলনরত ছাত্রদের বুকে গুলি চালানো হয়৷ রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে এদিন শহিদ হন৷ সেই তার সঙ্গে সঙ্গেই রচিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি৷
ছবি: Archiv Rowshan Jahan Shathi
কাল রাত
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে বাঙালি নিধন শুরু করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ তার জবাব দেয়া হয় স্বাধীনতা ঘোষণা আর মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে৷ যুদ্ধকালীন নয় মাসের চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷
ছবি: DW/M. Mamun
ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া দেশ
১৬ই ডিসেম্বর অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র, পায় নতুন একটা মানচিত্র৷ স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ৩০ লাখ মানুষ৷ দেশের বাতাসে তাই আজ ভেসে বেড়াচ্ছে সেই গান – ‘তোমাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’৷
ছবি: AP
রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন
বরাবরের মতোই দিনটিকে পালন করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে৷ তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে ৪৪তম বিজয় উৎসব শুরু হয়৷ আর ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন সরকার প্রধান, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতারা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মানুষের ঢল
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের৷ মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী সবাই সমবেত হন শ্রদ্ধার্ঘ্য হাতে৷